শহীদে বালাকোট,ত্রয়োদশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ ও মুজাহিদে মিল্লাত মুজাহিদে আজম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ১
হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার জন্ম মুবারকঃ
ত্রয়োদশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ ও মুজাহিদে মিল্লাত মুজাহিদে আজম, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, দলিলুল আরেফিন, মাখজানে মারিফাত, রুহুল হাক্কে, সিরাজুল উম্মত, আসাদুল্লাহ্, সাহিবুল আসরার, সাইয়্যিদুল আবেদীন, মুহিয়্যূস্সুন্নাহ্, দাফিউল বিদ্য়াত, খলিফাতুল্লাহ্ ফিল আরদ, আমিরুল মু’মিনীন, আওলাদে রাসূল, হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ১২০১ হিজরী শতকের সফর মাসে ইংরেজী ১৭৮৬ সালের ২৯ নভেম্বর সোমবার ভারতের উত্তর প্রদেশের রায় বেরেলী শহরের বিখ্যাত সম্ভ্রান্ত সাইয়্যিদ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
নসবনামাঃ
উনার নসব নামা সম্পর্কে “মাখজানে আহম্মদী” কিতাবের ৭১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে এভাবে ...
সাইয়্যিদ আহমদ বিন সাইয়্যিদ মুহম্মদ ইরফান বিন সাইয়্যিদ মুহম্মদ নূর বিন সাইয়্যিদ হুদা বিন সাইয়্যিদ বিন সাইয়্যিদ মুহম্মদ ইলমুল্লাহ্ বিন সাইয়্যিদ মুহম্মদ ফুযাইল বিন সাইয়্যিদ মুহম্মদ মুয়াজ্জিম বিন সাইয়্যিদ আহম্মদ বিন কাজী সাইয়্যিদ মুহম্মদ বিন সাইয়্যিদ আলাউদ্দিন বিন সাইয়্যিদ কুতুবুদ্দীন মুহম্মদ সানী বিন সাইয়্যিদ মুহম্মদ সানী ছদরুদ্দীন বিন সাইয়্যিদ যইনুদ্দীন বিন সাইয়্যিদ আহম্মদ বিন সাইয়্যিদ আলী বিন সাইয়্যিদ কিয়ামুদ্দীন বিন সাইয়্যিদ সদরুদ্দীন বিন সাইয়্যিদ কাজী রুকুনুদ্দীন বিন সাইয়্যিদ আমীর নিযামুদ্দীন আমীর সাইয়্যিদ কুতুবুদ্দীন মুহম্মদ আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী আল মাদানী আল কাড়দী বিন সাইয়্যিদ রশীদুদ্দীন আহমদ মাদানী বিন সাইয়্যিদ ইউসুফ বিন সাইয়্যিদ ঈসা বিন সাইয়্যিদ হাসান বিন সাইয়্যিদ আবুল হাসান আলী বিন আবি জাফর মুহম্মদ বিন কাশিম বিন আবি মুহম্মদ আব্দুল্লাহ্ বিন সাইয়্যিদ হাসান আওরাজুল জাওয়াদ নাকিব কুফা বিন সাইয়্যিদ মুহম্মদ সানি বিন আবি মুহম্মদ সাহিবুন নাফসে যাকিয়া বিন আব্দুল্লাহ্ মাহদ বিন হাসান মুসান্না বিন ইমাম হাসান বিন আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদিনা হযরত কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম।
হযরত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ বেরেলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতার নাম সাইয়্যিদ মুহম্মদ ইরফান রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং দাদার নাম সাইয়্যিদ মুহম্মদ নূর রহমাতুল্লাহি আলাইহি । উনার চতুর্থ পূর্ব পুরুষ সাইয়্যিদ মুহম্মদ ইলমুল্লাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রধান খলীফা হযরত শায়খ আদম বিননূরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার আকাবিরে খলিফাদের মধ্যে গণ্য।
মাতৃগর্ভেই বিলায়েতের পূর্বাভাসঃ
তাজকেরা নামক কিতাবে বর্ণিত আছে, হযরত সাইয়্যিদ শহীদ আহমদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময় একদিন উনার পবিত্র মাতা সাহেবানী রহমাতুল্লাহি আলাইহা স্বপ্ন দেখেন, উনার রক্ত দ্বারা এক খন্ড কাগজে কিছু লিখা হলো এবং পরক্ষণেই উক্ত কাগজখন্ড সারা পৃথিবীতে উড়তে লাগলো।” তিনি জাগ্রত হয়ে এ স্বপে¦র ব্যাখ্যা উনার জামাতা সাইয়্যিদ আব্দুস সুবহান রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট জিজ্ঞাসা করেন, তিনি বলেন- আপনার গর্ভস্থ সন্তানটি ভূমিষ্ট হয়ে কালক্রমে সারা পৃথিবীতে প্রসিদ্ধি লাভ করবেন এবং উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবেন। মূলতঃ এ ধরণের বহু ঘটনা আউলিয়া-ই-কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনাদের জীবনীতে উল্লেখ আছে যে উনারা মাতৃগর্ভ থেকেই বিলায়েতের সুধা পান করে থাকেন।
