মুহাররম মাসে বিয়ে,প্রচলিত জারিগান,করনীয় বর্জনীয় প্রসঙ্গ
-শায়খ সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আযহারী
১। কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেন মুহাররাম মাসে, আশুরার সময়ে বিয়ে শাদী কিংবা অন্যান্য আনন্দ উদযাপন করা জায়েজ আছে কী?
প্রিয় পাঠক! এটা যার যার ভালোবাসা ও মনের অভিব্যক্তির বিষয়। আল্লাহ না করুন, আপনার পরিবারের ১ জন মাত্র সদস্য গাড়ি এক্সিডেন্টে আগস্ট মাসের কোন এক দিনে মারা গেলে আপনি পরের বছর এই দিনে এই মাসে পারতেন বিয়ে কিংবা আনন্দ উদযাপন করতে? কোন জীবনেও পারবেন না পরের বছর কেন! প্রতিবছর আগস্ট মাস আসলেই আপনার অটোমেটিক সেই শোক অন্তরে জাগ্রত হবে, আপনি এই মাসে আপনজন হারিয়েছিলেন৷ প্রিয়নবী ﷺর পরিবার কি আমাদের জন্য আমাদের নিজের পরিবার থেকেও অধিক ভালোবাসার নন (সূরা শুরা আয়াত নং ২৩, মুসলিম, হাদিস নং ৬১১৯-৬১২২, তিরমিজি হাদিস নং ৩২০৫)? আর প্রিয়নবীরﷺপরিবারের ১ জন না ১০ জন না ২০ জন না, মোট ২৩ জন সদস্য ও সরাসরি রক্তের সম্পর্ক ও ভক্ত মুরিদিনসহ সর্বমোট ৭২ জন আশুরার দিনে নির্মমভাবে শহীদ হয়েছেন এই উম্মতের নামধারী কিছু জালিমের হাতে। এখন আপনার ইচ্ছা আপনি এই মাসে কী করবেন! শরীয়তের কোন বিধিনিষেধ নেই মুহাররাম মাসে বিয়ে শাদী কিংবা আনন্দ উৎসব করতে। কাজেই এ ব্যাপারে ফতোয়া দেয়ার কিছু নেই।
২। জারীগান ও মুরছিয়া গাওয়া কী জায়েজ?
এই সময়ে ইমাম হোসাইন আ. সহ আহলে বায়তের সদস্যগণের জন্য অশ্রু বিসর্জন করি, শরীয়তসম্মতভাবে জারি বা মরসিয়া গাইতে চাইলে তাতেও কোন অসুবিধা নেই। সম্পূর্ণভাবে জায়েজ আছে বুখারির হাদিস অনুযায়ী৷
আহলে হাদিস ভাইদের অনুবাদকৃত এপ্স থেকে ওয়ার্ড বাই ওয়ার্ড দিচ্ছিঃ
রুবাই বিন্ত মুআব্বিয ইব্নু আফরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, আমার বাসর রাতের পরের দিন নবী ﷺ এলেন এবং আমার বিছানার ওপর বসলেন, যেমন বর্তমানে তুমি আমার কাছে বসে আছ। সে সময় আমাদের ছোট মেয়েরা দফ বাজাচ্ছিল এবং বদরের যুদ্ধে শাহাদাত প্রাপ্ত আমার বাপ-চাচাদের শোকগাঁথা গাচ্ছিল। তাদের একজন বলে বসল, আমাদের মধ্যে এক নবী আছেন, যিনি আগামী দিনের কথা জানেন। তখন রসূলুল্লাহ্ ﷺ বললেন, এ কথা বাদ দাও, আগে যা বলছিলে, তাই বল।(আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৬৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭০)
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫১৪৭
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD
‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী ﷺ আমার নিকট এলেন তখন আমার নিকট দু’টি মেয়ে বু’আস যুদ্ধ সংক্রান্ত গান গাইছিল। তিনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখলেন। এ সময় আবূ বকর (রাঃ) এসে আমাকে ধমক দিয়ে বললেন, শয়তানী বাদ্যযন্ত্র [১] (দফ্) বাজান হচ্ছে নবীﷺএর নিকট! তখন আল্লাহর রসূল ﷺতাঁর দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তাদের ছেড়ে দাও। অতঃপর তিনি যখন অন্য দিকে ফিরলেন তখন আমি তাদের ইঙ্গিত করলাম আর তারা বেরিয়ে গেল।
ফুটনোটঃ
[১] দফ্ এক প্রকার এক মুখো ঢোল।
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৯৪৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, IRD
কাজেই যুদ্ধে শহীদগণের জন্য শোকগাঁথা গাওয়া জায়েজ যদি এর সাথে অন্য কোন হারাম এলিমেন্ট যুক্ত না হয়। একে আরবিতে "রাছা" বলে যেখান থেকে মুরছিয়া শব্দের উৎপত্তি। এটা আরবের কালচার ছিল যাকে সুন্নাহতে এপ্রুভ করা হয়েছে।
৩।আশুরা মুহাররামে করণীয় বর্জনীয় কী?
সকল প্রকার শিরক (যেমনঃ কাগজ, কাঠ, বেত ইত্যাদি দিয়ে ঘোড়া বানিয়ে একে সেজদা করা, মুকাম বা পাঞ্জাতনের ঘর নামে ছোট ঘর বানিয়ে একে তাওয়াফ ও সেজদা করা। এগুলো কিছু অশিক্ষিত মানুষ করছে প্রতিবছর যার ভিডিও আমার কাছে আছে। এগুলো হারাম ও শিরক), কুসংস্কার (যেমনঃ টুপি পড়া যাবে না, সব্জিই খেতে হবে শুধুমাত্র এসব বাধ্যতামূলক করে দেয়া মানুষের উপর), বিদয়া'তী কাজকর্ম (যেমনঃ শরীরকে রক্তাক্ত করা, বুকে পিঠে আঘাত করা জারি গাওয়ার সময় ইত্যাদি) যা এই পবিত্র মাসকে ঘিরে, বিশেষ করে আশুরার দিনকে ঘিরে করা হয়, এসকল কিছু থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখার অবশ্যই চেষ্টা করি। কোন অতিরঞ্জিত বাড়াবাড়ি ও উগ্রবাদীতার সাথী অমি অধম অন্তত নই৷ আমরা যেন মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত না হই।
রোজা রাখি, নামাজ পড়ি, জিকির আজকার তাসবিহ তাহলিল, ইস্তেগফার পাঠ করি, দোয়া করি বেশি বেশি, কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করি। আর অবশ্যই বেশি বেশি করে দরুদ ও সালাতু সালাম পাঠ করি। আহলে বায়তের আলোচনা বেশি বেশি করে করি, কারবালার ইতিহাস আলোচনা করি এই দশদিন অন্তত৷ এ সংক্রান্ত আলোচনা শুনি ও বই পড়ি। ইমাম হোসাইন আ. সহ আহলে বায়তের সদস্যগণের জন্য অশ্রু বিসর্জন করি, শরীয়তসম্মতভাবে জারি বা মরসিয়া গাইতে চাইলে তাতেও কোন অসুবিধা নেই। সম্পূর্ণভাবে জায়েজ আছে বুখারির হাদিস অনুযায়ী যা আগেই দিলাম।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে আহলে বায়তের খাঁটি গোলাম হিসেবে কবুল করে নিন। আমিন।
Comments
Post a Comment