Skip to main content

কুরবানির হাট: প্রাসঙ্গিক কিছু কথা, করণীয় ও বর্জনীয়

 কুরবানির হাট: প্রাসঙ্গিক কিছু কথা, করণীয় ও বর্জনীয় 

লেখক:শেখ আহসান উদ্দিন



আমরা ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা তথা মুসলিম হিসেবে আমাদের প্রধান দুটি উৎসব রয়েছে,ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা।ঈদুল ফিতর এটা রমযানের একমাস সিয়াম সাধনা শেষে শাওয়াল মাসের ০১তারিখে উদযাপিত হয়।আর ঈদুল আযহা জিলহজ্জ মাসের দশ তারিখে হয়।মূলত পশু কুরবানির পটভূমিতেই এই ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়। এইভ পশু কুরবানির জন্য ইসলামে গরু,ছাগল,খাসি,পাঠা,ভেড়া, দুম্বা,উট,মহিষ ইত্যাদি জন্তু দিয়ে জবেহ ও কুরবানীর বিধান রয়েছে। তাই এই কুরবানীর পশু ক্রয় বিক্রয়ের জন্য বাংলাদেশ ও বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশে এবং অমুসলিম দেশে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় কুরবানীর পশুর হাট আমরা দেখতে পাই। বাংলায় একে কুরবানীর হাট,উর্দু ও হিন্দিতে কুরবানী মান্ডী,আরবীতে শাওক আল উদহিয়া বলে।


বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কুরবানীর পশুর হাট দেখা যায়। ঢাকায় কুরবানীর হাটের ইতিহাস অনেক পুরনো।মোঘল ও ব্রিটিশ শাসনামলের সময়ে ঢাকায় রহমতগঞ্জ,গাবতলীসহ পাঁচটি এলাকায় কুরবানীর হাট বসত।তখন লোকসংখ্যা কম ছিল।পরে ১৯৪৭ এর পরে পাকিস্তান আমলে ও ১৯৭১সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আস্তে আস্তে কুরবানীর হাটের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।এখন বর্তমানে ঢাকায় কুরবানীর হাটের সংখ্যাও শতাধিক।১৯৪৭ এর আগে পুরান ঢাকায় গেন্ডারিয়া,ধোলাইখাল,নয়াবাজার এসব এলাকায় কুরবানীর পশুর হাট ছিল না। পরে এসব এলাকায় কুরবানীর পশুর হাট এসেছে।ঢাকার বাইরে নারায়নগঞ্জ,গাজীপুর,কিশোরগঞ্জ,ফরিদপুর,ময়মনসিংহ,চট্টগ্রাম,কুমিল্লা,চাঁদপুর,সিলেট,রাজশাহী,বরিশাল,রংপুর ইত্যাদি জেলার কুরবানীর পশুর হাটের অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। একেক কুরবানীর হাটের কার্যক্রম ভিন্ন ভিন্ন দিনে শুরু হয়। অনেক  হাট জিলহজ মাসের চাঁদ উঠার দুই-তিন সপ্তাহ আগেই শুরু হয়,আবার অনেক হাট জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার দুই-তিন দিন আগেই শুরু হয়।আবার অনেক হাট জিলহজ মাসের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয়।মধ্যরাতে বিভিন্ন জাতের দেশী,বিদেশী কুরবানীর পশু হাটে আসতে থাকে।


তবে কুরবানীর হাটের ক্রেতাদের উপস্থিতিটা জিলহজ মাসের প্রথম দিন থেকে শুরু হয়।যারা কুরবানীর হাটে গরু ছাগল সরবরাহ করে বিক্রি করেন তাদেরকে বেপারী বলে।হাটে ক্রেতা সমাগম দেখা যায় ঈদুল আযহার চার পাঁচদিন আগে থেকে। কুরবানীর হাটের প্রচারণার জন্য ঈদের ২০দিন আগে থেকে মাইকিং ও পোস্টারিং শুরু হয়।"হাট হাট হাট এক বিরাট কুরবানির হাট "এই বাক্যে প্রচারণা চলে।পাকিস্তান,ভারত,আফগানিস্তান,ইন্দোনেশিয়া,মালয়েশিয়া,ব্রুনেই,ইরান,ইরাক,সৌদি আরব,সংযুক্ত আরব আমিরাত,কুয়েত,কাতার,ওমান,বাহরাইন,লেবানন,ইয়েমেন,জর্ডান,তুরস্ক,ফিলিস্তিন,সিরিয়া,মিশর,আলজেরিয়া,মরক্কো,আফ্রিকার বিভিন্ন মুসলিম দেশে কুরবানির হাট দেখা যায়। বাংলাদেশের ঢাকায় গেন্ডারিয়া-ধোলাইখাল হাট,নয়বাজার-রহমতগঞ্জ হাট,মতিঝিলের আরামবাগে উটের হাট,রাজারবাগে সুন্নতী জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকার হাট,মেরাদিয়া হাট,গাবতলী হাট,কেরানিগঞ্জ,হাজারীবাগ  ও ঠাটারিবাজার হাট ইত্যাদি ঢাকার জনপ্রিয় কুরবানীর হাট।

