প্রসঙ্গ:ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি-ধৈর্যের সাথে একদিন বিজয় ও মুক্তি আসবেই
লেখক:শেখ আহসান উদ্দিন
বর্তমান যুগে আমরা দেখছি যে ফিলিস্তিন,সিরিয়া,ইরাক,ইয়েমেন,লিবিয়া,আরাকান ও কাশ্মীরসহ অনেক মুসলিম দেশের অবস্থা ভালো না। আবার অনেক অমুসলিম দেশে মুসলমানের অবস্থা ভালো না।বিশেষ করে দখলদার জায়োনিস্ট ইসরাইলি বাহিনীরা ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর অত্যাচার নির্যাতন ও গণহত্যা চালাচ্ছে,সিরিয়ায় 2011 থেকে সেই দেশের স্বৈরশাসক আসাদ ও তার মিলিশিয়া বাহিনী,জঙ্গি-সন্ত্রাসী উগ্রবাদী আইএস,ইসরাইল,আলকায়েদাপন্থী জাবহাতুন নুসরা ও HTS এবং কুর্দি PKK YPG বাহিনী এরা সেদেশে দখল ও গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে পরিস্থিতি অশান্ত করেছে,ইরাকে সাদ্দাম হোসেন ও লিবিয়ায় গাদ্দাফির মৃত্যুর পরে এই দুইদেশের সংকটাপন্ন পরিস্থিতি চলছে।মিয়ানমারের আরাকান রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর সেদেশের জান্তা প্রশাসন নির্যাতন ও বৈষম্য চালিয়েছে,এখন আরাকান রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের কক্সবাজার ও নোয়াখালিতে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয়ে আছে।জম্মু কাশ্মীরের মুসলমানদের উপর স্থানীয় ভারতীয় রক্ষীবাহিনী ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী ক্যাডাররা অত্যাচার বৈষম্য করছে।ভারতের দিল্লী,মুম্বাই,ইউপি,কলকাতা ও আসামসহ অনেক এলাকায় উগ্র হিন্দুত্ববাদী ও নাস্তিক্যবাদী ক্যাডাররা মুসলমানদের উপর নির্যাতন ও বৈষম্য চালাচ্ছে।চীনের জিনজিয়াং,পূর্ব তুর্কিস্তানসহ কয়েকটা প্রদেশে সেখানকার কট্টর কমিউনিস্ট প্রশাসন কর্তৃক সেদেশের উইঘুর মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে।এগুলো খুব দুঃখজনক।একদিন অবশ্যই এসব সংকট সমস্যার সমাপ্তি হবে।এখানে শুধু ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার চলমান সংকট ও এর সমাধান বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
ফিলিস্তিন ও সিরিয়া মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম দেশ।এই দুই দেশের অর্থনৈতিক,ধর্মীয়,কূটনৈতিক এবং ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে।এই দুই দেশের ইতিহাস অনেক পুরনো।বাইতুল মুকাদ্দাস বা আল আকসা মসজিদ এটা ফিলিস্তিনের জেরুজালেমে অবস্থিত।যেখানে মহানবী সাঃ এর ইসরা ও মিরাজ হয়েছিল।জেরুজালেমকে আরবিতে আল কুদস বলে।ইসলাম,ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মের কাছে এটা পবিত্র সম্মানিত স্থান।ইতিহাসের পাতায় দেখি হযরত মুসা(আঃ) ও ঈসা (আঃ) এর সময়ে বনী ইসরাইলবাসী জেরুজালেমে বসবাস শুরুকরে।মহানবী মুহাম্মদ সাঃ জেরুজালেমের ইহুদিদের ব্যাপারে আশঙ্কা করেছিলেন।তাদেরকে শর্তসাপেক্ষে বসবাসের অনুমতি দেন।কিন্তু পরে জেরুজালেমে বনী ইসরাইলের অনুসারী ইহুদিরা শর্ত অমান্য করে দাঙ্গা রক্তপাত আরম্ভ করে।এতে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আমিরুল মুমিনিন হযরত উমর ফারুক (রাঃ) জেরুজালেমকে ইহুদিদের হাত থেকে ফিরিয়ে এনে মুসলমানদের হাতে ফিরিয়ে এনে বিজয় দেন।উমর বিন আব্দুল আজিজ রাঃ এর সময়েও জেরুজালেমের শান্তি ছিল।