লেখক-রাজিব খাজা: দিল্লুর রহমান ১৯৮৬ সালে রাজারবাগে তার পৈত্রিক বাড়িতে ‘তাসাউফের দরবার’ প্রতিষ্ঠা করেন। তার বাবার নাম মোখলেসুর রহমান।
এদের অধিকাংশ মুরিদ জেনারেল শিক্ষিত পাবলিক, মাদ্রাসা পড়ুয়া একজন আলিম ও পাওয়া যাবেনা যে দিল্লুর রহমানের নিকট বাইয়াত হয়েছে, যেহেতু মাদ্রাসায় পড়ে হওয়া আলিমের ইসলামিক জ্ঞান থাকে পরিপূর্ণ, সেহেতু তাদের মনগড়া ইসলামিক ব্যখা দিয়ে ব্রেইন ওয়াশ করা যায়না বলে দিল্লুর রহমান টার্গেট নেন নিজের মতো জেনারেল শিক্ষিত যুব সমাজ ও নারী পুরুষদের। তাদের মুরিদেরা মানুষের প্রতিষ্টানিক শিক্ষার উপর আক্রমণ করে বলে তুমি স্কুল পাশ, কলেজ পাশ, তুমি ইসলাম নিয়ে কথা বলার কে, অথচ একজন প্রাক্তন মুরিদ হিসেবে আমি অবগত যে কথিত এই পির দিল্লুর রহমানের দুই মেয়ে (নাফিসা ও নাবিলা) ও এক ছেলে (মো'য়াজ), যাদের দিল্লুর রহমান কোন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় পাঠায়নাই, দুই মেয়ে বিয়ে দিয়ে দুই দামাত (শফিউল্লাহ ও মুজিবউল্লাহ) কে নিজের কাছেই তাদের মা বাবার খেদমত থেকে আজ বছরের পর বছর দূরে রেখেছে, রেখেছে ছেলের বউ, নাতি নাতনীর চোখ, অন্তর শীতল করা স্নেহ ভালোবাসা থেকে। জন্মদাতা মা বাবার খেদমতের গুরুত্ব, কুরআন হাদিসের হুকুম এইখানে উপস্থাপন প্রয়োজন বলে মনে করছিনা, সবাই কম বেশী জানেন। আর ছেলে ২১/২২ বছর বয়স অববাহিত, সারাদিন একটি ঘরের মধ্যে বন্ধি থাকে, জিজ্ঞাসা করলে হয়তো কুযুক্তি দেবে যে নিরবে একা থেকে ইল্মের চর্চা করে, তবে এরূপ একা একঘরে ইল্মের চর্চার কোন দলিলঃ না নবী ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম, না খোলাফায়ে রাশেদিন আলাইহিমুস সালাম থেকে কেউ পাবে। এমনকি অফিসিয়াল নবুওওয়াত প্রকাশের আগে হেরা গূহায় রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম যে ধ্যান মগ্ন থাকতেন সেটাও ছিলো ক্ষণস্থায়ী, এবং উনার এই সুন্নতের উপর আমল ৪ খিলাফতের ৫ খলিফার কারো জীবন তালাশ করে পাওয়া যায়না।
দিল্লুর রহমানের পারিবারিক কয়েকটি সূত্র জানায়, তরুণ বয়সে জেনারেল পড়ুয়া হয়েও ইসলাম সম্পর্কে চতুর জ্ঞান ও দক্ষতার সাথে অন্যের সাথে বিতর্ক করতে সক্ষম থাকায় অল্প সময়ের মধ্যেই সে অনুসারীদের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে তার ভক্ত-মুরিদের সংখ্যা। একপর্যায়ে সে ঢাকার বুকে তাসাউফপন্থীদের নিকট বড় মাপের একজন সুন্নী পির হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। (একজন প্রাক্তন মুরিদ হিসেবে আমি এরূপ কোন জ্ঞান ৪ বছর সোহবতে থেকে দেখিনি, বাকিটা আল্লাহু আ’লম।)
পিরের এক নিকট আত্বীয় থেকে জানা যায়, ‘আমাদের পরিবারে তার (দিল্লুর রহমানের) আগে কোনো পির নেই। তার বাবা ছিলেন একজন প্রকৌশলী ও ব্যবসায়ী। গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজারের প্রভাকরদীতে। নয় ভাইবোনের মধ্যে দিল্লুর রহমান তৃতীয়।’
তিনি বলেন, ‘দিল্লুর-এর বাবা মুক্তিযুদ্ধের আগেই রাজারবাগে বাড়ি করেন। সেখানেই স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় দিল্লুর রহমান ছিল উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র। পড়ত লক্ষ্মীবাজারের তৎকালিন কায়েদ-ই-আজম কলেজে (বর্তমান সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ)। পরে এই কলেজ থেকেই সে ডিগ্রি পাস করে।’
পরিবারের ওই সদস্য জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় এপ্রিল মাসে পিরের বাবা সপরিবারে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে চলে যান। সেখানে দিল্লুরের মেজ ভাই হাফিজুর রহমান হারুন ও চাচাত ভাইয়েরা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। কয়েক দিন পর একটি চিরকূট লিখে দিল্লুর রহমানও বাসা ছেড়ে চলে যায়। তবে একমাস পরেই বাড়ি ফিরে আসে দিল্লুর। এরপর থেকেই তার চলাফেরায় পরিবর্তন দেখা যায়। সে ধর্মকর্মে মনোনিবেশ করে।
মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী সময়ে ঢাকায় ফিরে আগের মতই কলেজে যেতে শুরু করে দিল্লুর রহমান। সেই সঙ্গে ধর্মকর্মে বাড়তে থাকে মনোযোগ। শার্ট-প্যান্ট ছেড়ে পায়জামা-পাঞ্জাবি-টুপি পড়া শুরু করে। সাধারণ পড়ালেখার পাশাপাশি ইসলামিক বই পড়া শুরু করে সে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ডিগ্রি পড়ার সময় যাত্রাবাড়ীর পির আবুল খায়ের ওয়াজিউল্লাহ রহমতুল্লাহ-এর মুরিদ হয় দিল্লুর রহমান। সেই সঙ্গে আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক রোকন উদ্দীনের কাছে সে আরবি ও ফারসি ভাষার তালিম নেয়। পরে রোকন উদ্দীনের মেয়েকেই বিয়ে করে দিল্লুর রহমান।
পির পরিবারের কয়েক সদস্যের দাবি, ইসলামিক ডিগ্রি না থাকলেও অসংখ্য ধর্মীয় বই পড়ে ও আলেমদের কাছাকাছি থেকে ব্যাপক ইসলামিক জ্ঞান অর্জন করে দিল্লুর রহমান। এজন্য অনেক সুপরিচিত আলেমও তরুণ দিল্লুরের সঙ্গে যুক্তিতর্কে পেরে উঠতেন না। খুব অল্প সময়ে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা তৈরি হয় তখন। আর সেই জনপ্রিয়তাকে ভিত্তি করে ১৯৮৬ সালে ঢাকার পৈত্রিক বাড়িতে “রাজারবাগ দরবার” স্থাপন করে সে পুরোদস্তুর পির বনে যায়। বাড়তে থাকে তার ভক্ত-মুরিদের সংখ্যা।
পিরের এক নিকটআত্মীয় বলেন, ‘ইসলামিক জ্ঞানে তার দখলের কারণে একটা সময় পর্যন্ত তাকে নিয়ে আমরা খুব গর্ব করতাম। সম্মান দিয়ে পরিবারের সদস্যরাও তাকে হুজুর বলে সম্বোধন করত। তবে ১৯৯৮ সালে দিল্লুর রহমানের বাবা মারা যাবার পর তার কাছে ধর্মব্যবসায়ীরা ভিড়তে থাকে। এরপর সে তার পৈত্রিক বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে নিজের ভাইদের বিরুদ্ধেই মামলা করে। সেই থেকে শুরু হয় তার মামলাবাজ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য।’
পিরের মামলা সিন্ডিকেটের অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি পিরের মামলাবাজ সিন্ডিকেটের হয়রানির শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে পিরের আপন তিন ভাইও আছেন। রাজারবাগের পৈত্রিক সম্পদ দখলের জন্য পির তার মুরিদদের দিয়ে তিন ভাই আনিসুর রহমান ফিরোজ, হাফিজুর রহমান হারুন ও জিল্লুর রহমান তরুণের বিরুদ্ধে মামলা করায়। এসব মামলায় তারা জেলও খেটেছেন। এদের মধ্যে জিল্লুর রহমান তরুণের বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা করে দিল্লুর রহমানের মুরিদরা। অন্য ভাইয়েরা পরে আপসের মাধ্যমে দিল্লুর রহমানের রোষানল থেকে এখন মুক্ত হলেও সমঝোতা না করায় বাবার বাড়ি ছেড়ে ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে জিল্লুর রহমান তরুণকে।
দিল্লুর রহমান মুরিদকে দিয়ে তার ভাইয়ের বিরুদ্ধেঃ সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, মানব পাচার, মাদক, হত্যাসহ গুরুতর বিভিন্ন অভিযোগে মামলা করে। এর মধ্যে ২৩টি মামলায় জিল্লুর রহমান তরুণ খালাস পেলেও সাতটি এখনও বিচারাধীন।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে জিল্লুর রহমান তরুণ বলেন, ‘আমার আপন ভাই আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, এই লজ্জার কথা আমি কাউকে বলতে চাই না। আমি আমার মতো আছি, তার (দিল্লুর রহমান) সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের বংশে কোনো পির ছিল না। আমরা এক সময় তাকে নিয়ে খুব গর্ব করতাম। কিন্তু কিছু খারাপ মুরিদ আর তার স্ত্রীর প্ররোচনায় সে অধঃপতনে গেছে। (এইখানে আমি কেবল পির নিজের ভাইদের সাথে কি করেছে তার দলিল দিলাম, বাকি মানুষের সাথে কি করেছে সেটা যারা জানতে চান এই লিঙ্কে চলে যান (এখানে)। (আর্কাইভ)
