আমাদের এই পৃথিবীতে দেখি মুসলমানদের মাঝে বা ইসলামের মধ্যে অনেক ধর্মীয় দল উপদল ফিরকা দেখতে পাই।বিশেষ করে আকীদাগত ও আমলগত মতভেদের কারণে,মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে অনেক দল উপদলের জন্ম ও বিভক্তি লক্ষ্য করা যায়। আবার এর মধ্যে উপমহাদেশে আধ্যাত্মিক পীর দরবার প্রথাও দেখা যায়। তাদের মধ্যেও অনেক বিভক্তি দেখা যায়৷ অনেক পীর দরবারের অনুসারীরা কুরআন,সুন্নাহ,রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সাহাবায়ে কিরাম,আহলুলবাইত,তাবেয়ীন,ইমাম বুখারী রহঃ সহ হাদিসজগতের ইমাম মনীষি গন,ইমাম আবু হানিফা রহঃ সহ চার মাযহাবের ইমামদের মতাদর্শকে বিশ্বাস করে চলেন,বিশেষ করে ইসলামের সঠিক আকীদা মতাদর্শ কে আকড়ে ধরা,নামায,রোজা,কুরআন তিলাওয়াত,যাকাত,হজ ও উমরা,দোয়া দরুদ জিকির আজকার,সৃষ্টির সেবা করা ইত্যাদি নেক আমলের পক্ষে উৎসাহদান করা,কুফর,শিরক,বিদাত,কুসংস্কার,ভ্রান্ত আকীদা মতাদর্শ থেকে নিরুৎসাহিত করণ ইত্যাদি করে থাকেন। আবার অনেক পীর দরবারের অনুসারীদের ক্ষেত্রে এর বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা যায়৷ অনেক পীর দরবারের অনুসারীরা কুরআন সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক ভ্রান্ত আকীদা মতাদর্শের অনুসরণ করে
আমাদের বাংলাদেশে বর্তমান সুরেশ্বরী,দেওয়ানবাগী,কুতুববাগী,সদর চিশতী চুনকুটিয়া,জাহাঙ্গীর বেঈমান সুরেশ্বরী ফকিরনী,চন্দ্রপাড়া,বর্তমান আটরশি অনুসারীরা,বর্তমান মাইজভান্ডারির কতিপয় পীর খাদেম,রাজারবাগী দিল্লুর রহমান,কাগতিয়ার বর্তমান পীর,চট্টগ্রামের স্বঘোষিত ইমাম হারুন হায়াত,ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দৌলতবাড়ী,কালিয়াপুরী,কেল্লা বাবা/কেল্লা শাহের অনুসারীরা,কথিত ল্যাংটা বাবার অনুসারীরা,মানিকগঞ্জের গড়পাড়া ইমাম বাড়ী পীর দরবারের অনুসারীরা বা এজাতীয় অনেক পীর ও তাদের অনুসারী আছে যাদের অনেক বিতর্কিত আকীদা মতাদর্শ দেখা যায়। এদের অনেককেই বাংলাদেশের অধিকাংশ আলেম উলামা গণ ভন্ডপীর ও অনেককেই ফিতনাবাজ পীর বলে আখ্যায়িত করেছেন। অত্র প্রবন্ধ পোস্টে দেওয়ানবাগী ও সদর উদ্দিন চিশতী এবং তাদের অনুসারীদের আকীদা মতাদর্শ কুরআন সুন্নাহর আলোকে কতটুকু যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক এবিষয়ে আলোকপাত করা হল।
একনজরে বিতর্কিত দেওয়ানবাগী পীরে জন্ম পরিচয়, কর্মজীবন ও “সুফী সম্রাট” হয়ে উঠার গল্প:আসল নাম মাহবুব এ খোদা। সর্বস্তরে দেওয়ানবাগী নামে পরিচিত। জন্ম ২৭ শে অগ্রহায়ন ১৩৫৬ বাংলা মোতাবেক ১৪ ই ডিসেম্বর ১৯৪৯ ইংরেজী। জন্মস্থান ব্রাক্ষনবাড়ীয়া জেলার আশুগঞ্জ থানাধীন বাহাদুরপুর গ্রামে। পিতা সৈয়দ আব্দুর রশিদ সরদার। মাতা জোবেদা খাতুন। ছয় ভাই দুই বোন। ভাইদের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ। নিজ এলাকার তাল শহর কারিমীয়া আলীয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজেল পর্যন্ত পরাশুনা করে ছাত্রজীবনের ইতি টানেন ।
১৯৭১ সালে দেওয়ানবাগী মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন বলে জানা যায় । স্বাধীনতার পর তাঁর ৩ নং সেক্টরের কমান্ডার শফিউল্লাহ সাহেবের সুপারিশে সেনাবাহিনীর ১৫ নং বেঙ্গল রেজিমেন্টে ইমামতির চাকুরী নেয়। ফরিদপুরের চন্দ্রপাড়া দরবারের প্রতিষ্ঠাতা আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরীর হাতে বাইয়াত গ্রহন করেন। পরে স্বীয় মুর্শিদের কন্যা হামিদা বেগমকে বিয়ে করেন। এ সুবাদে শশুরের কাছ থেকে খিলাফত লাভ করেন। তার কিছুদিন পর নারায়নগঞ্জের দেওয়ানবাগ নামক স্থানে আস্তানা গঠন করেন এবং নিজেকে “সুফী সম্রাট” হিসেবে পরিচয় দিয়ে শোহরত লাভ করতে থাকেন।
এরপর তিনি মতিঝিলের ১৪৭ আরামবাগ ঢাকা-১০০০ তে “বাবে রহমত” নামে আরেকটি দরবান স্থাপন করেন। এখান থেকে তাঁর তত্ত্বাবধানে এবং নির্দেশে সুফী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ নামে একটা প্রতিষ্ঠান চলে এবং সেখানে বাবে রহমত মূখপত্র সাপ্তাহিক দেওয়ানবাগ,মাসিক “আত্মার বাণী” সহ বেশ কয়েকটি পত্রিকা ও "তাফসীরে সূফী সম্রাট"(৮ খন্ড),"আল্লাহ কোন পথে","রাসূল(সাঃ) কী সত্যিই গরীব ছিলেন"," শান্তি কোন পথে","মুক্তি কোন পথে","আল্লাহকে কি সত্যিই দেখা যায় না?","মানতের নির্দেশিকা" "এজিদের চক্রান্তে মোহাম্মদী ইসলাম"," রাহমাতুল্লিল আলামীনের গৌরবময় জীবনকথা", "মোহাম্মদী ইসলামের ওজিফা" সহ এজাতীয় অনেক গ্রন্থ বই পুস্তক প্রকাশিত হয়েছে৷দেওয়ানবাগীর পীর ও তার অনুসারী মুরিদ ভক্তরা নিজেদেরকে মোহাম্মদী ইসলাম এর অনুসারী বলে দাবী করেন।মূলত ১৯৮০-৯০ এর দশকে এই দেওয়ানবাগীর উত্থান হয়। তারা একসময় নারায়নগঞ্জে ও পরে ঢাকার মতিঝিলের আরামবাগে প্রতিবছর বিশ্ব আশেকে রাসূল সম্মেলন নামে তাদের বাৎসরিক অনুষ্ঠান জমায়েত হত,পাশাপাশি ১০ মহররম পবিত্র আশুরায়,১২ রবিউল আউয়াল,১৫ শাবান শবেবরাত ও ২৭ রমজান শবে কদরেও তারা আশেকে রাসূল সম্মেলন মাহফিল করে থাকে। একসময় ২০১০-২০১২ সালে টেলিভিশনে বা টিভিতে দেওয়ানবাগীর অনুসারীরা "আশেকে রাসূল জলসা"/" আশেকে রাসূল মজলিস" নামে টিভি অনুষ্ঠান সম্প্রচারের মাধ্যমে তাদের মতাদর্শ প্রচার করতো৷গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ এ দেওয়ানবাগীর পীর মাহবুবে খোদা রাজধানী ঢাকায় মারা যায়। তাদের অনেক বিভ্রান্তিকর ও বিতর্কিত আকীদা মতাদর্শ লক্ষ করা যায়।তারা গান বাজনা ও মাজারে সিজদাকে জায়েজ বৈধ মনে করে৷