(বিস্তারিত দেখুন ইবনে কাসীরের বিদায়া ওয়ান নেহায়া,শাহ আকবর নজিরাবাদীর ইতিহাস সংক্রান্ত গ্রন্থ,আবুল হাসান আলী নদভীর কয়েকটা গ্রন্থে এবং ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর এর "ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ" বইয়ে)।১১-১২শ শতকের সময়ে ইউরোপ থেকে খ্রিস্টানরা এসে জেরুজালেম দখল করে মুসলমানদের সাথে ঐতিহাসিক ক্রুসেডযুদ্ধ শুরুকরে।এই যুদ্ধে জেরুজালেমকে দখলদারদের হতে মুক্ত করার জন্য মুসলমানদের পক্ষে মহাবীর গাজী সালাহউদ্দিন আইয়ুবী(রাঃ) অনেক সংগ্রাম করে তখনকার দখলদার ক্রুসেডবাহিনীকে পরাজিত করে জেরুজালেমকে দখলমুক্ত করে।
উসমানীয় খেলাফতের সময়ে এই ফিলিস্তিন উসমানীয় খিলাফতের অধীনে ছিল।বিংশ শতাব্দীর সময়ে ১৯১৭সালের আগে থিওডর হার্জেল সহ অনেক ইহুদিরা জায়নিজম নামে একটা মতবাদ শুরু করে।এই মতবাদের মাধ্যমে তারা ইহুদদিবাদী আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা করে।তারা ফিলিস্তিনি আরবদের হটিয়ে ইহুদি ভূমি রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা করে।কিন্তু ফিলিস্তিনিরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাদেরকে উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের বুকে ইসরাইল গঠনের ভয়ংকর পরিকল্পনা শুরু করে। কিন্তু উসমানীয় খিলাফতের শেষ সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ ইহুদিদের এইসব দাবী প্রত্যাখ্যান করেন।কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে হঠাৎ উসমানি খিলাফতের পতন হলে ব্রিটিশরা ১৯১৭সালের নভেম্বর মাসে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমেই ফিলিস্তিনের বুকে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের সুযোগ দেয়।এতে থিওডর হার্জেল জায়নবাদীরা এই ঘোষণাকে সমর্থন দিয়ে ফিলিস্তিনের বুকে ইসরাইল গঠনের জন্য অশান্তি সৃষ্টি শুরু করে।ফিলিস্তিনিদের উপর অত্যাচার শুরু করে।১৯৪৮সালের মে মাসে ফিলিস্তিনের বুকে ইসরাইল গঠনের পর থেকেই জায়নিস্ট বাহিনী ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অত্যাচার ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরুকরে।এতে ফিলিস্তিনিরা মাতৃভূমি ফিরিয়ে আনার জন্য ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ সংগ্রাম শুরু করে।মূলত উসমানীয় খেলাফতের শেষদিকের দূর্বলতার কারণেই ইসরাইল গঠনের সুযোগ পায়(ডঃ ইসরার আহমেদ,ডঃ রমাদান বুতি ও মুফতি তাকী উসমানী এর বক্তৃতা লেকচার হতে সংগৃহীত)।মুসলমানদের ফিলিস্তিনের পক্ষে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।
১৯৪৮,১৯৬৭ ও ১৯৭৩সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধ,১৯৮৭,১৯৯১,১৯৯৫,২০০০,২০০৬,২০০৮,২০০৯,২০১২,২০১৪,২০১৭ এর শেষদিক ও ২০১৮ এবং চলতি বছর ২০২১সালে দখলদার ইসরাইলীদের সাথে অনেক যুদ্ধ হয়েছে,ফিলিস্তিনের অসংখ্য মানুষ ইসরাইলী দখলদার বাহিনীর হাতে শহীদ হয়।
গাজা,পশ্চিমতীর এমনকি জেরুজালেমে আল আকসা মসজিদ এলাকায়ও দখলদার ইসরাইলিরা হামলা চালিয়েছে বিভিন্নভাবে।১৯৬৭ ও ১৯৭৩সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে আরবরা পরাজিত হওয়ার পরে এখনও ফিলিস্তিন সংকটে আছে।
