Skip to main content

আয়া সোফিয়া থেকে আল আকসা/আলকুদস ও কর্ডোভা :ফিরিয়ে আনো মর্যাদা।

 আয়া সোফিয়া থেকে আল আকসা/আলকুদস ও কর্ডোভা :ফিরিয়ে আনো মর্যাদা। 



লেখক:শেখ আহসান উদ্দিন 

আয়াসোফিয়া।মুসলিম উম্মাহর মধ্যে এবং অমুসলিমদের মধ্যেও একটি আলোচিত নাম। আয়া সোফিয়া তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে অবস্থিত মধ্যযুগের একটি অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপত্য। ৫৩৬-৫৩৭ খ্রিস্টাব্দে এই আয়া সোফিয়া নির্মিত হয়, তখন এটি গির্জা ছিল। ১৪৫৩সালে যখন সুলতান মুহাম্মদ আব্দুল ফাতিহ কনস্ট্যান্টিপল জয় করে ইস্তাম্বুল নাম দেন তখন তিনি এই আয়া সোফিয়াকে মসজিদ হিসেবে রূপান্তর করেন। এই আয়া সোফিয়া মসজিদ হওয়ার পক্ষে অনেক দলিল আছে। ১৯৩৪ সালের আগ পর্যন্ত এটা মসজিদ ছিল। তুরস্কের বিতর্কিত শাসক সেক্যুলার কামাল আতাতুর্ক ১৯৩৪ সালে এটাকে জাদুঘরে রূপান্তর করেন। এরদোগান ক্ষমতায় আসার পরে তার মনে আয়া সোফিয়াকে মসজিদ হিসেবে পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন জাগে। চলতি বছরের জুলাই মাসে আদালতের রায়ের মাধ্যমে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো। গত ১০ জুলাই আয়াসোফিয়ায় আযান এবং ২৪ জুলাই জুমার নামাজের মাধ্যমে আয়াসোফিয়া মসজিদ হিসেবে আনুষ্ঠানিভাবে পুনরুদ্ধার পায়। আসলে আয়া সোফিয়াকে মসজিদ হিসেবে রূপান্তর এটা মুসলমানদের জন্য একটি রহমত স্বরূপ। আয়া সোফিয়ায় আযানের ধ্বনি থেকে মূলত তাওহীদের বিজয় পেয়েছে।১৪৫৩ থেকে ১৯৩১ সাল পর্যন্ত মোট ৪৭৮ বছর আয়াসোফিয়া মসজিদ ছিল। ৮৬ বছর পরে এখন এটা মসজিদ হিসেবেই আছে এবং থাকবে। আয়া সোফিয়া কে মসজি হিসেবে পুনরুদ্ধার এটা নবযুগের পূর্বাভাস ।আয়া সোফিয়া এটা সমগ্র বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর সম্পদ। আয়া সোফিয়াকে মসজিদ হিসেবে পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে মুসলমানদের অধিকার ফিরে পেয়েছে এবং এর মাধ্যমে ইসলামী বিজয়েরই পূর্বাভাস পেয়েছে। আয়া সোফিয়াকে মসজিদ হিসেবে পুনরুদ্ধারের ঘটনাকে অনেকে নেতিবাচকভাবে দেখে। বিশেষ করে গ্রীস,ভ্যাটিকান,রাশিয়াসহ অনেক দেশের অমুসলিমরা এটা দেখে দুঃখ পেয়েছে। কতিপয় মুসলিমরাও বিশেষ করে কতিপয় আহলেহাদিস সালাফি,মাদখালি ফিতনার অনুসারীরা বা এমবিএস সালমানপন্থী সালাফিরা,প্রো-খারেজী এবং কতিপয় ১২ইমামীয় শিয়ারা আয়াসোফিয়া কে মসজিদ হিসেবে রূপান্তর করাকে নাটক বলে আখ্যায়িত করে এবং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগানের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও আজেবাজে অভিযোগ করে। যারা আয়াসোফিয়া ইস্যুকে নাটক বলে তারা মূলত জ্ঞানপাপী জাহিল।মধ্যপ্রাচ্যের কতিপয় মাদখালি ছালাফিরা "আয়া সোফিয়ায় নামাজ পড়লে নামাজ হবে না" এমন জঘন্য হাস্যকর ফতোয়াও দিয়েছে ।এদের এসব সমালোচনা পুরাই হাস্যকর।যারা মুসলিম/মুসলমান হয়েও আয়াসোফিয়া পুনরুদ্ধারের মতো বিষয় নিয়ে আজেবাজে কথা বলে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে তারা তাগুতের দালাল। 