সদরুদ্দিন আহমেদ চিশতীর জন্ম কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া গ্রামে । তার পিতার নাম মৃত কাজীম উদ্দিন আহমেদ ।সদর উদ্দিন চিশতী,তার পিতা ও আত্নীয়স্বজনরা তারা একসময় ফেনীর দাগনভুঞার বারাহিগুনী শাহপীর চিশতী পীরের অনুসারী ছিল। ১৯৪২ সালে সদর উদ্দিন চিশতী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন । তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেরানী হিসেবে ও বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং কলকাতা হাই কোর্টেও চাকুরি করেছেন । পাক ভারত বিভক্তির পর ১৯৪৮ সালে সদরুদ্দিন সুফী মতবাদে নিজেকে নিয়োজিত করেন । ধর্মীয় মতবাদ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে ইসলাম সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিয়েছেন । তার লিখিত “ ত্রিত্ববাদ ” বইতে ‘ পরম পিতা আল্লাহ , তার পুত্রগণ এবং পবিত্র আত্মা বা পবিত্র ভূত ' প্রভৃতি আপত্তিকর বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন যা ধর্মের প্রতি সরাসরি আঘাত হানে । কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ায় রয়েছে তার একটি বিরাট আস্তানা ।সেই আস্তানার নাম হল "ইমামিয়া চিশতীয়া নেজমীয়া দরবার"। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি ঐ আস্তানায় কিছু সংখ্যক ভণ্ডদের নিয়ে সব সময় গাঁজার আসর জমিয়ে আসছিলেন । সারারাত ধরে এ আস্তানায় চলত গাজার আসর আর হৈ চৈ চেচামেচি । সব সময় আস্তানায় সুন্দরী মেয়েদের আনাগোনা সহ অসামাজিক কার্যকলাপ চলত বলেও অভিযোগ করেছে এলাকাবাসী ।সুফিবাদ, তরিকত ও মারিফতের নামে বিভিন্ন উল্টাপাল্টা আপত্তিকর মতাদর্শের জন্য সদর উদ্দিন চিশতী বিতর্কিত ও সমালচিত। সদর উদ্দিন চিশতী মোট ২৫-২৭ টির মত বই গ্রন্থ লিখেছে যা ইমামিয়া চিশতীয়া পাবলিশার,সদর প্রকাশনী ও র্যামন পাবলিকেশন্স প্রকাশ করেছে।সে বইগুলো হল ১.কোরান দর্শন ১ম খন্ড ২.কোরান দর্শন ২য় খন্ড ৩.কোরান দর্শন ৩য় খন্ড ৪.কেবলা ও সালাত ৫.মাওলার অভিষেক ও ইসলাম ধর্মে মতভেদের কারণ ৬.সিয়াম দর্শন ৭.মসজিদ দর্শন ৮.অখন্ড কোরান দর্শন ৯.Philosophy of Quran(কোরান দর্শনের ইংরেজি অনুবাদ) ১০.ইসলামের মৌলিক বিধান ১১.দোয়া গঞ্জুল আরশ ও ১৪ মাসুমিনদের প্রার্থনা ১২.সুরা বাকারার তাফসির ১৩.আহলুলবাইতের পবিত্র ভাষণ ১৪.আহলেবাইতের পরিচয় ও সমাজ এতিমের ১৫.কোরবানী ১৬.ত্রিত্ববাদ ১৭.চিশতীয়া শাজরা শরীফ ১৮.কোরান দর্শন ১৪ সুরা ১৯.কুরআনে সাংকেতিক অক্ষর এর পরিচয় ২০.Islam Against Inequity and Moududis Corruptions ২১.ছয় সুরা ২২.এগার সুরা ২৩.সুরা রহমান ও ওয়াকেয়া ২৪.প্রবন্ধ সংকলন ২৫.সংকলিত বানী ২৬.মুসলমানদের নিকট সরোজ কুমারের প্রশ্ন ইত্যাদি।
ইমামিয়া চিশতীয়া নেজামিয়া সংঘ,তরিকতে আহলেবাইত বাংলাদেশ ও হেরাবন সংঘ নামে তাদের তিনটি সংগঠন আছে।সদর চিশতী,তার ছেলে আনোয়ার আহমেদ চিশতী ও তার অনুসারীদের বইসমূহে অসংখ্য বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা পাওয়া যায়৷ ঢাকার বাংলাবাজার,নীলক্ষেত মার্কেটসহ অনেক বইয়ের মার্কেটে দোকানগুলোতে এবং দেশের অনেক মাজারে ও পীরের দরগায় সদর উদ্দিন চিশতী ও তার অনুসারীদের বইপুস্তক ক্রয়বিক্রয় হতে দেখা যায়। তাদের অনেক ভ্রান্ত আকীদা মতাদর্শ রয়েছে৷ বিশেষ করে তারা সুফিবাদ ও মারেফতের নামে শিয়া ও বিদাতী মতবাদ প্রচার করছে৷ তাদের ভ্রান্ত আকীদা মতাদর্শ ও এর খন্ডন দেয়া হল।
১.সদরুদ্দীন আহমাদ চিশতী তার “ ত্রিত্ববাদ ” নামক একটি ছোট বইয়ের ১ নং পৃষ্ঠায় লিখেছে যে , “ ত্রিত্ববাদ ” হইল স্বর্গীয় সকল ধর্ম বিধানের মূল উৎস । প্রকৃত “ ত্রিত্ববাদ " হইল ( ১ ) পরম পিতা আল্লাহ ( ২ ) তাহার পুত্রগণ এবং ( ৩ ) পবিত্র আত্মা বা পবিত্র ভূত । পরমপিতা আল্লাহর পরিচয় দিতে গিয়ে উক্ত “ ত্রিত্ববাদ ” বইয়ের ৩ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে , বিশ্বের সমগ্র মানব জাতির জন্য মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হইলেন পরম পিতা “ আল্লাহ ” GOD THE FATHER বিশ্বের সকল মোর্শেদ তার সাহেব তথা সম্যক গুরুগণ সবাই তাহার পুত্র ।(নাউজুবিল্লাহ)
খন্ডন: আমরা জানি আল্লাহ এক, তার কোন শরীক নেই । এ কথার প্রমাণে পবিত্র কুরআন এবং হাদীস শরীফে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে । যেমন কুরআনে এসেছে "আল্লাহ এক,তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই । তিনি জীবিত এবং সবকিছুর ধারক ," ( সূরা বাকারা , আয়াত নং -২৫৫ )। হযরত রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমায়েছেন , ইসলাম ধর্মের ৫ টি স্তম্ভ আছে। ( ১ ) আল্লাহ ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল ( ২ ) নামাজ কায়েম করা ( ৩ ) জাকাত প্রদান করা ( 8 ) হজ্জ করা ( ৫ ) রমযানে রোযা রাখা ( সহীহ বুখারী , ১/৬৭)
কুরআনে সুরা ইখলাসের আলোকে আল্লাহর কোনো সন্তান নাই৷ পবিত্র কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হল যে , আল্লাহর কোন সন্তান নেই ( কারো সন্তান নন) । সুতরাং যে ব্যক্তি এমন আকিদা পোষণ করে যে , আল্লাহর সন্তান আছে সে মুরতাদ ,বেঈমান ।
