ঐতিহাসিকভাবেই পুরান ঢাকা মহররম উদযাপনের প্রাণকেন্দ্র। পুরান ঢাকায় মোগল আমল থেকেই বৈচিত্র্যময় পদ্ধতিতে মহররম উদযাপিত হতো। নবাবদের নেতৃত্বে এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত কমিটির ব্যবস্থাপনায় ইমামবাড়া কেন্দ্র করে চলতো এই উদযাপন। সারা মহররমব্যাপী এর রেশ থাকলেও বিশেষত প্রথম দশদিন শান-শওকতের সঙ্গে চলতো উদযাপন। এই উদযাপনের বিভিন্ন রীতির মধ্যে একটি ছিল— শরবত বিতরণ।
হাকিম হাবিবুর রহমানের নাতি সাদ উর রহমান তাঁর উৎসবের ঢাকা কিতাবে লিখেছেন: “ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত ভিস্তিরা মিছিলকারীদের পানি ও শরবত বিতরণ করলেও পাকিস্তান আমলে বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে শরবত বহনকারী গাড়ি মূল মিছিলকে অনুসরণ করে মিছিলকারী ও জনসাধারণের মধ্যে শরবত বিতরণ করত এবং এ নিয়ে চলত রীতিমত প্রতিযোগিতা।” (উৎসবের ঢাকা : সাদ উর রহমান, ঐতিহ্য, ২০১৮, ১০১)
পুরান ঢাকার প্রাচীন বাসিন্দা সাঈদ আহমদ স্মৃতিচারণ করছেন: “আমাদের নিজস্ব পারিবারিক গোরস্থান ‘হায়াতবাগে’ (আজিমপুরে) দুধের ও তোকমা দিয়ে ‘কেওড়ার’ বানানো শরবত সবার মাঝে বিতরণ করা হতো। মহররমের ৫ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত গরিবদের মাঝে খিচুড়ি খাওয়ানো হতো। দশই মহররম যখন গঞ্জে শহিদার দিকে মিছিল রওনা হতো, তখন তোকমা আর দুধের শরবত মিছিলের যাত্রীদের প্রাণভরে খাওয়ানো হতো। এই শরবত মানুষ খুব শ্রদ্ধাভরে পান করতেন।” (জীবনের সাতরং : সাঈদ আহমদ, সাহিত্য প্রকাশ, ২০০৭, ৩০-৩৩)
কেবল পুরান ঢাকাতেই নয়, ব্রিটিশ আমলে কলকাতার মহররম উদযাপনেও এই শরবতের হাজিরা ছিল। সাহিত্যিক আবু রুশ্দ্ লিখেছেন: “আমার নজর কিন্তু সরবৎ ও খিচুড়ী বিতরণের দিকেও থাকতো। বড় বড় লরীতে খিচুড়ী ও সরবৎ-এর প্রচুর সরবরাহ থাকতো, যে যত পান করতে পারো বা খেতে পারো। আমি সরবৎ প্রচুর খেতাম, তবে খিচুড়ীর কথা এখন ঠিক মনে নেই।” (জীবন ক্রমশ : আবু রুশ্দ্, হাক্কানী পাবলিশার্স, ১৯৮৯, ৮০)
অর্থাৎ, মহররম উদযাপনের বিভিন্ন রীতিনীতির মধ্যে শরবত বিতরণ ছিলো বিশেষ একটি।
Comments
Post a Comment