মূলত আয়া সোফিয়ার আযানের ধ্বনির মাধ্যমে বায়তুল মোকাদ্দাস ও কর্ডোভা সহ পৃথিবীর অন্যান্য ব্যথিত মসজিদ ও তাদের অধিবাসীদের অন্তরে শান্তি পাবে। ফিলিস্তিনের রাজধানী জেরুজালেম/আল কুদসের বায়তুল মোকাদ্দাস(আল আকসা মসজিদ)দখলদার যায়োনিস্ট ইসরাইলীদের রক্ষীবাহিনী দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে আছে। মুসলমানদের অন্যতম শত্রু যায়োনিস্ট ইসরাইল সরকার ও প্রশাসন অন্যায়ভাবে ফিলিস্তিনের ভূমির উপরে অনেক বছর ধরে অত্যাচার করে এসেছে। আমরা সকল মুসলিমরাই চাই যে বায়তুল মোকাদ্দাস (আল আকসা মসজিদ) দখলদার জায়োনিস্টদের হাত থেকে মুক্ত হোক। আল আকসার বিজয় একদিন আসবেই।বিশ্বের অন্যতম মুসলিম আলেম ডঃ শায়খ ইউসুফ কারজাভী বলেন, "আল আকসায় আমি টুরিস্ট/পর্যটক হিসেবে যেতে চাইনা বরং, আল আকসায় বিজয়ী হিসেবে যেতে চাই। "তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান আল আকসার পক্ষে মুসলমানদেকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য অনেকবার আহবান জানিয়েছেন। আল আকসা মসজিদ পুনরুদ্ধারের জন্য এরদোগান যা বলেছেন তা অবশ্যই সঠিক। আয়া সোফিয়ার পাশাপাশি বাইতুল মোকাদ্দাস/ আল আকসা মসজিদকে দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করা সকল মুসলিম রাষ্ট্রের একটা অন্যতম দায়িত্ব। 
আয়া সোফিয়ার মতোই আরেকটা স্থাপত্য হলো স্পেনের কর্ডোভার স্থাপনা যা প্রথমে মসজিদ ছিল পরে অন্যায়ভাবে এটাকে গির্জায় রূপান্তর করা হয়েছে। ৭৩৮ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া শাসক আব্দুর রহমান এই কর্ডোভা মসজিদ নির্মাণ করেন। ১২৩৬,খ্রিস্টাব্দে রানী ইসাবেলা ও রাজা ফার্ডিনান্ড স্পেনের মুসলমানদের বিরুদ্ধে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে কর্ডোভা মসজিদকে অমানবিকভাবে গির্জায় রূপান্তর করে। আজও সেই জায়গায় খ্রিস্টানদের ক্রুশ টানানো আছে।বর্তমানে সেখানে মুসলমান পর্যটকদের আযান ও নামায আদায়ের অনুমতি দেয় না। ১৯৩২ সালে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ কবি,মহাকবি আল্লামা ইকবাল স্পেনের কর্ডোভা মসজিদে যান এবং সেখানে মিহরাবের সামনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন এবং আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেন। সেই মোনাজাত কাব্যআকারে " বা'লে জিবরীল " নামে কবিতা হিসেবে প্রকাশ হয়েছে। কর্ডোভার ইতিহাসটি আসলেই আমাদের মুসলিম উম্মাহর জন্য এক দুঃখের ইতিহাস। সম্প্রতি আয়া সোফিয়াকে মসজিদ হিসেবে পুনরুদ্ধারের পরে দৈনিক কালেরকণ্ঠ ও আলজাজিরায় জানা গেছে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহ অঞ্চলের গভর্ণর কর্ডোভা মসজিদকে ফের মসজিদ হিসেবে পুনরুদ্ধারের তথা কর্ডোভা মসজিদের মর্যাদা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন।ভারতের অযোধ্যায় বাবরী মসজিদের অবস্থাও সেই কর্ডোভার মতোই। বাবরী মসজিদ শত শতবছর এটা মসজিদ ছিল। কিন্তু ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে হিন্দুত্ববাদী উগ্রবাদী সন্ত্রাসী আর এস এস ও বিশ্বহিন্দু পরিষদ(RSS and VHP)এর অসংখ্য লোকজন বাবরী মসজিদের উপর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সেখানে বর্তমানে কথিত রাম মন্দির নির্মাণে ভয়াবহ পরিকল্পনা শুরু করেছে। আল্লাহ এদের এই ভয়াবহ পরিকল্পনা ধ্বংস করে দাও। 
পরিশেষে আমি বলতে চাই, আয়া সোফিয়ার মর্যাদা যেমন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে সেভাবে ফিলিস্তিনের বায়তুল মোকাদ্দাস (আল আকসা মাসজিদ),স্পেনেরকর্ডোভা মাসজিদ ও ভারতের বাবরী মসজিদের মর্যাদা ফিরিয়ে আনা উচিত। এবিষয়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান,আফগানিস্তান,ইন্দোনেশিয়া,ব্রুনেই,মালয়েশিয়া,ইরান,সৌদি আরব,সংযুক্ত আরব আমিরাত,কুয়েত,কাতার ও তুরস্ক সহ সকল দেশের মুসলমানদের এগিয়ে আসা উচিৎ ।