২.নামাজ প্রসঙ্গে সদরুদ্দীন আহমাদ লিখিত আরেকটি বই , “ কেবলা ও নামাজ উন্ড কেবলা ও নামাজ নামক বইয়ের ৩৬ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন , আমাদের অনেকেই নামাজ সম্বন্ধে বড় রকমের একটা ভুল ধারণা পোষণ করে । তারা মনে করে , কোরআনে একই নামাজের জন্য ৮২ বার তাগিদ দেওয়া হয়েছে । ইহা একটি মারাত্মক ভুল কথা । উত্তম কোন পুস্তক এই রূপ হইতে পারেনা যাতে একই কথার পুনরাবৃত্তি এতবার করা হবে । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ অস্বীকার করে সে উক্ত ' কেবল ও নামাজ গ্রন্থের ভূমিকায় ২য় পৃষ্ঠায় লিখেছে যে ,"সালাত বলতেই দায়েমী সালাত বুঝায় কোরআনে পাঁচ বা ছয় বারের ওয়াক্তিয়া নামাজের উল্লেখ নাই । খণ্ডখণ্ড পাঁচ বেলা নামাজ কোরআনে অগ্রাহ্য ।"উক্ত বইয়ের ৩৭ পৃষ্ঠায় লিখেছে , "যারা সর্বদা অনুষ্ঠান হইতে ভাবের অংশটুকু বাদ দিয়া সালাতের নামে নামাজ পালন করিয়া থাকে তাহারা মোনাফেক এবং পরিণামে সম্পূর্ণ রিয়াকার হইয়া পড়ে । এর কারণ শুধু অঙ্গভঙ্গি সালাত নয়'(আস্তাগফিরুল্লাহ)
খন্ডন: আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআন মজিদে ঘোষণা করেছেন সালাত/নামাজ কায়েম কর । অতঃপর হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাম এর মাধ্যমে নামাজ কত ওয়াক্ত , কত রাকাআত , কিভাবে পড়তে হবে তার শিক্ষা দিয়েছেন । এমনকি হযরত জিব্রাইল আ . কে পাঠিয়ে নামাজ পড়িয়ে নামাজের ওয়াক্ত কত রাকাআত কিভাবে পড়তে হবে এর সবকিছু শিক্ষা দিয়েছেন । মনে রাখতে হবে হাদীসও ওহী ।
৩.সদর উদ্দিন চিশতীর মাওলার অভিষেক ও ইসলাম ধর্মে মতভেদের কারণ বইয়ের ২২ নং পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে- “রাসূলুল্লাহর লিখিত কোরআন ছাড়াও হযরত আবু বকর একখানি কোরআন লিখাইয়া রাখিয়াছিলেন যাহা তিনি পাঠ করিতেন। তাহার মৃত্যুর পর হযরত ওমরও ঐ কোরআন পাঠ করিতেন। হযরত ওমরের মৃত্যুর পর উক্ত কোরআন তাহার কন্যা হাফসার নিকট গচ্ছিত ছিল। ----- মাওলা আলীর স্বহস্ত্বে লিখিত কোরআন, যাহা তিনি নাযেলের ধারা অনুসারে লিখিয়াছিলেন। যাহাতে তাহার স্বাক্ষরও ছিল। ------ খেলাফতী কোরআন (হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু কোরআন সংকলন বোর্ডের মাধ্যমে প্রখ্যাত ওহী লেখক হযরত যায়েদ ইবনে ছাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু এর নেতৃত্বে সর্ব প্রথম কোরআনের যে পাণ্ডুলিপি রচনা করেন) সংকলন করার সময় মাওলা আলী তাহার নিজস্ব লিখিত পরিপূর্ণ কোরআন লইয়া কোরআন বোর্ডের নিকট হাজির হইয়াছিলেন। কিন্তু তাহা হইতে উহা গ্রহণ করা হয় নাই। কারণ খেলাফতের এই প্রকাশনা আসলে মাওলা আলীর শাসনাধিকারের বিরুদ্ধেই সাজাইয়া লেখা হইয়াছিল।----- কোরআনে মাওলা আলীর নাম একবারও উল্লেখ করা হয় নাই। মাওলা আলীর নাম কোরআনে বহু বার উল্লেখিত ছিল। --- রাসূলের ইন্তেকালের প্রায় ২১ বৎসর পড়ে খেলাফত কোরআনের রাষ্ট্রীয় প্রকাশনা সংকলন করেন। এত বিলম্ব করিয়া প্রকাশ করার অন্যতম প্রধান একটি কারন ছিল মাওলাইয়াতের বিরুদ্ধে এবং আলে রাসুলের বিরুদ্ধে তাহাদের এই প্রকাশনাকে সাজাইয়া লওয়া। কি বাদ দিতে হইবে এবং কেমন করিয়া সাজাইতে হইবে ইত্যাদি নানারূপ বিষয় ছিল তাহাদের চিন্তার বিষয়। ক্ষমতা এবং পরিবেশ সৃষ্টি করিয়া উপযুক্তভাবে উহার প্রকাশ পরিচালনা করা, যাহাতে জনমতে কোনরূপ বিদ্রোহ প্রকাশ না পায়।” (মাওলার অভিষেক ও ইসলাম ধর্মে মতভেদের কারন-২২-২৩পৃঃ)উক্ত গ্রন্থের ৩৪ পৃঃ আরো উল্লেখ করেছেন, “ইমাম বাকের আলাইহিস সালাম বলিয়াছেন, তিন শতের উপর কোরআনের বাক্য “তাহরীফ” অর্থাৎ বদল করা হইয়াছে। যাহা আহলে বাইতের শানে ছিল”।উক্ত গ্রন্থের ৪৭ পৃঃ আরো উল্লেখ করেছেন, “মাওলার নাম এবং তাহার প্রশংসার প্রায় সকল কথাই কোরআন হইতে ফেলিয়া দেওয়া হইয়াছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়াছেন, আলী যেদিকে মোড় নেয় আল্লাহর দ্বীনও সেদিকেই মোড় নেয়। মোট কথা আলীই রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলের হাক্বিকতের চুরান্ত প্রকাশ।"
উক্ত গ্রন্থের ১৪১ পৃঃ আরো উল্লেখ করেছেন, “কোরআনের সুরাগুলির শানে নুযুল এবং প্রয়োজনবোধে কোন কোন সূরার অবতীর্ণ হওয়ার স্থান পরিবর্তন করিয়া সম্পূর্ণ মিথ্যার উপর রাজকীয় তাফসিরের ভিত্তি স্থাপন করা হইয়াছে। এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনেক অলীক কাহিনী এবং মিথ্যা ঘটনা চক্রের অবতারণা করিয়া কোরআনের সঠিক অর্থকে চাপা দেওয়া হইয়াছে।”(লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)
খন্ডন: এগুলো সবই মনগড়া কথা,এগুলো রাফেজী শিয়া ও ইসমাইলী শিয়াদের বানানো ভিত্তিহীন কথা।যারা এসব কথাবার্তায় বিশ্বাস করে তারা পথভ্রষ্ট।
৪.যাকাত ও হজ বিষয়ে সদর উদ্দিন চিশতী তার রচিত কোরান দর্শন(১) এর ভূমিকাতে লিখেছেন "মানবীয় আমিত্বের উৎসর্গের নামই যাকাত । বস্তুগত কোন দানকে কোরআনে যাকাত বলা হয় নাই । মনের মধ্যে মহা শূন্য ভাব জাগিয়া উঠাই যাকাত ।" উক্ত যাকাত সম্পর্কে আরো জঘন্যতম মন্তব্য করে ইমামীয়া চিশতীয়া সংঘ থেকে প্রকাশিত সদরুদ্দীন চিশতী কর্তৃক অনুমোদিত আ : রাজ্জাক কর্তৃক লিখিত ' লোকোত্তর দর্শন ও পুরুষোত্তম নজরুল ' নামক বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে , “ বস্তু মোহ থেকে মনকে পূর্ণভাবে খালি করার নাম যাকাত । মানবীয় আমিত্বের উৎসর্গের নাম যাকাত , আমিত্বে “ লা ” অবস্থার নাম যাকাত , মনের মাঝে মহা শূন্য ভাব জাগিয়া উঠার নাম যাকাত । বস্তুগত কোন দানকে কুরআনে যাকাত বলা হয় নাই । হযরত উমর প্রবর্তিত শতকরা আড়াইভাগ বস্তুগত দানকে যাকাত বলা চলে না । ইহাকে একটি রাষ্ট্রীয় কর ব্যবস্থা বলা যেতে পারে । কুরআনের যে সাম্যের সুর তাহা এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যহত হয় । এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ধনতাস্তান্ত্রিক বুর্জোয়া ও পেট বুর্জোয়া শ্রেণীর লালন ও বর্ধন এর একটি পরিষ্কার গন্ধ পাওয়া যায় ।"(নাউজুবিল্লাহি মিন যালিক)।হজ বিষয়ে একই বইয়ের ৩৩ পৃষ্ঠায় মুসলমানগণ মক্কা শরীফে গিয়ে পবিত্র কাবা শরীফের তাওয়াফের মাধ্যমে যে হজ্জ পালন করে , তাকে অস্বীক্লার করে লিখা হয়েছে যে , হজ্জ দুই প্রকার , “ হজ্জে উমরা ও হজ্জে আকবর হল গুরু বা মোর্শেদের জীবনদর্শনে যখন কোন সাধক একাত্ম হতে পারে তখন তাই হয় উমরা হজ্জ এবং গুরু বা মোর্শেদের তা'লীমের মাধ্যমে সালাত নামক পদ্ধতি অবলম্বন করে । পরিণতিতে গুরুর জীবন দর্শন যখন নিজ জীবনে হাসিল করতে পারে অর্থাৎ আত্মদর্শন হয় তখন তাই হয় আকবরী হজ্জ বা শ্রেষ্ঠ হজ্জ ।"(লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)
