সাহাবায়ে কেরামের মাঝে সবচাইতে সাহসী কে ছিলেন?
---------------------------------------------------
হজরত আলি রা. কুফাতে বয়ান করছিলেন সাথীদের উদ্দেশ্যে। হঠাৎ প্রশ্ন করলেন, বলো তো সাহাবায়ে কেরামের মাঝে সবচাইতে সাহসী কে ছিলেন?
একজন বললেন, সম্ভবত আপনি৷
মাওলা আলি রা. বলেন, যদি যুদ্ধক্ষেত্রের বীরত্বের কথা বল তাহলে আমি কখনো কারো সাথে হারিনি। কিন্তু আমি বলছি সাহসিকতার কথা। আমাদের মাঝে সবচাইতে সাহসী ছিলেন হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা.। (মুসনাদে বাজজার, হাদিস নং ৭৬১)
মাওলা আলির সাথীরা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, সেটা কিভাবে?
হজরত আলি রা. বলেন, একদিন মক্কার জমিনে কাফির মুশরিকরা হুজুর রাসূলুল্লাহ ﷺকে আঘাত করছিল (পাপিষ্ঠ ওকবা ইবনে আবি মুয়াইত হুজুর রাসূলুল্লাহ ﷺর গলা মুবারাকে চাদর দিয়ে প্যাঁচিয়ে ধরল। মায়াজাল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহাল আজিম )! আমাদের মধ্যে কেউ সাহস করে নাই কুরাইশদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে৷ কিন্তু হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. রুখে দাঁড়ালেন। নিজের শরীর দিয়ে হুজুর রাসূলুল্লাহ ﷺকে বাঁচাতে লাগলেন। আর চীৎকার করে বলতে লাগলেন, أَتَقْتُلُونَ رَجُلًا أَن يَقُولَ رَبِّيَ اللَّهُ؟
তোমরা কি একজনকে এজন্যে হত্যা করবে যে, তিনি বলেন, আমার পালনকর্তা আল্লাহ?(সূরা গাফির, আয়াত নং ২৮)
কুরাইশরা তখন হুজুর রাসূলুল্লাহ ﷺকে ছেড়ে দিয়ে আবু বকর সিদ্দিক রা. কে মারতে লাগল। এসময় হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. এঁর উপগোত্র বনু তাইমের লোকজন চলে আসলে কুরাইশরা আবু বকর সিদ্দিক রা. কে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
বনু তাইম এসে দেখল হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. অচেতন হয়ে পড়ে আছেন! তাঁকে কয়েকজন মিলে ওঠিয়ে বাড়িতে নিয়ে গেল৷
হুঁশ ফেরার পর তিনি তাঁর আম্মাজানকে প্রথম যেই কথা জিজ্ঞেস করলেন তা ছিল, "আল্লাহর হাবিব হুজুর রাসূলুল্লাহ ﷺর অবস্থা কী? তিনি কেমন আছেন?"
সুবহানাল্লাহ। তিনি তাঁর আম্মাকে হজরত ওমর ফারুক রা. এঁর বোন হজরত ফাতেমা বিনতুল খাত্তাব রা. এঁর ঘরে পাঠালেন খবর নিতে যে, প্রিয়নবী ﷺকেমন আছেন।
ফাতেমা বিনতে খাত্তাব রা. দৌড়ে আসলেন আবু বকর সিদ্দিক রা. কে দেখতে। তিনি এসে পেলেন আবু বকর সিদ্দিক রা. আবারো জ্ঞান হারিয়েছেন। কিছুক্ষণ পর হুশ আসল৷ আবারো প্রথম কথা জিজ্ঞেস করলেন, প্রিয়নবী ﷺ কেমন আছেন?
ফাতেমা বিনতে খাত্তাব রা. বললেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ ভাল আছেন।
আবু বকর সিদ্দিক রা এঁর আম্মাজান বললেন, এখন তো তুমি নিশ্চিত হলে যে মুহাম্মদ ﷺ ভাল আছেন৷ এখন অন্তত তুমি কিছু খাও।
আবু বকর সিদ্দিক রা. বললেন, আল্লাহর কসম আমি তত সময় পর্যন্ত কিছু খাব না যত সময় পর্যন্ত না আমি নিজের চোখে দেখব আল্লাহর রাসূল ﷺ ভালো আছেন৷ তিনি ফাতেমা বিনতে খাত্তাব রা. কে জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসূল ﷺ এখন কোথায় আছেন?
তিনি বললেন, রাসূল ﷺ এখন দারুল আরকামে আছেন।
হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. তাঁর আম্মাজান ও ফাতেমা বিনতে খাত্তাব রা. কে বললেন, "আমাকে ধরে ধরে রাসূলুল্লাহ ﷺর কাছে নিয়ে যাও।" তখনো পর্দার আয়াত নাজিল হয়নি অবশ্যই। তাঁকে ধরে ধরে সেই রাত্রিবেলা দুজন নারী আল্লাহর রাসূল ﷺর কাছে নিয়ে গেলেন। তবেই হজরত আবু বকর সিদ্দিক রা. এঁর অন্তর শান্তি হলো৷
কী ত্যাগ ছিল তাঁদের ইসলামের জন্য। আর কী ভালোবাসা ছিল তাঁদের অন্তরে হুজুর রাসূলুল্লাহর ﷺ জন্য!
কৃতঃ সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আযহারী
Comments
Post a Comment