Comments

Popular posts from this blog

কাশফুল মাহযুব Kashful mahzub pdf

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কাশফুল মাহযুব হল হযরত দাতা বখশ হাজভেরী রহঃ এর অন্যতম গ্রন্থ । এর বাংলা হল মারেফতের মর্মকথা । বাংলায় প্রকাশ করা হয়েছে রশিদ বুক হাউজ । মূল বইটি ফারসি ভাষায় লিখিত । download this book in bangla : kashful mahzoob in bangla Kashful mahzoob is a book which is written by data ali hazveri rh.  Kashful Mahjoob  was originally written in Persian language by Hazrat Daata Ganj Bakhsh Ali Hajveri but then translated into many other languages as well including Urdu. Complete name of Hazrat Daata Sahab is ‘Abul Hassan Ali Ibn Usman al-Jullabi al-Hajveri al-Ghaznawi’. The book is a master piece in Islamic Sufi genre. Daata Ali Hajveri has written many books but this book has become a symbol in Sufi books. A famous saying about this book is ‘if you want to find a true murshad (spiritual guider) for you then read this book and you will definitely find one’. Download in english   https://ia601901.us.archive.org/21/items/KashfulMahjoobEn/KashfulMah...

মীলাদুন্নাবী (সা:) ও মিলাদ-কিয়ামের পক্ষে -বিপক্ষে দলিল ভিত্তিক বইসমূহ Books about mawlid and milaad

 মিলাদের বিপক্ষে ও পক্ষে দলিল ভিত্তিক বই সমূহ Books about mawlid and meelad আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সবাই ভাল আছ।আমরা অনেকে একটা বিষয়ে অনেক কিছু বলি। এটা নিয়ে অনেক কিতাব,ওয়াজ ও বাহাস হয়েছে। সে বিষয়টি হল মিলাদুন্নবী ও মিলাদ-কেয়াম।আমরা অনেকে এটার পক্ষে, অনেকে এটার বিপক্ষে। সেই বিষয়ে  আমরা অনেকে বলি এটি বিদাত।এই বিষয়ে কিছু কিতাবের pdf দেয়া হল মিলাদের পক্ষে : ১.মিলাদুন্নবী ও মিলাদ মাহফিল (নাইমুল ইহসান বারাকাতি,Barakati publication) Download ২.কুরআন হাদিসের আলোকে মিলাদ-কিয়ামের অকাট্য দলিল(মুস্তফা হামিদি,ছারছীনা) http://www.mediafire.com/file/ntw372p7138k142/ ৩.বসন্তের প্রভাত (আমিরে আহলেসুন্নাত, ইলিয়াস আত্তার কাদেরি,মাকতাবাতুল মদীনা) Download ৪.সিরাজুম মুনিরা(আমিমুল ইহসান রাহ:) download ৫.মৌলুদের মাহফিল ও কিয়াম(আলভী আল মালেকি আল মাক্কি রাহ:) download ৬.বারাহিনুল কাতিয়া ফি আমালিল মাওলিদ(কারামত আলী জৈনপুরী [রাহঃ] ৭. মু মুলাখখাছ-মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি download ৮.হাকীকতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী https://drive.googl...

Books of Shaykh abdul qadir gilani(rah;) বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রাহ:) এর কিতাব /বই ডাউনলোড করুন

Download in urdu               Books of Shaykh abdul qadir gilani (rah;)               শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) এর কিতাব                        বড়পীর শায়েখ আব্দুল কাদির জিলানী(রাহঃ) আল্লাহর বড় ওলি ছিলেন । তিনি                                         শরীয়ত,তরিকত,মারেফত,  তাসাউফ ও তাযকিয়া বিষয়ে অনেক কিতাব লিখেছেন । সেসব কিতাবসমূহের বাংলা ,ইংরেজী,আরবী ও উর্দু       অনুবাদের pdf নিচে দেয়া হল  ১.সিররুল আসরার Sirr ul asrar In Bangla      Download 1   in English  http://data.nur.nu/Kutub/English/Jilani_Sirr-al-Asrar-1---5.pdf in urdu    https://ia801309.us.archive.org/27/items/sirr-ul-asrar/sirr-ul-asrar.pdf ২.গুনিয়াতুত তালেবীন        ...