খন্ডন: আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন "আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো ও যাকাত দাও এবং রুকূ’কারীদের সাথে রুকূ করো " (সুরা বাকারা আয়াত ৪৩)।
হাদিসে এসেছে, "আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর আবূ বাকর (রাঃ) খলীফা হিসেবে নিযুক্ত হন। তখন আরবের কিছু গোত্র কুফরী করলো। ‘উমার (রাঃ) আবূ বাকর (রাঃ)-কে বললেন, আপনি এ লোকদের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন? অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষণ না তারা বলে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে, তার জান-মাল আমার থেকে নিরাপদ। তবে আইনের বিষয়টি ভিন্ন এবং তার প্রকৃত বিচার মহান আল্লাহর উপর ন্যস্ত’’।তখন আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ শপথ! যে ব্যক্তি সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে আমি অবশ্যই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। সম্পদের হক/অধিকার হলো যাকাত। আল্লাহর শপথ! যদি তারা আমাকে একটি রশি দিতেও অস্বীকৃতি জানায় যা তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দিতো, তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি বুঝতে পারলাম যে, মহান আল্লাহ আবূ বাকরের হৃদয়কে যুদ্ধের জন্য উম্মুখ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি বুঝতে পারলাম যে, এটাই হাক্ব ও সঠিক" (সুনানে আবু দাউদ,যাকাত অধ্যায় )।হজ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন "আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব ওমরাহ পরিপূর্ণ ভাবে পালন কর।" (সুরা বাকারা আয়াত ১৯৬)।এপ্রসঙ্গে কুরআনে আরো এসেছে যে "তার মধ্যে প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বিদ্যমান রয়েছে, মাকামে ইবরাহীম উক্ত নিদর্শনসমূহের অন্যতম। আর যে তার মধ্যে প্রবেশ করে সে নিরাপত্তা প্রাপ্ত হয় এবং আল্লাহর উদ্দেশে এই গৃহের (কাবা শরীফ)হাজ্জ করা সেই সব মানুষের কর্তব্য যারা সফর করার আর্থিক সামর্থ্য রাখে" (সুরা আলে ইমরান আয়াত ৯৭)। আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন-"হে মানবসকল! আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ্ব ফরয করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্ব করো। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! প্রতি বছর কি হজ্ব করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করল। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তা (প্রতি বছর হজ্ব করা) ফরয হয়ে যেতো, কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হতো না।"(সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৩৭ (৪১২); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১০৬০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৭০৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫০৮; সুনানে নাসায়ী ৫/১১০)।ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন-যে ব্যক্তি বায়তুল্লায় হজ্ব করার সামর্থ্য রাখে, তবুও হজ্ব করে না সে ইহুদী হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খৃস্টান হয়ে তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই।-তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৫৭৮
৫.দরুদ শরীফ প্রসঙ্গে সদর উদ্দিন চিশতী তার কেবলা ও নামাজ গ্রন্থে ৪২ পৃষ্ঠায় সুরা আহযাবের ৫৬ নাম্বার প্রসঙ্গে লিখেছেন "আল্লাহ তার ফেরেশতাদের নিয়ে রাসুলের প্রতি আশীর্বাদ করেছেন"
খন্ডন: এটা সম্পূর্ণ বেয়াদবীপূর্ণ কথা৷ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন "নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রশংসা করেন এবং তার ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দরুদ প্রেরণ করেন।হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর উপর সালাত পাঠ কর এবং তাকে যথাযথ ভাবে সালাম জানাও।"(সুরা আহযাব,আয়াত ৫৬) এর আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে মাআরিফুল কুরআন গ্রন্থে এসেছে "ইমাম শাফেয়ী রহঃ ও আহমদ ইবনে হাম্বল রহঃ এর মতে রাসুল সাঃ এর প্রতি দরুদ পড়া ওয়াজিব "।
হাদিসে এসেছে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘যে আমার উপর একবার দরূদ পড়বে; বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাজিল করবেন।’ (মুসলিম, তিরমিজি)।হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর বক্তব্যে তা সুস্পষ্ট। তিনি বলেন- ‘যে পর্যন্ত তুমি তোমার নবির উপর দরূদ না পড়বে, ততক্ষণ তোমার দোয়া আসমানে যাবে না। আসমান-জমিনের মাঝে তা ঝুলে থাকবে।’