প্রতিটি কুরবানীর পশুর হাটে বেচাকেনা জমজমাট হয়ে উঠে।গত ৬-৭বছর আগে ই-কমার্স এর মাধ্যমে অনলাইনে কুরবানির পশু ক্রয়েরও ব্যবস্থা হয়েছে। তবে কুরবানির হাট সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগেরও শেষ নাই।কয়েকবছর আগে অভিযোগ এসেছে অনেক হাটে মাইকে লাউডস্পিকারে মিউজিক  বাজনা সহ গান ও মিউজিকসহ বিজ্ঞাপন বাজানোর।এগুলো খুবই দুঃখজনক।গত ২০১৬সালে গেন্ডারিয়ার কুরবানীর হাটসহ কয়েকটা হাটে এভাবে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার জন্য মাইকে মিউজিকসহ গান বাজানোর অভিযোগ এসেছিল(সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন)।অধিকাংশ হকপন্থী আলেম উলামাদের দৃষ্টিতে কুরবানির হাটে মিউজিকসহ গান বাজানো পবিত্রতা নষ্টের শামিল।আবার গতবছরও ২-৪টি হাটে এমন অভিযোগ এসেছিল।পাশাপাশি ঈদের আগে দিন যত ঘনিয়ে আসে ততই পশুর দাম বাড়তে থাকে।গতবছর ২০২০সালে বাংলাদেশ আওয়ামী উলামা লীগ নামের এক সংগঠন তাদের এক মানববন্ধনে কুরবানির পশুর হাটে মাইকে গান বাজানো বন্ধের দাবী জানিয়েছেন।


তারা কুরবানীর হাট একেবারে কমিয়ে ফেলার বিরোধিতাও করেছেন।তবে গত ২-৩বছর ধরে  এগুলো নিয়ে অনেক আলোচনা বিতর্ক হতে দেখা যাচ্ছে।গতবছর করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অনেক এলাকায় কুরবানীর হাট বন্ধের দাবীতে কতিপয় লোকজন মানববন্ধন করেছিল,অনেক সুশীল দাবীদারকে প্রিন্ট,ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ায় কুরবানীর হাট এবং কুরবানী নিয়েও অনেক বিব্রতকর প্রোপাগান্ডা অপপ্রচার করতে দেখা যায়।এগুলো খুবই দুঃখজনক। 


আমি প্রথম কুরবানীর হাটে গিয়েছিলাম ২০১৩ সালে (হিজরী ১৪৩৪)। গত ২০১৬(১৪৩৭ হিজরী)সালে পুরান ঢাকার ধূপখোলা গেন্ডারিয়া-ধোলাইখাল বানিয়ানগর কুরবানীর হাটের মাইকে মিউজিক গান বাজানোর মত বিব্রতকর কর্মকান্ড দেখা গেলেও পরে ২০১৭ থেকে এমনটা লক্ষ করিনি। 


কুরবানির হাটে করনীয়,বর্জনীয় ও পরামর্শ 

১.কুরবানীর হাটে নামাজের স্থান  রাখা উচিৎ।

২.দেশের সকল কুরবানীর পশুর হাটে ক্রেতা আকর্ষণ বা এজাতীয় অজুহাতে মাইকে বিজ্ঞাপন প্রচারণার আড়ালে মিউজিক গান বাজনা বাজানো থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

৩.তাকওয়ার জন্য মহিলা মেয়েলোকদের কুরবানীর পশুর হাটে যাওয়া থেকে বিরত থাকাই উত্তম। 

৪.চোর,ডাকাত,চাঁদাবাজ,অজ্ঞানপার্টি মলমপার্টিদের প্রতিহত করার জন্য কুরবানির পশুর হাটের সকল ইজারাদার ও বিক্রেতাদের সজাগ হওয়া উচিৎ। 

৫.অনলাইনে ওয়েবসাইটে কুরবানীর পশু ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়,ইসলামিক ফাউন্ডেশন  এবং  এদের কর্মকর্তাদের নজরদারি রাখা উচিৎ।  

৬.কুরবানীর পশুর হাটে তাকওয়া রক্ষার্থে অযথা ছবি তোলা ভিডিও রেকর্ড থেকে বিরত থাকা 

৭.কুরবানির পশুর হাট ও তদসংশ্লিষ্ট এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে হাত ধোয়ার কলের ব্যবস্থা ও  এটিএম বুথ বসানো হোক এবং 