ফিলিস্তিনের মুক্তি স্বাধীনতার জন্য পি.এল.ও,হামাস,ফাতাহ,ইসলামিক জিহাদ,ইরান নিয়ন্ত্রিত কুদস ফোর্স ও আস সাবিরীন ইত্যাদি অনেক দল সংগঠন কাজ করেছে।তবে এর মধ্যে পি এল ও, হামাস ও ফাতাহ রাজনৈতিক ও সামরিক উভয়ভাবে ফিলিস্তিনের জন্য সংগ্রাম কাজ চালিয়েছে। ফাতাহ ১৯৫৯সালে,পি.এল.ও বা প্যালেস্টাইন লিবারেল অর্গানাইজেশন ১৯৬৪ সালে,হামাস ১৯৮৭ সালে,ইসলামিক জিহাদ মুভমেন্ট ১৯৮১ সালে এবং ইরান নিয়ন্ত্রিত শিয়াপন্থী আস সাবিরীন ২০১০ সালে গঠিত হয়।ফিলিস্তিনের অন্যতম ধর্মীয় নেতা শহীদ আহমদ ইয়াসিন হামাস গঠন করেছেন।২০০৬সালের পর থেকে ফিলিস্তিনের সরকার আলাদা।পশ্চিমতীর জেরুজালেম অঞ্চলে ফাতাহ সরকার এবং গাজা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় হামাস সরকার ক্ষমতায় আছে।তারা উভয়ই ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে,তবে এর মধ্যে হামাস অনেক শক্তিশালী।সেদেশে বিতর্কি দল হিযবুত তাহরীরের অন্যতম ঘাটি আছে। হামাস ফিলিস্তিনের পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী,তাদের দৃষ্টিতে ফিলিস্তিনের বুকে ইসরাইল একটা অবৈধ রাষ্ট্র,কিন্তু ফাতাহ ও পি.এল.ও এরা দ্বি-রাষ্ট্র নীতিতে বিশ্বাসী।হিযবুত তাহরীরের লোকেরা হামাসের অনেক নেতাকে এবং ফাতাহকে অপছন্দ করে।
হামাসের সামরিক শাখার নাম আল কাসসাম ব্রিগেড।তারা দখলদার ইসরাইলিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ করে অনেক সফল হয়েছে।তুরস্ক,কাতার,ইরান তারা হামাসকে অনেক সহায়তা করছে,সমর্থন দিচ্ছে,ফাতাহ ও পি.এল.ও কে সমর্থন দিচ্ছে আমেরিকা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,সৌদি আরব,সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশর।ইসরাইল,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কতিপয় পশ্চিমা দেশ,সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে।কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হামাস ফিলিস্তিনে কোনো সন্ত্রাসী চরমপন্থী কাজ করেনি।ফিলিস্তিনে অনেকবার যুদ্ধবিরতি হয়েছিল।
সম্প্রতি চলতি বছরে ফের দখলদার ইসরাইলি বাহিনী রমজান মাসে আল আকসা মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় রকেট হামলা চালায়,এতে অনেকে নিহত আহত হয়েছে,ফিলিস্তিনের জেরুজালেম ও গাজায় ইসরালি দখলদার বাহিনী অনেক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। সবশেষ গত ২১মে গাজায় যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে।আসলে ফিলিস্তিনিরা তাদের স্বাধীনতা চায় কিন্তু দখলদার ইসরাইল এতে বাধা দিচ্ছে।জাতিসংঘ,আরবলীগ,ও.আই.সি ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে অনেক সিদ্ধান্ত প্রস্তাব দিলেও জাতিসংঘ কে অনেক সমালোচিত হতে হয়েছে। বাংলাদেশ শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের পক্ষে ছিল, আছে এবং থাকবে। ফিলিস্তিনের মুসলমানদের পাশাপাশি সেদেশের স্বাধীনতাকামী খ্রিস্টান,দ্রুজরাও নির্যাতনের শিকার। ফিলিস্তিন ও সিরিয়া উভয় দেশে কাদিয়ানীদের বসবাস করতে দেখা যায়।ইদানীংকালে আমরা দেখছি মিডিয়ায় ও অনলাইনে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ও ধর্মহীন নাস্তিক ইসলামবিদ্বেষীরা ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরাইলী সন্ত্রাসীদের চালানো হামলা নিয়ে তামাশা করেছে।যা খুবই দুঃখজনক। অনেক ফিলিস্তিনিরা নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য বিদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