৬.সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী ও তার অনুসারীরা বিভিন্নভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পবিত্র কুরআনের নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থসমূহ,সহীহ বুখারী সহীহ মুসলিমসহ সিহাহ সিত্তার হাদিস গ্রন্থসমূহ,ইমাম ইবনে কাসির রহঃ,ইমাম নববী রহঃ থেকে শুরু করে বিশ্ববিখ্যাত নির্ভরযোগ্য মুফাসসির,মুহাদ্দিস,ফকিহ,ইমাম,আলেম উলামায়ে কিরাম,মুফতিদের বিরুদ্ধে কটুক্তি ও আপত্তিকর কথা বলতে দেখা যায় । সদর উদ্দীন চিশতী কর্তৃক লিখিত “কোরান দর্শন" এর শেষ দিকের খন্ডগুলোর ভূমিকার ১ম পৃষ্ঠায় বর্তমান পৃথিবীর সকল নির্ভরযোগ তফসীর গ্রন্থগুলিকে মিথ্যা এবং দুনিয়ার সমস্ত ওলামায়ে কেরামকে মুর্খ , অন্ধ মিথ্যুক হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেছে , "কোরানের সম্পূর্ণ মিথ্যা ব্যাখ্যা জগতের ধর্মীয় সাহিত্য ভরপুর হইয়া গিয়াছে । এই মিথ্যা ধর্মীয় সাহিত্য পাঠ করিয়া আবার অসংখ্য তথাকথিত আলেম বা শিক্ষিত সমাজ তৈয়ারী হইতেছে ।আগাগোড়াই একটা মিথ্যার প্রবাহ । এই মিথ্যা দিয়াই জগত চলিতেছে । সূত কি , জগত জানেনা ।এমতাবস্থায় জগতজোড়া আলেম সমাজই মিথ্যা বলিয়াই যাইতেছে , লিখিয়াও যাইতেছে এবং যেহেতু মিথ্যার ধারক বাহক এবং প্রচারক
এই আলেম সমাজ সমাজের , রাষ্ট্রের এবং বিশ্বের নেতৃত্বে আসীন রহিয়াছেন সেহেতু বিশ্বের মানুষকে তাহারা ছলে বলে কৌশলে মিথ্যার অতল তলে ডুবাইয়া রাখিয়াছে । ইহাদেরকে সত্যের আলো দেখানোর কোন ব্যবস্থাই নাই । জগতের মানুষ মিথ্যার মধ্যে জন্ম গ্রহণ করে , মিথ্যাতে জীবন অতিবাহিত করে এবং মিথ্যাতেই মৃত্যুমুখে পতিত হয় । মিথ্যার সেই ধারক - বাহক আলেমসমাজ মানুষকে কাল্পনিক স্বর্গে পাঠায় এবং তাদেরকে না মানিলে কাল্পনিক নরকে পাঠায় অথচ এই অদ্ধ মূর্খ আলেমসমাজ স্বর্গ বা নরকের চিহ্ন মাত্র দেখিল না । এই অসহায় মনুষ্য নামধারী জীবগুলি মিথ্যার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করার কারণে অনন্তকাল ধরে শুধু নরকেই প্রবেশ করিয়া আসিতেছে , যদিও ইহা তাহাদের বোধগম্যের বাহিরে । এই অন্ধ , বধির এবং বোবা মনুষ্য সমাজে কোরানের সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া কি রকম তাহাও একটি চিত্তার বিষয় কোরআনের সঠিক ব্যাখ্যা মূলতঃ মোহাম্মদ এবং মোহাম্মদের বংশধর ছাড়া কাহারও পক্ষে একেবারেই অসম্ভব ।"(আস্তাগফিরুল্লাহ)
খন্ডন: যারা এজাতীয় কথাবার্তা বলে তারা ১০০% পথভ্রষ্ট।এসব কথাবার্তাও একধরনের প্রচন্ড কুফরির শামিল৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন , "তোমাদের ছোট ব্যক্তির উপর আমার মর্যাদা যেমন , আবেদের চেয়ে আলেমের মর্যাদা ঠিক তেমন ।"
৭.সদর. চিশতি কর্তৃক রচিত “মাওলার অভিষেক ইসলাম ধর্মে মতভেদের কারন” গ্রন্থের ৭১পৃষ্ঠায় ইমাম বুখারী রহঃ ও ইমাম মুসলিম রহঃ প্রসঙ্গে লিখেছেন- “খেলাফতের ইতিহাস এবং খলিফাদের জীবনী লেখকগণ যাহা কিছু লিখিয়া থাকেন তাহার বেশির ভাগ কথাই মিথ্যা হইয়া থাকে। ইহার কারন, তাহারা তথা কথিত বিশিষ্ট্য মুহাদ্দিসগনের লিখিত হাদিস গ্রন্থগুলিকে প্রামাণ্য দিলিলরূপে গ্রহণ করিয়া থাকেন যেমন, “মুসলিম ও সহিহ বুখারী” ইত্যাদি। অথচ তাহারা ঐ সকল হাদিস গ্রন্থের সত্যাসত্য বিচারে একেবারেই অক্ষম। খেলাফতের সমর্থনে মাওলা আলীর বিপক্ষে শত শত মিথ্যা হাদিস বুখারী ও মুসলিম (রহমাতুল্লাহ আলাইহিমা) রচনা করিয়া গিয়াছেন” (নাঊযুবিল্লাহ) উক্ত গ্রন্থের ১৪৫ পৃঃ আরো লিখা হয়েছে “আব্বাসী রাজত্বকালে ইমাম সাহেবদের প্রকাশিত ব্যাখ্যা যাহা মৃয়মান অবস্থায় সমাজে তখনও বাঁচিয়া ছিল তাহা সম্পূর্ণ পাল্টাইয়া সমাজ হইতে একে বারে নিশ্চিহ্ন করিবার জন্য যে সকল মিথ্যা হাদিস রচয়িতা রাজ শক্তিকে সাহায্য করিল বুখারী তাহাদের মধ্যে সর্ব প্রধান। কোরআনের বিশেষ বিশেষ কথার ব্যাখ্যা বুখারীর হাদিসে যেখানেই দেখা যায় উহাই একটি মিথ্যা ব্যাখ্যা এবং তাহার রচিত সেই হাদিসটি একটি মিথ্যা হাদিস। ইসমাইল বুখারী নিজের নামে কোরআনের একটি বিস্তারিত মিথ্যা ব্যাখ্যা প্রকাশ না করিয়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম করিয়া রাসূলের দ্বারাই কোরআনের অংশ বিশেষের মিথ্যা ব্যাখ্যা হাদীসের মাধ্যমে প্রকাশ করিয়াছেন।” (নাঊযুবিল্লাহ)উক্ত গ্রন্থের ৫১ পৃঃ আরো উল্লেখ করা হয়েছে- “আমাদের বক্তব্য হইলঃ কোরআনের ব্যাক্যাংশের তাফসির উল্লেখ করিয়া বুখারী যত হাদিস প্রকাশ করিয়াছেন তাহার প্রায় সবগুলি মিথ্যা রচনা”।
খন্ডন: যারা এই ধরনের কথা বলে তারা মূলত হাদিস গ্রন্থসমূহ এর উপর আঘাত দিচ্ছে যা ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য একটা গুনাহ৷ যারা এধরনের কথা বলে তারা মূলত সুফিবাদ ও তরিকতের আড়ালে রাফেদী শিয়াদের মতবাদ প্রচার করছে।তারা অবশ্যই পথভ্রষ্ট।