৮.প্রিন্ট,ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়া তথা সংবাদপত্র,রেডিও,টিভি টেলিভিশন,নিউজপোর্টাল,ওয়েবসাইট ও ব্লগসাইটগুলোতে নজরদারি রাখা উচিৎ যেন কুরবানীর হাট,ঈদুল আযহা ও কুরবানী নিয়ে অযথা বিতর্ক সৃষ্টি বন্ধ হয়। 

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন (আমিন)

Comments

Popular posts from this blog

কাশফুল মাহযুব Kashful mahzub pdf

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কাশফুল মাহযুব হল হযরত দাতা বখশ হাজভেরী রহঃ এর অন্যতম গ্রন্থ । এর বাংলা হল মারেফতের মর্মকথা । বাংলায় প্রকাশ করা হয়েছে রশিদ বুক হাউজ । মূল বইটি ফারসি ভাষায় লিখিত । download this book in bangla : kashful mahzoob in bangla Kashful mahzoob is a book which is written by data ali hazveri rh.  Kashful Mahjoob  was originally written in Persian language by Hazrat Daata Ganj Bakhsh Ali Hajveri but then translated into many other languages as well including Urdu. Complete name of Hazrat Daata Sahab is ‘Abul Hassan Ali Ibn Usman al-Jullabi al-Hajveri al-Ghaznawi’. The book is a master piece in Islamic Sufi genre. Daata Ali Hajveri has written many books but this book has become a symbol in Sufi books. A famous saying about this book is ‘if you want to find a true murshad (spiritual guider) for you then read this book and you will definitely find one’. Download in english   https://ia601901.us.archive.org/21/items/KashfulMahjoobEn/KashfulMah...

মীলাদুন্নাবী (সা:) ও মিলাদ-কিয়ামের পক্ষে -বিপক্ষে দলিল ভিত্তিক বইসমূহ Books about mawlid and milaad

 মিলাদের বিপক্ষে ও পক্ষে দলিল ভিত্তিক বই সমূহ Books about mawlid and meelad আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সবাই ভাল আছ।আমরা অনেকে একটা বিষয়ে অনেক কিছু বলি। এটা নিয়ে অনেক কিতাব,ওয়াজ ও বাহাস হয়েছে। সে বিষয়টি হল মিলাদুন্নবী ও মিলাদ-কেয়াম।আমরা অনেকে এটার পক্ষে, অনেকে এটার বিপক্ষে। সেই বিষয়ে  আমরা অনেকে বলি এটি বিদাত।এই বিষয়ে কিছু কিতাবের pdf দেয়া হল মিলাদের পক্ষে : ১.মিলাদুন্নবী ও মিলাদ মাহফিল (নাইমুল ইহসান বারাকাতি,Barakati publication) Download ২.কুরআন হাদিসের আলোকে মিলাদ-কিয়ামের অকাট্য দলিল(মুস্তফা হামিদি,ছারছীনা) http://www.mediafire.com/file/ntw372p7138k142/ ৩.বসন্তের প্রভাত (আমিরে আহলেসুন্নাত, ইলিয়াস আত্তার কাদেরি,মাকতাবাতুল মদীনা) Download ৪.সিরাজুম মুনিরা(আমিমুল ইহসান রাহ:) download ৫.মৌলুদের মাহফিল ও কিয়াম(আলভী আল মালেকি আল মাক্কি রাহ:) download ৬.বারাহিনুল কাতিয়া ফি আমালিল মাওলিদ(কারামত আলী জৈনপুরী [রাহঃ] ৭. মু মুলাখখাছ-মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি download ৮.হাকীকতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী https://drive.googl...

Books of Shaykh abdul qadir gilani(rah;) বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রাহ:) এর কিতাব /বই ডাউনলোড করুন

Download in urdu               Books of Shaykh abdul qadir gilani (rah;)               শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) এর কিতাব                        বড়পীর শায়েখ আব্দুল কাদির জিলানী(রাহঃ) আল্লাহর বড় ওলি ছিলেন । তিনি                                         শরীয়ত,তরিকত,মারেফত,  তাসাউফ ও তাযকিয়া বিষয়ে অনেক কিতাব লিখেছেন । সেসব কিতাবসমূহের বাংলা ,ইংরেজী,আরবী ও উর্দু       অনুবাদের pdf নিচে দেয়া হল  ১.সিররুল আসরার Sirr ul asrar In Bangla      Download 1   in English  http://data.nur.nu/Kutub/English/Jilani_Sirr-al-Asrar-1---5.pdf in urdu    https://ia801309.us.archive.org/27/items/sirr-ul-asrar/sirr-ul-asrar.pdf ২.গুনিয়াতুত তালেবীন        ...