সিরিয়া মধ্যপ্রাচ্যের একটি অন্যতম দেশ যা ফিলিস্তিনের পাশেই অবস্থিত।এই সিরিয়ার ইতিহাসও অনেক পুরনো।সিরিয়াতে ইসলাম,খ্রিস্টান,কাদিয়ানী,ইহুদি,দ্রুজ,ইয়াজিদি,বাহাই ইত্যাদি ধর্মের বসবাস।সেদেশে আরব,কুর্দি,আসিরিয়া,গ্রীক,তুর্কি ইত্যাদি জাতিগোষ্ঠী বসবাস করেন।মহানবী সাঃ সহ অনেক নবী রাসূলদের স্মৃতিবিজড়িত দেশ এই সিরিয়া।সিরিয়ায় আহলুস সুন্নাহর অনুসারী বা সুন্নি মুসলিম/মুসলমানদের বৃহত্তর গোষ্ঠী রয়েছে।সেদেশে সুন্নিদের পাশাপাশি সংখ্যালঘু শিয়া,আলাবী নুসাইরি ও কাদিয়ানীরা অনেক প্রভাব বিস্তার করেছে।সিরিয়ার রাজধানীর দামেস্ক।ইসলামের ইতিহাসে উমাইয়া খিলাফত এই সিরিয়ার দামেস্ক থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল।মহানবী সাঃ এর বোন ফাতিমা রাঃ এর কন্যা হযরত যায়নাব রাঃ,মহানবী সাঃ এর আরেক কন্যা রুকাইয়া রাঃ, উমাইয়া খিলাফতের হযরত আমিরে মুয়াবিয়া রাঃ,উমর বিন আব্দুল আজিজ রাঃ,বিখ্যাত সুফী সাধক মনীষী মহিউদ্দিন ইবনে আরাবী উনারা সিরিয়াতেই চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। সিরিয়া ১৯৪৬-১৯৪৮সালে ফরাসীদের হাত থেকে স্বাধীন হয়।উমাইয়া মসজিদ সিরিয়ার শ্রেষ্ঠ মুসলিম স্থাপত্য। ১৯৬৮সালে হাফিজ আল আসাদ এর বাথ পার্টি কর্তৃক সেদেশে এক জরুরি অবস্থা ঘোষণার কারণে সেখানে বর্তমানেও সংকটাপন্ন পরিস্থিতি চলছে।সেদেশের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী আলাবী নুসাইরি সম্প্রদায়ের হওয়ায় সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আহলুস সুন্নাহর অনুসারী মুসলমানদের আপত্তি হয়েছে।সেদেশে এখনও স্বৈরশাসন চলছে।
অভিযোগ এসেছে সিরিয়ার বর্তমান স্বৈরশাসক বাশার আল আসাদ সেদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের উপর বৈষম্য করছে।এই বৈষম্য থেকেই ২০১১সাল থেকে বাশার আল আসাদ ও তার বাথিস্ট প্রশাসন সেদেশের জনগনের উপর গৃহযুদ্ধ শুরু করেছে।এতে সেদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগন আসাদ প্রশাসনের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছে।স্বৈরাচারী আসাদ ও ইসরাইলের হাত থেকে সিরিয়ার মুক্তির জন্য সেদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসাদ প্রশাসনের সামরিক বাহিনীর দলত্যাগী সৈন্যরা ও বেসামরিক জনগন ফ্রি সিরিয়ান আর্মি নামক সংগঠন তৈরি করে।মধ্যপ্রাচ্য,তুরস্ক,মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের অধিকাংশ মুসলিম আলেম উলামা ধর্মীয় নেতারা ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে সমর্থন দিয়েছে।
২০১৩সাল থেকে রাশিয়া,ইরানের শিয়াপন্থী প্রশাসন ,লেবাননের শিয়াপন্থী হিজবুল্লাহ আসাদ প্রশাসনকে সমর্থন দিয়েছে।ইরান ও ইরাকের শিয়াপন্থী অসংখ্য সশস্ত্র মিলিশিয়া স্বৈরাচারী আসাদকে সমর্থন দিয়ে সিরিয়ার তাদের পক্ষে যুদ্ধ করেছে।লেবাননের হিজবুল্লাহ,যুক্তরাজ্যের সুন্নিবিদ্বেষী খুদ্দামুল মাহদী,আফগানিস্তানের ফাতেমিয়ুন,পাকিস্তানের জাইনাবিয়ুন,ইরাকের হাশদ আশ শাবী,কাতায়েব হিজবুল্লাহ,আসায়েব আহলুল হক,ইরানের বদর আর্মিসহ শিয়াদের ৮০-৯০টি মিলিশিয়া স্বৈরাচারী আসাদ প্রশাসনের পক্ষে কাজ করছে।