এছাড়াও তাদের মধ্যে অনেক কুরআন সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক ভ্রান্ত আকীদা মতাদর্শ দেখা যায়।যেমন তাদের অনুসারীরা পীর ও মাজারকে সিজদা করার পক্ষপাতিত্ব করে,তাদের অধিকাংশই জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করে,তাদের অনেকেই কবরের আযাব বিষয়ে কটু কথা বলে ইত্যাদি। মাওঃ আবুজাফর কাসেমীর লেখা "স্মরণ কালের ভন্ডামী" বইয়ের আলোকে জানা যায় যে নব্বইয়ের দশকে এই ভন্ড সদর উদ্দিন চিশতী ও তার অনুসারীদের ভ্রান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষস্থানীয় হক্কানী আলেম উলামায়ে কিরামগণ আন্দোলন শুরু করে।১৯৯২ সালের নভেম্বর মাস থেকে এই আন্দোলন শুরু হয় যা চলে কয়েকবছর৷ বিশেষ করে ঢাকার কেরানীগঞ্জ,বায়তুল মোকাররম ও প্রেসক্লাব এলাকায় ভন্ড সদর উদ্দিন আহমদ চিশতীর কুরআন সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক ভ্রান্ত মতাদর্শে ভরা বই পুস্তক বাজোয়াপ্ত করার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল মিটিং সমাবেশ জনসভা হয়। ১৯৯২ সালের শেষদিকে ২৬ ডিসেম্বর সদর উদ্দিন চিশতীকে গ্রেফতার ও তার আপত্তিকর বই পুস্তক নিষিদ্ধের দাবীতে কেরানীগঞ্জ থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত মিছিল সমাবেশ হয়।সেখানে অনেকেই নিহত ও আহত হয়৷পরে ২৭ ডিসেম্বর ১৯৯২ ভোরে ফেনী থেকে সদর উদ্দিন চিশতীকে গ্রেফতার করা হয়৷ অবশ্য পরে সে মুক্তি পেয়েছিল৷পরবর্তীতে তৎকালীন সরকার সদর উদ্দিন চিশতী ও জাহাঙ্গীর বেঈমান সুরেশ্বরীর ১২ টি বই বাজোয়াপ্ত করে নিষিদ্ধ করে। এই খবর দেশ বিদেশের অনেক পত্রিকায় এবং বাংলাদেশ বেতার,বিটিভি,বিবিসি,ভয়েস অফ আমেরিকা,রেডিও তেহরানে প্রচারিত হয়। পরে ১৯৯৩ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে সদর উদ্দিন চিশতী ও তার অনুসারীদের বিভ্রান্তিকর আকীদা মতাদর্শের বিপক্ষে ফতোয়া দেয়া হয়। সেখানে বলা হয় যে সদর চিশতী ও তার অনুসারীদের বই পুস্তকে বিশেষ করে কোরান দর্শন বইয়ে কুরআনের মারাত্মক অপব্যখ্যা, মাওলার অভিষেক ও ইসলামে মতভেদের কারণ বইয়ে দ্বীন ইসলামের বিধিবিধান নিয়ে বিষোদগার,সিয়াম দর্শন,কেবলা ও সালাত,আহলে বাইতের পরিচয় সমাজ এতিমের,দোয়া গঞ্জল আরশ ১৪ মাসুমিনের প্রার্থনা এসব বইয়ে কুরআন সুন্নাহর অপব্যখ্যা করে মুসলমানদের মাঝে ফিতনা ফাসাদ অশান্তি হানাহানি সৃষ্টি করছে।তাই এই বইগুলো এড়িয়ে চলা উচিৎ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে রাজারবাগী,দেওয়ানবাগী,সদর চিশতীস,হেজবুত তাওহীদসহ সব ভ্রান্ত দল ফিতনা থেকে দূরে থেকে কুরআন সুন্নাহ অনুসরণের তৌফিক দান করুন। (আমিন)
উক্ত গ্রন্থের ১৪১ পৃঃ আরো উল্লেখ করেছেন, “কোরআনের সুরাগুলির শানে নুযুল এবং প্রয়োজনবোধে কোন কোন সূরার অবতীর্ণ হওয়ার স্থান পরিবর্তন করিয়া সম্পূর্ণ মিথ্যার উপর রাজকীয় তাফসিরের ভিত্তি স্থাপন করা হইয়াছে। এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অনেক অলীক কাহিনী এবং মিথ্যা ঘটনা চক্রের অবতারণা করিয়া কোরআনের সঠিক অর্থকে চাপা দেওয়া হইয়াছে।”(লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)
খন্ডন: এগুলো সবই মনগড়া কথা,এগুলো রাফেজী শিয়া ও ইসমাইলী শিয়াদের বানানো ভিত্তিহীন কথা।যারা এসব কথাবার্তায় বিশ্বাস করে তারা পথভ্রষ্ট।
৪.যাকাত ও হজ বিষয়ে সদর উদ্দিন চিশতী তার রচিত কোরান দর্শন(১) এর ভূমিকাতে লিখেছেন "মানবীয় আমিত্বের উৎসর্গের নামই যাকাত । বস্তুগত কোন দানকে কোরআনে যাকাত বলা হয় নাই । মনের মধ্যে মহা শূন্য ভাব জাগিয়া উঠাই যাকাত ।" উক্ত যাকাত সম্পর্কে আরো জঘন্যতম মন্তব্য করে ইমামীয়া চিশতীয়া সংঘ থেকে প্রকাশিত সদরুদ্দীন চিশতী কর্তৃক অনুমোদিত আ : রাজ্জাক কর্তৃক লিখিত ' লোকোত্তর দর্শন ও পুরুষোত্তম নজরুল ' নামক বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে , “ বস্তু মোহ থেকে মনকে পূর্ণভাবে খালি করার নাম যাকাত । মানবীয় আমিত্বের উৎসর্গের নাম যাকাত , আমিত্বে “ লা ” অবস্থার নাম যাকাত , মনের মাঝে মহা শূন্য ভাব জাগিয়া উঠার নাম যাকাত । বস্তুগত কোন দানকে কুরআনে যাকাত বলা হয় নাই । হযরত উমর প্রবর্তিত শতকরা আড়াইভাগ বস্তুগত দানকে যাকাত বলা চলে না । ইহাকে একটি রাষ্ট্রীয় কর ব্যবস্থা বলা যেতে পারে । কুরআনের যে সাম্যের সুর তাহা এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যহত হয় । এই ব্যবস্থার মাধ্যমে ধনতাস্তান্ত্রিক বুর্জোয়া ও পেট বুর্জোয়া শ্রেণীর লালন ও বর্ধন এর একটি পরিষ্কার গন্ধ পাওয়া যায় ।"(নাউজুবিল্লাহি মিন যালিক)।হজ বিষয়ে একই বইয়ের ৩৩ পৃষ্ঠায় মুসলমানগণ মক্কা শরীফে গিয়ে পবিত্র কাবা শরীফের তাওয়াফের মাধ্যমে যে হজ্জ পালন করে , তাকে অস্বীক্লার করে লিখা হয়েছে যে , হজ্জ দুই প্রকার , “ হজ্জে উমরা ও হজ্জে আকবর হল গুরু বা মোর্শেদের জীবনদর্শনে যখন কোন সাধক একাত্ম হতে পারে তখন তাই হয় উমরা হজ্জ এবং গুরু বা মোর্শেদের তা'লীমের মাধ্যমে সালাত নামক পদ্ধতি অবলম্বন করে । পরিণতিতে গুরুর জীবন দর্শন যখন নিজ জীবনে হাসিল করতে পারে অর্থাৎ আত্মদর্শন হয় তখন তাই হয় আকবরী হজ্জ বা শ্রেষ্ঠ হজ্জ ।"(লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)
খন্ডন: আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন "আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো ও যাকাত দাও এবং রুকূ’কারীদের সাথে রুকূ করো " (সুরা বাকারা আয়াত ৪৩)।
হাদিসে এসেছে, "আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর আবূ বাকর (রাঃ) খলীফা হিসেবে নিযুক্ত হন। তখন আরবের কিছু গোত্র কুফরী করলো। ‘উমার (রাঃ) আবূ বাকর (রাঃ)-কে বললেন, আপনি এ লোকদের বিরুদ্ধে কিভাবে যুদ্ধ করবেন? অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষণ না তারা বলে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে, তার জান-মাল আমার থেকে নিরাপদ। তবে আইনের বিষয়টি ভিন্ন এবং তার প্রকৃত বিচার মহান আল্লাহর উপর ন্যস্ত’’।