“সাওয়ানেহ আহমদী, মাখজানে আহমদী, সীরতে সাইয়্যিদে আহমদ শহীদ, তারিখে মাশায়েখে চিশ্ত, যব ঈমান কি বাহার আই” গ্রন্থে লিখা আছে, চার বৎসর বয়সে উনাকে মক্তবে পাঠানো হয়। মক্তবের পাঠ শেষ করার পর পরিণত বয়সে তিনি হযরত শাহ ইসহাক দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট তা’লিম নিয়ে কাফিয়া ও মিশকাত শরীফ পর্যন্ত পড়েছিলেন। এ সম্পর্কে ‘আমিরুর রেওয়াত’ গ্রন্থে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত নূর মুহম্মদ মিয়াজী ঝানঝানবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি শাহ ইসহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট কাফিয়া পড়তে ছিলাম। আর হযরত সাইয়্যিদ সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি যখন তাশরীফ আনেন তখন তিনি উনার নিকট মিজান পড়া আরম্ভ করেন। উনার পড়া-লিখা এত দ্রুত উন্নতি লাভ করলো যে, তিনি মিযানের অর্ধাংশ পড়ার পূর্বেই আমার সাথে কাফিয়ার মধ্যে যোগ দিলেন। আর কাফিয়া পড়া অবস্থায় তিনি শাহ সাহেবের নিকট মিশকাত শরীফ পড়া শুরু করেন।
বাল্যকালঃ
যে বয়সে বালকগণ খেলাধুলা, আমোদ-আহলাদে মত্ত থাকে তিনি সে বয়স থেকে নির্জনতা অবলম্বন এবং কাফির মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার চিন্তা-ভাবনা করতেন।উনার শৈশব কাল সম্পর্কে “সাওয়ানেহ্ আহম্মদী” কিতাবে তিনি নিজেই বলেন, বাল্যকাল হতেই আমার মনে এই ধারণা বা ভাব উদয় হতো যে, একদিন আমি কাফিরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবো। তাই শৈশবেই দেখা যায় তিনি তার সঙ্গী-সাথীদের দুই দলে বিভক্ত করে দু’টি পরস্পর সৈন্যবাহিনী দাঁড় করিয়ে দিতেন। একটি দলের আমির হয়ে তিনি তার নাম দিতেন “মুজাহীদে ইসলাম” অন্য দলটির নাম দেওয়া হতো “কাফির বাহিনী।”এইভাবে দু’টি দলের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যেত। যুদ্ধে যখন “মুজাহিদে ইসলাম” বাহিনী জয় লাভ করতো তখন তিনি ও উনার সঙ্গীগণ খুব জোরে শোরে তাকবীর ধ্বনি দিতেন। আর এটা হবে না-ই বা কেন? তিনি যে আসাদুল্লাহিল গালিব সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার আওলাদ উনাদের অন্তর্ভূক্ত। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম জিহাদের ময়দানে কাফিরদের বিরুদ্ধে সিংহের মত গর্জে উঠতেন। জিহাদের ময়দানে উনার ডান পার্শ্বে সাহায্যকারী হিসেবে থাকতেন হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম আর বাম পার্শ্বে থাকতেন হযরত মিকাইল আলাইহিস সালাম। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র রক্তধারা যে উনার জিসম মোবারকে মিশে আছে। কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা যে উনার বংশগত ঐতিহ্য। এই জন্যই দেখা যায়, উনার জীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তিনি কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে বহু জিহাদ করেছেন। ভারতবর্ষ থেকে কাফিরদের অস্তিত্ব তুলে দেয়ার জন্য তিনি আকোড়ার যুদ্ধ, শিধূর যুদ্ধ, উতমান জাইর যুদ্ধ, পানজ্তার যুদ্ধ, ফুলড়ার যুদ্ধ, মর্দান যুদ্ধ, মায়ার যুদ্ধসহ আরো অনেক যুদ্ধ ক্ষেত্রে তিনি কাফিরদের মোকাবিলায় তরবারী পরিচালনা করেছিলেন। অবশেষে ১৮৩১ সালে বালাকোটে শিখ, খৃষ্টান ও মুনাফিক সীমান্ত সরদারদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে গিয়ে শাহাদত বরণ করেছেন।
Comments
Post a Comment