আসাদ প্রশাসনের সাথে সাথে আলকায়েদাপন্থী আল নুসরা ফ্রন্ট,হায়াত তাহরির আল শাম, ২০১৩-১৪সালে হঠাৎ করে উৎপত্তি হওয়া জঙ্গি সন্ত্রাসী দায়েশ বা আইএস,পশ্চিমা দেশসমূহ ও ইসরাইল এবং ইসরাইলী মদদপুষ্ট কুর্দি সশস্ত্র দল পিকেকে,ওয়াইপিজি YPG,এস.ডি.এফ সেদেশে যুদ্ধ সৃষ্টি করে।ফ্রি সিরিয়ান আর্মিকে সমর্থন দিয়ে আহরার আল শাম,জাঈশ আল ইসলাম ইত্যাদি সংগঠন এর কার্যক্রম শুরু হয়। ফ্রি সিরিয়ান আর্মি এফ.এস.এস, আহরার আল শাম ও এজাতীয় সমমনা দলগুলো স্বৈরশাসক আসাদ,সন্ত্রাসী আইএস এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে।ফ্রি সিরিয়ান আর্মি,আহরার আল শাম ও এজাতীয় সমমনা দলগুলোকে তুরস্ক,সৌদিআরব,কাতার,কুয়েত,মালয়েশিয়া,যুক্তরাজ্য,নেদারল্যান্ডস ইত্যাদি দেশ সমর্থন সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে।কুর্দি পিকেকে,ওয়াইপিজি,এসডিএফ কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,ইসরাইল,সংযুক্ত আরব আমিরাত,স্পেন,ফ্রান্স ইত্যাদি দেশ সমর্থন দিয়েছে। দামেস্কসহ অনেক অঞ্চল স্বৈরাচারী আসাদ প্রশাসন ও শিয়া মিলিশিয়াদের নিয়ন্ত্রণে।গত কয়েকবছরে সিরিয়াতে স্বৈরশাসক আসাদ ও তার মদদপুষ্ট শিয়া মিলিশিয়া বাহিনী এবং কুর্দি পিকেকে,এসডিএফ এর কর্মকান্ডগুলো ক্রমান্বয়ে সন্ত্রাসি কর্মকান্ড হিসেবে রূপ নিয়েছে।
আলেপ্পো,ইদলিব ও এর পার্শ্ববর্তী কয়েকটা অঞ্চল আসাদবিরোধী ফ্রি সিরিয়ান আর্মি তথা সুন্নি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রনে।আফরিন ও এর আশপাশের এলাকা কুর্দিশ সশস্ত্র সংগঠন পিকেকে,এসডিএফ,ওয়াই পি জির নিয়ন্ত্রণে আছে।অসংখ্য মানুষ সিরিয়ার এই গৃহযুদ্ধে নিহত ও আহত হয়েছে।সিরিয়ার স্বৈরশাসক আসাদ ও তার বাহিনী এবং জঙ্গি সন্ত্রাসী আইএস সেদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের অসংখ্য বাড়িঘর,মসজিদ,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধ্বংসযজ্ঞ হামলা চালিয়ে পরিস্থিতিকে অশান্ত করে ফেলেছে।
বর্তমানে রাশিয়া, ইরান ও হিজবুল্লাহর সমর্থনপুষ্ট বাশার আসাদ বাহিনী অত্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। তাদের হামলায় একের পর এক বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত শহরের পতন ঘটছে। যখন যে শহরে অভিযান শুরু হয় সেখানকার মানুষ মারাত্মক মানবিক বিপর্যয়ে পড়ে।আইএসের উত্থানের পর সিরিয়া যুদ্ধ ত্রিমুখী আকার ধারণ করে। বাশার,বিদ্রোহী বাহিনী, আইএস- প্রত্যেকে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকে। মাঝখান দিয়ে আইএস দমনের নামে শুরু হয় আমেরিকা-ইসরাঈলের বর্বরতা। তাদের ক্রমাগত বিমান হামলায় মৃত্যু ঘটে অসংখ্য নিরীহ মানুষের।
