
বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিরাট এক পরিবর্তন আসে। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে খলিফাতুল মুসলিমিন সুলতান আবদুল হামিদ খান আস-সানির অপসারণের পর উসমানি সাম্রাজ্য অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। সংকীর্ণ থেকে সংকীর্ণতর হয়ে পড়ে খিলাফতের সীমারেখা। এরপর ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের মুসলিম জাহানের সর্বশেষ খিলাফত উসমানি খিলাফতের পতনের সঙ্গে সঙ্গে মুসলিমবিশ্বের মানচিত্র সম্পূর্ণরূপে বদলে যায়। ইউরোপ সীমান্ত থেকে নিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া জুড়ে সুবিস্তৃত মুসলিম খিলাফত ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বশাসিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। আরব জাহান পরিণত হয় ব্রিটিশ অথবা ফ্রেঞ্চ কলোনিতে। ক্রমশ দুর্বল থেকে দুর্বলতর হতে থাকে মুসলিম সাম্রাজ্য। পিতৃহারা কৃশকায় সন্তান যেমন ভবলেশহীন জনাকীর্ণ পথের এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায়, মানুষের দুয়ারে ভিক্ষা করে বেড়ায়, তেমনি খলিফা নামক মাথার ছাতাটি সরে যাওয়ার ফলে মুসলিম উম্মাহ পিতৃহারা ও দিকভ্রান্ত হয়ে পড়ে। সেই মোক্ষম সুযোগের সদ্ব্যবহার করে শত্রুরা তাদের ওপর আক্রমণ করতে শুরু করে, ঠিক যেমনভাবে ক্ষুধার্ত পশুরা খাদ্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এখন আর মুসলিমদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ রইল না। আরব ও মুসলিম বিশ্বকে দাসে পরিণত করতে উঠেপড়ে লাগল সম্রাজ্যবাদের ধ্বজাধারীরা কিছু স্বাধীনচেতা আরবদের যে বেশিদিন ঔপনিবেশিক শাসন দ্বারা অবদমিত করে রাখা যাবে না, এটা পশ্চিমের ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো বেশ ভালো করেই বুঝত। তাই তারা চলে যাওয়ার পর মুসলিমরা আবার যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে এবং প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের ওপর অন্য শক্তি এসে ভাগ বসাতে না পারে-নজরদারি জন্য মধ্যপ্রাচ্যে তাদের একটি শক্তিশালী ঘাঁটির প্রয়োজন ছিল। আলে সৌদদের মতো কিছু ভৃত্য তৈরিতে সক্ষম হলেও তারা এসব দুর্বল রাজবংশগুলির ওপর পরিপূর্ণ নির্ভর করতে অথবা আস্থা রাখতে পারল না। তাই মধ্যপ্রাচ্যে তাদের জন্য দরকার ছিল একটি নিজস্ব মানমন্দির ।