তখন আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ শপথ! যে ব্যক্তি সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে আমি অবশ্যই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। সম্পদের হক/অধিকার হলো যাকাত। আল্লাহর শপথ! যদি তারা আমাকে একটি রশি দিতেও অস্বীকৃতি জানায় যা তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দিতো, তবে আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। ‘উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি বুঝতে পারলাম যে, মহান আল্লাহ আবূ বাকরের হৃদয়কে যুদ্ধের জন্য উম্মুখ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি বুঝতে পারলাম যে, এটাই হাক্ব ও সঠিক" (সুনানে আবু দাউদ,যাকাত অধ্যায় )।হজ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন "আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব ওমরাহ পরিপূর্ণ ভাবে পালন কর।" (সুরা বাকারা আয়াত ১৯৬)।এপ্রসঙ্গে কুরআনে আরো এসেছে যে "তার মধ্যে প্রকাশ্য নিদর্শনসমূহ বিদ্যমান রয়েছে, মাকামে ইবরাহীম উক্ত নিদর্শনসমূহের অন্যতম। আর যে তার মধ্যে প্রবেশ করে সে নিরাপত্তা প্রাপ্ত হয় এবং আল্লাহর উদ্দেশে এই গৃহের (কাবা শরীফ)হাজ্জ করা সেই সব মানুষের কর্তব্য যারা সফর করার আর্থিক সামর্থ্য রাখে" (সুরা আলে ইমরান আয়াত ৯৭)। আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন-"হে মানবসকল! আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ্ব ফরয করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্ব করো। এক ব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! প্রতি বছর কি হজ্ব করতে হবে? তিনি চুপ রইলেন এবং লোকটি এভাবে তিনবার জিজ্ঞেস করল। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তা (প্রতি বছর হজ্ব করা) ফরয হয়ে যেতো, কিন্তু তোমাদের পক্ষে তা করা সম্ভব হতো না।"(সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৩৭ (৪১২); মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১০৬০৭; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৩৭০৪; সহীহ ইবনে খুযাইমা, হাদীস : ২৫০৮; সুনানে নাসায়ী ৫/১১০)।ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন-যে ব্যক্তি বায়তুল্লায় হজ্ব করার সামর্থ্য রাখে, তবুও হজ্ব করে না সে ইহুদী হয়ে মৃত্যুবরণ করল কি খৃস্টান হয়ে তার কোনো পরোয়া আল্লাহর নেই।-তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৫৭৮
৫.দরুদ শরীফ প্রসঙ্গে সদর উদ্দিন চিশতী তার কেবলা ও নামাজ গ্রন্থে ৪২ পৃষ্ঠায় সুরা আহযাবের ৫৬ নাম্বার প্রসঙ্গে লিখেছেন "আল্লাহ তার ফেরেশতাদের নিয়ে রাসুলের প্রতি আশীর্বাদ করেছেন"
খন্ডন: এটা সম্পূর্ণ বেয়াদবীপূর্ণ কথা৷ আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন "নিশ্চয় আল্লাহ নবীর প্রশংসা করেন এবং তার ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দরুদ প্রেরণ করেন।হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নবীর উপর সালাত পাঠ কর এবং তাকে যথাযথ ভাবে সালাম জানাও।"(সুরা আহযাব,আয়াত ৫৬) এর আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরে মাআরিফুল কুরআন গ্রন্থে এসেছে "ইমাম শাফেয়ী রহঃ ও আহমদ ইবনে হাম্বল রহঃ এর মতে রাসুল সাঃ এর প্রতি দরুদ পড়া ওয়াজিব "।
হাদিসে এসেছে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আছ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘যে আমার উপর একবার দরূদ পড়বে; বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশটি রহমত নাজিল করবেন।’ (মুসলিম, তিরমিজি)।হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর বক্তব্যে তা সুস্পষ্ট। তিনি বলেন- ‘যে পর্যন্ত তুমি তোমার নবির উপর দরূদ না পড়বে, ততক্ষণ তোমার দোয়া আসমানে যাবে না। আসমান-জমিনের মাঝে তা ঝুলে থাকবে।’
৬.সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী ও তার অনুসারীরা বিভিন্নভাবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পবিত্র কুরআনের নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থসমূহ,সহীহ বুখারী সহীহ মুসলিমসহ সিহাহ সিত্তার হাদিস গ্রন্থসমূহ,ইমাম ইবনে কাসির রহঃ,ইমাম নববী রহঃ থেকে শুরু করে বিশ্ববিখ্যাত নির্ভরযোগ্য মুফাসসির,মুহাদ্দিস,ফকিহ,ইমাম,আলেম উলামায়ে কিরাম,মুফতিদের বিরুদ্ধে কটুক্তি ও আপত্তিকর কথা বলতে দেখা যায় । সদর উদ্দীন চিশতী কর্তৃক লিখিত “কোরান দর্শন" এর শেষ দিকের খন্ডগুলোর ভূমিকার ১ম পৃষ্ঠায় বর্তমান পৃথিবীর সকল নির্ভরযোগ তফসীর গ্রন্থগুলিকে মিথ্যা এবং দুনিয়ার সমস্ত ওলামায়ে কেরামকে মুর্খ , অন্ধ মিথ্যুক হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেছে , "কোরানের সম্পূর্ণ মিথ্যা ব্যাখ্যা জগতের ধর্মীয় সাহিত্য ভরপুর হইয়া গিয়াছে । এই মিথ্যা ধর্মীয় সাহিত্য পাঠ করিয়া আবার অসংখ্য তথাকথিত আলেম বা শিক্ষিত সমাজ তৈয়ারী হইতেছে ।আগাগোড়াই একটা মিথ্যার প্রবাহ । এই মিথ্যা দিয়াই জগত চলিতেছে । সূত কি , জগত জানেনা ।এমতাবস্থায় জগতজোড়া আলেম সমাজই মিথ্যা বলিয়াই যাইতেছে , লিখিয়াও যাইতেছে এবং যেহেতু মিথ্যার ধারক বাহক এবং প্রচারক
এই আলেম সমাজ সমাজের , রাষ্ট্রের এবং বিশ্বের নেতৃত্বে আসীন রহিয়াছেন সেহেতু বিশ্বের মানুষকে তাহারা ছলে বলে কৌশলে মিথ্যার অতল তলে ডুবাইয়া রাখিয়াছে । ইহাদেরকে সত্যের আলো দেখানোর কোন ব্যবস্থাই নাই । জগতের মানুষ মিথ্যার মধ্যে জন্ম গ্রহণ করে , মিথ্যাতে জীবন অতিবাহিত করে এবং মিথ্যাতেই মৃত্যুমুখে পতিত হয় । মিথ্যার সেই ধারক - বাহক আলেমসমাজ মানুষকে কাল্পনিক স্বর্গে পাঠায় এবং তাদেরকে না মানিলে কাল্পনিক নরকে পাঠায় অথচ এই অদ্ধ মূর্খ আলেমসমাজ স্বর্গ বা নরকের চিহ্ন মাত্র দেখিল না । এই অসহায় মনুষ্য নামধারী জীবগুলি মিথ্যার মধ্যে জীবন অতিবাহিত করার কারণে অনন্তকাল ধরে শুধু নরকেই প্রবেশ করিয়া আসিতেছে , যদিও ইহা তাহাদের বোধগম্যের বাহিরে । এই অন্ধ , বধির এবং বোবা মনুষ্য সমাজে কোরানের সঠিক ব্যাখ্যা দেওয়া কি রকম তাহাও একটি চিত্তার বিষয় কোরআনের সঠিক ব্যাখ্যা মূলতঃ মোহাম্মদ এবং মোহাম্মদের বংশধর ছাড়া কাহারও পক্ষে একেবারেই অসম্ভব ।"(আস্তাগফিরুল্লাহ)