পাঠক এই হলো দিল্লুর রহমানের সংক্ষিপ্ত পির সাজার কাহিনী ও পিরের পারিবারিক অবস্থান। এখন আসেন ইসলাম এর আয়না তথা কুরআন সুন্নাহ দিয়ে যাচাই করি সম্পদের লোভে ভাইদের মামলা দিয়ে জ্বেল খাটানো মানুষ কি কখনো পির হতে পারে? এর সাথে রসূলে পাক ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লামের কোন সম্পর্ক থকতে পারে? যদিও সে মিথ্যা আহলে বাইত বা নবী পরিবারের সদস্য বলে দাবী করে।
মহান আল্লাহ পাক আল কুরআন মানুষকে নির্দেশ দিচ্ছেন এই বলে যেঃ (یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ) (আল কুরআনঃ ৪/২৯) (وَ لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ وَ تُدۡلُوۡا بِهَاۤ اِلَی الۡحُکَّامِ لِتَاۡکُلُوۡا فَرِیۡقًا مِّنۡ اَمۡوَالِ النَّاسِ بِالۡاِثۡمِ وَ اَنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ) আর তোমরা নিজদের মধ্যে তোমাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না এবং তা বিচারকদেরকে (ঘুষ হিসেবে) প্রদান করো না। যাতে মানুষের সম্পদের কোন অংশ পাপের মাধ্যমে জেনে বুঝে খেয়ে ফেলতে পার। (আল কুরআনঃ ২/১৮৮)
আর হাদিস শরীফে এসেছে, (عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ آلِهٖ وَسَلَّمَ قَالَ فَإِنَّ دِمَاءَكُمْ، وَأَمْوَالَكُمْ، وَأَعْرَاضَكُمْ، وَأَبْشَارَكُمْ عَلَيْكُمْ حَرَامٌ) রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জে বলেন, একজন মুসলিমের জন্য অন্য মুসলিমের মান-সম্মান, রক্ত, সম্পদ সব কিছুই হারাম। (বুখারী শরীফ ৬৮, ২৯৮৪, মুসলিম শরীফ ১৬৭৯)।
আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ (عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ النَّاسُ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ وَالْمُؤْمِنُ مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى دِمَائِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ) রসূলুল্লাহ ছ্বল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (প্রকৃত) মুসলিম ঐ ব্যাক্তি যার হাত ও রসনা হতে অন্য মানুষ নিরাপদ থাকে। আর মু’মিন ঐ ব্যক্তি যার থেকে অন্য লোক নিজের জান ও মালকে নিরাপদ মনে করে। (নাসাঈ শরীফ ৪৯৯৪, তিরমিযী শরীফ ২৭৭৫, ইবন মাজাহ শরীফ ৪১১৬)।
*এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়ঃ
১। এই হাদীস শরীফটির দাবি অনুযায়ী এটা প্রমাণিত হয় যে, মুসলিম ব্যক্তি যেন সকল প্রকারের আমানত রক্ষা করে এবং আদান-প্রদান বা দেওয়া-নেওয়ার সময় সর্বদা সততা বজায় রাখে। এবং প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা মোতাবেক নিজেকে পরিচালিত করে। আর মানুষের জান ও মানের প্রতি জুলুম বা অন্যায় আচরণ না করে।
২। প্রকৃতপক্ষে মুসলিম ব্যক্তি হলো সেই ব্যক্তি, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ তা’য়ালার কাছে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে। এবং মানুষের অধিকারগুলির সংরক্ষণ করে। আর তাদেরকে কোন প্রকার কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকে এবং তাদের প্রতি জুলুম করা হতে বিরত থাকে। সুতরাং তারা তার অমঙ্গল ও অন্যায় আচরণ থেকে সব সময় নিরাপদে থাকে।
৩। এই হাদীস শরীফটি প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির একটি প্রকাশ্য ও বাস্তব পরিচয় পেশ করেছেন। আর সেই পরিচয় হলো এই যে, সকল জাতির মানব সমাজ তার অমঙ্গল থেকে নিরাপত্তায় থাকবে। অনুরূপভাবে প্রকৃত মুসলিম ব্যক্তির একটি গুপ্ত পরিচয়ও পেশ করেছেন। আর সেই পরিচয় হলো এই যে, সকল জাতির মানব সমাজের জান ও মাল তার অশান্তি ও অকল্যাণ থেকে নিরাপদে থাকবে।
এখন বুঝে নিন দিল্লুর না মুসলিম না মুমিন এই হাদিসের আলোকে।
বিঃদ্রঃ সময়ে সময়ে আরো তথ্য এখানে যোগ করা হবে, আপাতত সামান্য উত্থান ও কুকীর্তি তুলে ধরা হয়েছে। (আমজাদ আলি নামের এক গোয়ার মূর্খ মুরিদের ফেইসবুকে অশ্লীল গালিগালাজ ও মিথ্যাচারের জবাবে অফ থাকা এই ব্লগ আজ থেকে চালু করা হলো, এর দায় রাজারবাগিরা তার উপর দিতে পারেন।)
Comments
Post a Comment