সবমিলিয়ে ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ত্রিমুখী যুদ্ধ অপূরণীয় ক্ষতি করেছে ইরাক ও সিরীয় জনগণের। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে মসুল পতনের মাধ্যমে আইএসের খেলাফতের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটলেও বাশার বাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যকার দ্বিমুখী যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। সিরিয়ার হাজার হাজার মানুষ শরনার্থী হিসেবে তুরস্ক,জর্ডানসহ কয়েকটি দেশে আশ্রয় নিয়েছে।জাতিসংঘপন্থীরা কিছু শরনার্থী ক্যাম্প বানিয়েছে সেখানে অনেক মানুষ আশ্রয়ে আছে।জাতিসংঘ,ওআইসি,আরবলীগ সবাই সিরিয়া ইস্যুতে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিলেও সেগুলার কাজ হয়নি। তুরস্ক,ইরান,রাশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানরা বার বার আলোচনায় বসেও তেমন কোনো সমাধান আসেনি।
আসলে সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের বর্তমানে যে সংকট পরিস্থিতি চলছে তা খুবই দুঃখজনক।উভয় দেশে এখন কঠিন সামাজিক,রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট চলছে।আমরা সবাই এটার সমাধান চাই।কিন্তু বিশ্বে কতিপয় হলুদ মিডিয়া ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার মুক্তিকামী জনগণকে সন্ত্রাসি অপবাদ দিয়ে বিভিন্ন উস্কানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রচার করছে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও মুক্তিকামী জনগণ এবং সিরিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যারা সেদেশের স্বৈরশাসন,আইএস ও ইসরাইলের হাত থেকে মুক্ত হতে চায় তারা কেউই সন্ত্রাসী জঙ্গি উগ্রবাদী নয়।ফিলিস্তিন ও সিরিয়া সংকট নিয়ে অনেকে অনেকরকম কথা বলে।আসলে এই সংকটের সমাধান অমুসলিমদের দিয়ে করার চেয়ে মুসলমান বা মুসলিমদের দিয়ে করানোটাই উচিৎ।প্রকৃতপক্ষে আমরা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পাই যে ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার মুক্তি সংগ্রাম এটা জিহাদেরই অন্তর্ভুক্ত।বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের সঠিক মত ও পথের অনুসারী নির্ভরযোগ্য মুসলিম আলেম ধর্মীয় নেতারা এই সংকটের সঠিক সমাধান দিয়েছেন।মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম আলেম ডঃ আল্লামা শায়খ ইউসুফ কারজাভী বলেছেন,"ফিলিস্তিন ও আল আকসা রক্ষার দায়িত্ব সারাবিশ্বের সব মুসলমান/মুসলিমদেরই"।ভারতের জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ এর প্রেসিডেন্ট আল্লামা আরশাদ মাদানি বলেন "আমাদের মুসলমানদের নিরবতার কারণে,কোনো মুসলিম দেশ যদি জাগ্রত না হয় তাহলে ফিলিস্তিনে সংকটের সমাধান অনেক বিলম্ব হবে"
তাই ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার এই সংকটের সমাধান হিসেবে সারাবিশ্বের সকল সচেতন মুসলিম ছাত্র যুবক,শিক্ষক,আলেম উলামা,ধর্মীয় নেতা,রাজনৈতিক নেতা,রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান সবার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিচে উল্লেখ করা হল
১.ফিলিস্তিন ও সিরিয়া ইস্যুতে সকল দেশের বিভিন্ন দল ও মতের সচেতন মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া।আফগানিস্তানের তালিবান,ফিলিস্তিনের হামাস ও ফাতাহ এবং সিরিয়ার ফ্রি সিরিয়ান আর্মি ও আহরার আল শামের উচিৎ সবসময় ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী সংগ্রাম করা।