খন্ডন: যারা এজাতীয় কথাবার্তা বলে তারা ১০০% পথভ্রষ্ট।এসব কথাবার্তাও একধরনের প্রচন্ড কুফরির শামিল৷ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন , "তোমাদের ছোট ব্যক্তির উপর আমার মর্যাদা যেমন , আবেদের চেয়ে আলেমের মর্যাদা ঠিক তেমন ।"
৭.সদর উদ্দিন চিশতি কর্তৃক রচিত “মাওলার অভিষেক ইসলাম ধর্মে মতভেদের কারন” গ্রন্থের ৭১পৃষ্ঠায় ইমাম বুখারী রহঃ ও ইমাম মুসলিম রহঃ প্রসঙ্গে লিখেছেন- “খেলাফতের ইতিহাস এবং খলিফাদের জীবনী লেখকগণ যাহা কিছু লিখিয়া থাকেন তাহার বেশির ভাগ কথাই মিথ্যা হইয়া থাকে। ইহার কারন, তাহারা তথা কথিত বিশিষ্ট্য মুহাদ্দিসগনের লিখিত হাদিস গ্রন্থগুলিকে প্রামাণ্য দিলিলরূপে গ্রহণ করিয়া থাকেন যেমন, “মুসলিম ও সহিহ বুখারী” ইত্যাদি। অথচ তাহারা ঐ সকল হাদিস গ্রন্থের সত্যাসত্য বিচারে একেবারেই অক্ষম। খেলাফতের সমর্থনে মাওলা আলীর বিপক্ষে শত শত মিথ্যা হাদিস বুখারী ও মুসলিম (রহমাতুল্লাহ আলাইহিমা) রচনা করিয়া গিয়াছেন” (নাঊযুবিল্লাহ) উক্ত গ্রন্থের ১৪৫ পৃঃ আরো লিখা হয়েছে “আব্বাসী রাজত্বকালে ইমাম সাহেবদের প্রকাশিত ব্যাখ্যা যাহা মৃয়মান অবস্থায় সমাজে তখনও বাঁচিয়া ছিল তাহা সম্পূর্ণ পাল্টাইয়া সমাজ হইতে একে বারে নিশ্চিহ্ন করিবার জন্য যে সকল মিথ্যা হাদিস রচয়িতা রাজ শক্তিকে সাহায্য করিল বুখারী তাহাদের মধ্যে সর্ব প্রধান। কোরআনের বিশেষ বিশেষ কথার ব্যাখ্যা বুখারীর হাদিসে যেখানেই দেখা যায় উহাই একটি মিথ্যা ব্যাখ্যা এবং তাহার রচিত সেই হাদিসটি একটি মিথ্যা হাদিস। ইসমাইল বুখারী নিজের নামে কোরআনের একটি বিস্তারিত মিথ্যা ব্যাখ্যা প্রকাশ না করিয়া রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম করিয়া রাসূলের দ্বারাই কোরআনের অংশ বিশেষের মিথ্যা ব্যাখ্যা হাদীসের মাধ্যমে প্রকাশ করিয়াছেন।” (নাঊযুবিল্লাহ)উক্ত গ্রন্থের ৫১ পৃঃ আরো উল্লেখ করা হয়েছে- “আমাদের বক্তব্য হইলঃ কোরআনের ব্যাক্যাংশের তাফসির উল্লেখ করিয়া বুখারী যত হাদিস প্রকাশ করিয়াছেন তাহার প্রায় সবগুলি মিথ্যা রচনা”।
খন্ডন: যারা এই ধরনের কথা বলে তারা মূলত হাদিস গ্রন্থসমূহ এর উপর আঘাত দিচ্ছে যা ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য একটা গুনাহ৷ যারা এধরনের কথা বলে তারা মূলত সুফিবাদ ও তরিকতের আড়ালে রাফেদী শিয়াদের মতবাদ প্রচার করছে।তারা অবশ্যই পথভ্রষ্ট।
এছাড়াও তাদের মধ্যে অনেক কুরআন সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক ভ্রান্ত আকীদা মতাদর্শ দেখা যায়।যেমন তাদের অনুসারীরা পীর ও মাজারকে সিজদা করার পক্ষপাতিত্ব করে,তাদের অধিকাংশই জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করে,তাদের অনেকেই কবরের আযাব বিষয়ে কটু কথা বলে ইত্যাদি। মাওঃ আবুজাফর কাসেমীর লেখা "স্মরণ কালের ভন্ডামী" বইয়ের আলোকে জানা যায় যে নব্বইয়ের দশকে এই ভন্ড সদর উদ্দিন চিশতী ও তার অনুসারীদের ভ্রান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে দেশের শীর্ষস্থানীয় হক্কানী আলেম উলামায়ে কিরামগণ আন্দোলন শুরু করে।১৯৯২ সালের নভেম্বর মাস থেকে এই আন্দোলন শুরু হয় যা চলে কয়েকবছর৷ বিশেষ করে ঢাকার কেরানীগঞ্জ,বায়তুল মোকাররম ও প্রেসক্লাব এলাকায় ভন্ড সদর উদ্দিন আহমদ চিশতীর কুরআন সুন্নাহর সাথে সাংঘর্ষিক ভ্রান্ত মতাদর্শে ভরা বই পুস্তক বাজোয়াপ্ত করার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল মিটিং সমাবেশ জনসভা হয়। ১৯৯২ সালের শেষদিকে ২৬ ডিসেম্বর সদর উদ্দিন চিশতীকে গ্রেফতার ও তার আপত্তিকর বই পুস্তক নিষিদ্ধের দাবীতে কেরানীগঞ্জ থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত মিছিল সমাবেশ হয়।সেখানে অনেকেই নিহত ও আহত হয়৷পরে ২৭ ডিসেম্বর ১৯৯২ ভোরে ফেনী থেকে সদর উদ্দিন চিশতীকে গ্রেফতার করা হয়৷ অবশ্য পরে সে মুক্তি পেয়েছিল৷পরবর্তীতে তৎকালীন সরকার সদর উদ্দিন চিশতী ও জাহাঙ্গীর বেঈমান সুরেশ্বরীর ১২ টি বই বাজোয়াপ্ত করে নিষিদ্ধ করে। এই খবর দেশ বিদেশের অনেক পত্রিকায় এবং বাংলাদেশ বেতার,বিটিভি,বিবিসি,ভয়েস অফ আমেরিকা,রেডিও তেহরানে প্রচারিত হয়। পরে ১৯৯৩ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে সদর উদ্দিন চিশতী ও তার অনুসারীদের বিভ্রান্তিকর আকীদা মতাদর্শের বিপক্ষে ফতোয়া দেয়া হয়। সেখানে বলা হয় যে সদর চিশতী ও তার অনুসারীদের বই পুস্তকে বিশেষ করে কোরান দর্শন বইয়ে কুরআনের মারাত্মক অপব্যখ্যা, মাওলার অভিষেক ও ইসলামে মতভেদের কারণ বইয়ে দ্বীন ইসলামের বিধিবিধান নিয়ে বিষোদগার,সিয়াম দর্শন,কেবলা ও সালাত,আহলে বাইতের পরিচয় সমাজ এতিমের,দোয়া গঞ্জল আরশ ১৪ মাসুমিনের প্রার্থনা এসব বইয়ে কুরআন সুন্নাহর অপব্যখ্যা করে মুসলমানদের মাঝে ফিতনা ফাসাদ অশান্তি হানাহানি সৃষ্টি করছে।তাই এই বইগুলো এড়িয়ে চলা উচিৎ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে রাজারবাগী,দেওয়ানবাগী,সদর চিশতীস,হেজবুত তাওহীদসহ সব ভ্রান্ত দল ফিতনা থেকে দূরে থেকে কুরআন সুন্নাহ অনুসরণের তৌফিক দান করুন। (আমিন)
Comments
Post a Comment