আর এ ক্ষেত্রে তাদের জন্য জায়নবাদের কোনো বিকল্প ছিল না। তারা বুঝতে পারল যে, বিতাড়িত ছন্নছাড়া ইয়াহুদিদের মধ্যপ্রাচ্যে যদি একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানিয়ে দেওয়া যায়, সেটা পরবর্তীতে তাদের জন্য একটি শক্তিশালী দূর্গে রূপান্তরিত হবে। তা ছাড়া সে ভূমি ব্যবহার করে তারা আরবদের উপর নজরদারি চালাতে পারবে এবং আরবদেরকে নিজেদের আয়ত্তে রাখতে পারবে। এ জন্য পশ্চিমারা আরবদেরকে তাদের আয়ত্তে রাখতে মধ্যপ্রাচ্যে নির্দিষ্ট একটি ভূখণ্ডে ইয়াহুদিদের আবাদ করার পরিকল্পনা গ্রহ করে। ঘাঁটি হিসেবে তারা বেছে নেয় ফিলিস্তিনের পবিত্র জমিনকে । কারণ, ইয়াহুদিরা ফিলিস্তিনকে পবিত্র জমিন ও তাদের পিতৃভূমি হিসেবে মনে করত এবং সেখানে ফিরে যাওয়ার জন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। সপ্তদশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় দেশগুলোতে ইয়াহুদিশক্তি ধীরে ধীরে মাথাচাড়া দিতে শুরু করে। মানেসসেহ বেন ইসরাইল (১৬০৬-১৬৫৭ খৃ.) নামক আমস্টারডাম (নেদারল্যান্ডসের রাজধানী) নিবাসী একজন পর্তুগিজ কাব্বালিস্ট ইয়াহুদি রাব্বির নেতৃত্বে খ্রিষ্টান প্রভাবিত ইউরোগে ইয়াহুদিবাদী একটি সুপ্ত আন্দোলন জন্ম নেয়। প্রাথমিক যুগে এ বিপ্লব সুপ্ত অবস্থায় থাকলেও পরে সেটা বৃহদাকার রূপ নেয়। মধ্যযুগে ইউরোপীয় ইয়াহুদিরা ছিল খ্রিষ্টানদেন কর্তৃক নির্যাতিত ও নিপীড়িত। তারা সমাজচ্যুত বিচ্ছিন্ন যাযাবরদের মতো কালাতিপাত করত।
ইতিহাস থেকে আমরা চতুর্দশ শতাব্দীর ইউরোপীয় খ্রিষ্টান কর্তৃক নির্যাতিত ইয়াহুদিদের বিবরণী পেয়ে থাকি। বিখ্যাত ইংলিশ ঔপন্যাসিক উইলিয়াম শেকসপিয়র তাঁর বিখ্যাত 'দ্য মার্চেন্ট অফ ভেনিস' নাটকে তৎকালীন ইউরোপে ইয়াহুদিদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন । তিনি দেখিয়েছেন, পঞ্চদশ বা ষোড়শ শতাব্দীর ইউরোপীয় খ্রিষ্টানদের কাছে ইয়াহুদিরা এতটাই ঘৃণিত ছিল যে, খ্রিষ্টানরা তাদের ওপর থুতু নিক্ষেপ করতেও দ্বিধাবোধ করত না। যদিও ইয়াহুদিদের প্রতি এমন অত্যাচারের পেছনে সম্পূর্ণ দায় খ্রিষ্টানদের ওপর চাপিয়ে দেওয়াটা অন্যায় হবে। কারণ, ইয়াহুদিরাই তাদের এমন পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে দায়ী ছিল। যুগে যুগে তাদের অবাধ্যতা ও অশিষ্টাচার ছিল ইতিহাস প্রসিদ্ধ। পবিত্র কুরআন মাজিদ ও বাইবেলে তাদের অবাধ্যতার বহু নমুনা পাওয়া যায়। যাইহোক, এমনি এক অত্যাচারিত ইয়াহুদি পরিবেশে বেড়ে ওঠা বেন ইসরাইল সর্বদা মুক্তি ও স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতেন। স্বপ্ন দেখতেন, শিঘ্রই কোনো ইয়াহুদি রক্ষাকর্তার আবির্ভাব ঘটবে, যার নেতৃত্বে ইয়াহুদিদের পুনরুত্থান ঘটবে। তিনি মনে করতেন, ইয়াহুদিদের হারিয়ে যাওয়া দশটি গোত্র যারা ইতিহাসে The Lost Ten Tribes নামে পরিচিত, তারা অদূর ভবিষ্যতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি ইসরাইল জাতির জন্ম দেবে এবং ফিলিস্তিনে ইয়াহুদিরা পুনরায় আবাদ হবে। এ স্বপ্ন নিয়ে তিনি ইয়াহুদিদের মধ্যে নবজাগরণ ঘটাতে চাইলেন। ইয়াহুদিদের স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করা তাঁর একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াল। এ লক্ষ্যে তিনি একের পর এক বই প্রকাশ করে ইয়াহুদিদের নতুন করে আশা ও অনুপ্রেরণা যোগাতে শুরু করলেন।