২.ওআইসি এবং আরবলীগের উচিৎ এই বিষয়ে শক্তিশালী সমাধান দেওয়া।যেন ফিলিস্তিন তার নিজ দেশের স্বাধীনতা ফিরে পায় ও সিরিয়াতে গৃহযুদ্ধের অবসান হয় এবং জাতিসংঘের মত ওআইসিতেও ভেটো প্রস্তাব পদ্ধতি চালু করা
৩. ফিলিস্তিন ও সিরিয়ায় চিকিৎসা ও অর্থনৈতিক সহায়তা পৌছানো।প্রত্যেক নির্ভরযোগ্য মুসলিম শাসক,অর্থনীতিবিদ,বড় বড় কোম্পানির ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা,চিকিৎসক,আলেম উলামা ও শিক্ষকদের এক্ষেত্রে এগিয়ে আসা উচিৎ।
৪.ফিলিস্তিনের পক্ষে ও দখলদার ইসরাইলের বিপক্ষে বাংলাদেশ,পাকিস্তান,আফগানিস্তান,মালয়েশিয়া,ইন্দোনেশিয়া,সৌদি আরব,লেবানন,কুয়েত,কাতার,তুরস্ক,মিশর সহ সব মুসলিম দেশ মিলে একযোগে ঠান্ডাভাবে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করা।
৫.বাংলাদেশসহ প্রতিটি মুসলিম দেশে বসবাসরত হিন্দু খ্রিস্টান সহ অমুসলিমদের প্রতি ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার পক্ষে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা,অমুসলিমদেরকে ফিলিস্তিন ও সিরিয়া বিষয়ে সঠিক ধারণা দেয়া।
৬.ফিলিস্তিন ও সিরিয়া বিষয়ে সকল ভুল ভ্রান্ত ধারণা থেকে দূরে সরে আসা।আল্লাহর কাছে তওবা ইস্তিগফার করা ও ক্ষমা চাওয়া,বিপদ থেকে বাঁচার জন্য প্রতিসপ্তাহে নামাজে কুনুতে নাযিলা পড়া।
৭.ফিলিস্তিন ও সিরিয়ার পক্ষে মুক্তি আন্দোলন সংগ্রাম এটা জিহাদের অন্তর্ভুক্ত কিন্তু এক্ষেত্রে সঠিক পন্থায় সীরাতে রাসূল(সাঃ) এর পন্থায় বা নববী পন্থায়,নবীজির খোলাফায়ে রাশেদীন,আহলুল বাইত,সাহাবায়ে কিরাম,তাবেয়ীন,চার মাযহাবের ইমাম,আব্দুল কাদির জিলানী রহঃ,খাজা মুইনুদ্দিন চিশতী রহঃ,মুজাদ্দিদে আলফেসানীর মত আউলিয়ায়ে কিরাম ও নির্ভরযোগ্য মুসলিম মনীষিদের পন্থায় জিহাদ করা ও উনাদের কর্মপন্থার অনুসরণ করা।জিহাদ বিষয়ে সঠিক ধারণা অর্জন করা।
৮.বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ নির্ভরযোগ্য মুসলিম মনীষী যেমন সৌদি আরবের সাবেক বাদশাহ ফয়সাল বিন আঃ আজিজ,বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুহাম্মদ উল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহঃ,তুরস্কের বদিউজ্জামান সাইদ নুরসী ও উসমানিয় খিলাফতের সুলতান আব্দুল হামিদ,ফিলিস্তিনের শহীদ আহমদ ইয়াসিন,ভারতের সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী রহঃ,পাকিস্তানের ডঃ আল্লামা তাহের উল কাদেরী ও মুফতি তাকী উসমানী,সিরিয়ার শহীদ ডঃ সাইদ রমাদান বুতি,মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মুরসি উনাদের কর্মপন্থার অনুসরণ করা।
৯.ফিলিস্তিন ইস্যুতে ব্রিটিশদের উচিৎ মুসলিম উম্মাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং সিরিয়া ইস্যুতে ইরান ও রাশিয়ার উচিৎ জাতিসংঘ,হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, তুরস্ক,কাতার,মালয়েশিয়া,বাংলাদেশ ও কুয়েতের কাছে ক্ষমা চাওয়া।
১০.সিরিয়া ইস্যুতে বাংলাদেশের সরকারের উচিৎ সৌদি আরব,কাতার,কুয়েত ও তুরস্ককে সমর্থন দেওয়া।
১১.প্রত্যেকটা মুসলিম ও অমুসলিম দেশের বড় বড় নির্ভরযোগ্য সঠিক এনজিও, ধর্মীয় সংগঠন যেমন মিনহাজুল কুরআন,মজলিসে দাওয়াতুল হক,হ্যান্ডস অফ সিরিয়া,সাবআ সানাবিল ফাউন্ডেশন,
Comments
Post a Comment