বেন ইসরাইলের বইগুলো তদানীন্তন প্রচলিত রব্বিদের বই থেকে কিছুটা ভিন্ন ছিল। তিনি তাঁর বইগুলোকে কাব্য, সাহিত্য ও আধ্যাত্মিকতার ছোঁয়া লাগিয়ে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে পরিবেশন করতেন, ফলে তদানীন্তন ইউরোপীয় ইয়াহুদিদের ওপর তিনি ব্যাপক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হন। ইয়াহুদিরা দলে দলে তাঁর কাছে দীক্ষা নিতে শুরু করে। চতুর বেন ইসরাইল মনে করতেন, ইয়াহুদিদের ফিলিস্তিন দখলের জন্য ইংল্যান্ডকে প্রথম কব্জায় আনতে হবে এবং সেখানে তাদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু ষোড়শ শতাব্দীতে ইংল্যান্ড ছিল ইউরোপীয় শিল্পবিপ্লবের প্রাণকেন্দ্র। ইংল্যান্ডে বসতি স্থাপনের স্বপ্ন নিয়ে তিনি ১৬৫৪ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর শ্যালক ডেভিড আব্রাবানেলকে বৃটেনে পাঠান সেখানে ইয়াহুদিদের পুনর্বাসনের আর্জি জানিয়ে। সর্বজনবিদিত ইয়াহুদিবাদী মতবাদ জায়নবাদের ধারণাটি ইংল্যান্ডে ইয়াহুদিদের পুনর্বাসনের সূচনালগ্নে রাব্বি বেন ইসরাইলের হাত ধরে ধরাবক্ষে আগমন করে। বলা যায়, তিনিই ছিলেন জা*য়ন* বাদ আন্দোলনের অগ্রদূত।
বেন ইসরাইলের পরবর্তী কয়েক শতাব্দী ছিল ইয়াহুদিদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় ইয়াহুদিদের জায়নবাদী আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত হয় ইউরোপের একশ্রেণির খ্রিস্টান যাদের মধ্যে ছিলেন, বুদ্ধিজীবী, উকিল, দার্শনিক ও সাহিত্যিকরা। ইয়াহুদিবাদী আন্দোলন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তারা ইউরোপে ইয়াহুদিদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে শুরু করেন। তারা তাদের লেখনীর মাধ্যমে সাহিত্যিক ও দার্শনিক উঠিয়া ইয়াহুদিদের অধিকারের জন্য সরব হন। তাদের মাধ্যমে ইয়াহুদিবিদ্বেষী ইউরোপের বুকে গড়ে ওঠে জায়নবাদী খ্রিষ্টান সাহিত্য (Zionist Christian Literature)। এ জায়নবাদী খ্রিষ্টান সাহিত্যের বিকাশে যারা মুখ্য ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম একান ছিলেন, রেভারেন্ড জেমস বিশেনো (১৭৫১-১৮৩১)। তিনি ভবিষ্যতে ইসরাইলের মুক্তি ও ফিলিস্তিনে তাদের পুণর্বাসন স্থাপনের বিষয়ে প্রবল আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। বিশেনো লিখিত দুইটি বই 'The Restoration of the Jews ' ও 'The Crisis of all Nations'-এ তিনি ইয়াহুদিদের অধিকার ও তাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে মত প্রকাশ করেন।
উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ইউরোপীয়দের মধ্যে জায়নবাদী আন্দোলন ব্যাপক প্রভাব ফেলতে শুরু করে। খ্রিষ্টানদের সমর্থন জোরদার করার উদ্দেশ্যে সে সময় ধর্মভীরু ইউরোপে জায়নবাদীরা প্রচার করতে শুরু করল যে, "ইয়াহুদিদেরকে ফিলিস্তিনে পূণর্বাসনের মধ্যে খ্রিষ্টান ও ইয়াহুদিদের সাফল্য নিহিত রয়েছে" । এ বিষয়ে তারা বাইবেলের বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণী উদ্ধৃত করে খ্রিষ্টানদের মধ্যে প্রচার করতে শুরু করলে খ্রিষ্টানরাও জায়নবাদীদের এ ধরনের প্রচারণায় প্রভাবিত হতে লাগল।
ঠিক এমন সময়ে থমাস উইদারবাই (১৭৬০-১৮২০) নামক একজন খ্রিষ্টান জায়নবাদী উকিল ইউরোপীয় খ্রিষ্টানদের থেকে ইয়াহুদিবিদ্বেষ প্রশমনের লক্ষ্যে ময়দানে অবতীর্ণ হন। তিনি An attempt to remove prejudices concerning the Jews Nation নামক একটি বই রচনা করেন। এর মধ্যে সমসাময়িক ইউরোপীয় খ্রিষ্টানদের মধ্যে ইয়াহুদিদের ব্যাপারে প্রচলিত ধারণা ও বিদ্বেষের বিরুদ্ধে সরব হন। এ ছাড়া একটি স্বাধীন ইয়াহুদি রাষ্ট্রের পরে ওকালতি করেন। উক্ত বইয়ে তিনি ইয়াহুদিদের বিরুদ্ধে খ্রিষ্টানদের দুঃখজনক আচরণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
উইদারবাই ছিলেন প্রথম ব্রিটিশ খ্রিষ্টান জায়নবাদী লেখক যিনি ইয়াহুদিদের ফিলিস্তিনের ভূমির দাবির সঙ্গে ইয়াহুদি নাগরিকত্বের সমন্বয়সাধন করেন। অপর একজন বিখ্যাত ব্রিটিশ খ্রিষ্টান জায়নবাদী ছিলেন জোসেফ প্রিস্টলি। তিনি ছিলেন একাধারে দার্শনিক, ধর্মতত্ত্ববিদ এবং রসায়নবিদ। প্রিস্টলি তাঁর রচিত চিঠি এবং A comparison of the installations of Moses বইয়ে ইসরাইলের মর্যাদা রক্ষার্থে জোর সাওয়াল করেন। এ ছাড়া উইলিয়াম হুইস্টন ও বিশপ রবার্ট লখ ছিলেন ব্রিটিশ খ্রিষ্টান জায়নবাদী বুদ্ধিজীবী। যারা ব্রিটিশদের মধ্যে জায়নবাদ প্রচার ও প্রসারে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন।
এ সময় অর্থাৎ, উনবিংশ শতাব্দীতে ইউরোপীয় ইংলিশ সাহিত্যিকদের মধ্যেও জায়নবাদী চিন্তা-চেতনার প্রসার ঘটে। তারা ইংলিশ সাহিত্য ও শিল্পকলার মধ্য দিয়ে জায়নবাদের প্রচার-প্রসার ঘটানো এবং ইয়াহুদিদের অধিকার আদায়ে জনমত গড়ে তুলতে চেষ্টা করেন। ইংলিশ দিকপাল কবি ও সাহিত্যিকরা তাদের সাহিত্যশিল্পের মধ্য দিয়ে জায়নবাদী ধ্যানধারণার প্রচার-প্রসার ঘটাতে থাকেন। উনবিংশ শতাব্দীর ইংলিশ সাহিত্যিকদের। অন্যতম জর্জ গর্ডন বায়রন তাঁর সাহিত্যকর্মের মাধ্যমে জায়নবাদী চিন্তা-চেতনা প্রসারে বড় ভূমিকা রাখেন। তাঁর লিখিত বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ 'হিব্রু মেলোডিজ' (Hebrew Melodies) তাঁর জায়নবাদী চিন্তা-চেতনার অন্যতম প্রমাণ। তিনি এ বইটিকে আল- কুদসের (ইয়াহুদিদের কাছে The Holy Temple) প্রতি খিদমতস্বরূপ মনে করতেন। এ ছাড়া তাঁর রচিত নাটক 'কাইন জায়নবাদ' প্রচার-প্রসারের অন্যতম আরও একটি নিদর্শন।
এরপর উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে অস্ট্রিয়-হাঙ্গেরিয়ান সাংবাদিক থিওডর হারজেল ইউরোপীয় ইয়াহুদি জায়নবাদী আন্দোলনে নতুন করে প্রাণসঞ্চার করেন। তিনিই মূলত প্রথম জায়নবাদী আন্দোলনের পূর্ণতা দান করেন। এ জন্য তাঁকে দ্য ফাদার অফ জায়নিজমও বলা হয়ে থাকে। তিনি ফিলিস্তিনকে ইয়াহুদিরাষ্ট্র বানানোর জন্য কার্যকরী ভূমিকা নিতে শুরু করেন। থিওডর হারজেল সর্বদা একটি স্বাধীন ইয়াহুদি ইসরাইল রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন। তিনি মনে করতেন ইয়াহুদিবিদ্বেষ পরিপূর্ণরূপে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। তবে এটাকে একপ্রকার এডিয়ে চলা সম্ভব, এটা তখন সম্ভব হবে যখন ইয়াহুদিরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে পারবে। ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে 'ডের জুদেনস্টাট ' নামে হারজেলের একটি বই প্রকাশিত হয়। বইটিতে তিনি ফিলিস্তিনকে ইয়াহুদিদের দেশ আখ্যায়িত করে ইয়াহুদিদের ইউরোপ ছেড়ে ফিলিস্তিনে হিজরত করার পরামর্শ দেন। তাঁর চিন্তাধারা তড়িৎচুম্বকের মতো ইয়াহুদিদের আকৃষ্ট করতে থাকে এবং বিভিন্ন ইয়াহুদি সংগঠন তাঁর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। এদের মধ্যে অন্যতম ইয়াহুদি সংগঘন ছিল হোভেভেই জিওন —ইসরাইল দেশের প্রেমিকরা। এটি কয়েকটি ইয়াহুদি সংগঠনের সমষ্টি যা ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে ইয়াহুদা লেইব পিনস্কারের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হয়। এ সংঘ প্রতিষ্ঠার পেছনেও রয়েছে ইয়াহুদিবিদ্বেষ।
ইউরোপীয় দেশগুলোর মতো রাশিয়ায়ও ইয়াহুদিরা ছিল চরম নির্যাতিত। রাশিয় খ্রিষ্টানরা সেখানকার ইয়াহুদিদের এক নজরে দেখতে পারত না। অষ্টাদশ ও উনপে শতাব্দীতে এ বিদ্বেষ প্রকটরূপে দেখা দেয়। রাশিয়ায় ইয়াহুদিদের ব্যাপক গণহত্যা ও অত্যাচার শুরু হয়। ইয়াহুদিরা প্রাণভয়ে রাশিয়া থেকে পালিয়ে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জন্য এ সময় খলিফাতুল মুসলিমিন (সুলতান আব্দুল হামিদ) মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে একটি বড় সংখ্যক নিয়রিং ইয়াহুদিদের উসমানি খিলাফতের অভ্যন্তরে আশ্রয় দেন। উনবিংশ শতাব্দীতে রাশিয় ইয়াহুদিদের বিরুদ্ধে আক্রমণ প্রকটভাবে দেখা দিলে ইয়াহুদিরা এর মোকাবেলা কারে হোভেভেই জিওন সংগঠনটির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়। হোভেভেই জিওন সংগঠনটা আধুনিক জায়নবাদের অগ্রপথিক হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
Comments
Post a Comment