-আল্লামা সোবহান
ডা.বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল-সুরেশ্বীর কোরআনুল মাজিদ ও হুব্হু অনুবাদ ও
কিছু কথা বে-ঈমান হোমিও হল ১০৮ নিউ এলিফ্যান্ট রোড (২য় তলা) ঢাকা-১২০০, ফোন
০১৯১১৫৯৭৭৮০, ০১৭১১১২৮১৬৯-এর সুফিবাদ প্রকাশনালয় হতে প্রকাশিত। প্রকাশক
*নাহিদ শামসেত্তাব্রীজ *বেদম ওয়ারসী *তামামী সানাই *সারমাস্ত *পূজারী *মাতম
*ইনশা *সমনুন মোহেব (ছুফীবাদ প্রকাশনালয়ের পক্ষে) গ্রাম: চুনকুটিয়া ডাক:
শুভঢ্যা থানা: কেরানীগঞ্জ জেলা: ঢাকা
ডবনংরঃব: িি.িনধনধলধযধহমরৎ.পড়স
মুদ্র্রণ: ইছামতি প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, সুত্রাপুর, ঢাকা
প্রকাশকাল ২০১১ মূল্য ১০০টাকা।
প্রথম প্রতিবাদ-
ডা. বাবা জাহাঙ্গীর আল সুরেশ্বরী কুরআনুল মাজিদ ৩ খ-ের ১৪ পৃষ্ঠায় নফস ও
রূহ এবং আল্লাহ সর্ম্পকে লিখেছেন তা কখনই সত্যের স্থান দখল করে না। তিনি
লিখেছেন কোরআনের এই ছোট আয়াতটির দিকে একটু বিশেষ ভাবে লক্ষ করে দেখুন যে
কুলিন নাফছি মিন আমরি রাব্বি বলা হয়নি। কেন বলা হয়নি, কারণ আল্লাহর কোন নফস
নাই। নফস যাদের আছে তাদের অবশ্যই একটি বার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে।
কিন্তু যেহেতু রূহু রবেরই আদেশ বলা হয়েছে সেই হেতু রূহ জন্ম-মৃত্যুর বৃত্তে
তথা বলয়ে অবস্থান করেনা। পৃ: ১৬ কোরআনুল মাজিদ কু: মু: ২য় খন্ড লাইন:
১১-১৫
ডা. বাবা আল্লাহকে সরাসরি রূহ সাব্যস্ত করার দলীল হিসেবে সুরা বনি ইসরাঈল
এর ৮৫ নং আয়াতকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এ আয়াতে রূহ শব্দটি ব্যবহৃত
হয়েছে, নফস ব্যবহৃত হয়নি। মুল আয়াত হল এইÑ
“ওয়া ইয়াছলুনাকা আনির রূহ কুলির রূহু মিন আমরি রব্বি ওয়ামা উতি-তুম মিনাল
ইলমি ইল্লা কলি-লা।”
আয়াতের অর্থ হল (হে মহাম্মদ) তারা (আহলে কিতাবের ধর্মীয় নেতাগণ তোমাকে
রূহু সম্পর্কে প্রশ্ন করেছে। বল রূহু আমার পালনকর্তার আদেশ। আর তোমাদেরকে
(রূহের)-জ্ঞান সম্পর্কে সামান্যতম জ্ঞানই দেওয়া হয়েছে।
এ আয়াতে রূহ শব্দটি এক বচন। এর অর্থ আত্মা আর আত্মা------শক্তি তার কারণ
মিন আমরি অর্থ আদেশ হতে রূহু বা আত্মা সৃষ্টি, অসৃষ্টি বস্তু নয়। হিন্দু
ধর্মে আত্মা পরম আত্মারই অংশ। পরমাত্মা বলতে কোন কিছু নেই যদি অনেকে ঈমান
হারা সুফি আল্লাহকে রূহে আযম বলে পরমাত্মাকে সর্মথন করেছেন। ডা. বাবা এ
আয়াতের রূহকে পরমাত্মা ভেবেই বলেছেন, “আল্লাহ কোন প্রাণ নহেন। কারণ আল্লাহ
তায়ালা এ আয়াতে যে ‘রূহ’ শব্দ প্রয়োগ করেছেন, আল্লাহ নফস হলে কুলির রূহ না
বলে কুলিন নাফস বলতেন। অতএব নফস না বলে আল্লাহ তায়ালা কুলির রূহ বলেছেন
বলেই আল্লাহ নফস নয় বরং তিনি রূহই।” লেখক ডা.বাবা নফছ শব্দটি কেন ব্যবহৃত
হয়নি তার জবাবে বলেছেন- “কারণ কোন নফস নেই। নফস যাদের সাথে তাদের অবশ্যই
এক বার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে। কিন্তু রূহকে যেহেতু রবেরই আদেশ বলা
হয়েছে সেই হেতু রূহ জন্ম মৃত্যুর বৃত্তে তথা বলয়ে অবস্থান করেনা যেহেতু
রবের আদেশ হল রূহ এবং এই রূহ নামক আদেশটি আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টি রাজ্যের
মধ্যে কেবল মাত্র দুটি জীবের সঙ্গে তথা দুইটি নফসের কাছাকাছি অতীব রুহু
রূপে অবস্থান করে। সেই দুটি জীবের নাম হল একটি জিন এবং অপরটি মানুষ।
ডা. বাবা জাহাঙ্গীর আল-সুরেশ্বরী কোরানুল মাজিদ নাম করণ করে তাই বইকেই
কোরান বলতে তা সংশয়ের সৃষ্টি করছে। আবার ছোট আকারে লিখেছেন বহু অনুবাদ ও
কিছু ব্যাখ্যা। সংশয়টা যদিও নাম করণ কোরানুল মাজিদের হুবহু অনুবাদ ও কিছু
ব্যাখ্যা। আর একটা মজার ব্যাপার হল নামের সঙ্গে বা ঈমান লেখা। বা ঈমান
কথাটি অর্থ দাড়াঁয় ঈমান বা বিশ্বাসের সঙ্গেঁ। কিন্তু আরও আর্শ্চয লাগে সুফি
বাদ প্রকাশনালয়ের প্রযত্মের নাম বে-ঈমান হোমিও হল দেখে। লেখক ও প্রকাশকের
বা- ঈমান ও বে-ঈমান দুটি শব্দ খাঁটিয়ে কি পাঠকদেরকে হিপনোটাইজ করতে চান
কিনা অথবা ইসলামের ঈমান নিয়ে মশকারী করতে চান কিনা?
লেখক আল- সুরেশ্বরী আল্লাহকে রূহ ভেবেছেন এবং সেই সংগে নফছকে মরণের স্বাদ
গ্রহণকারী বলেছেন। তাই আল্লাহ যদি নফছ হতেন তাহলে তাতে যা হত তাও বলেছেন
যেমনÑ কুলিন নাফছু মিন আমরে রব্বি বলা হয়নি। কেন বলা হয়নি? কারণ আল্লাহর
কোন নফছ নাই। নফছ যাদের আছে তাদের অবশ্যই একটি বার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ
করতে হবে। লেখক সোজা কথায় বলতে চাচ্ছেন যে প্রত্যেক নফছ যখন মরণের স্বাদ
গ্রহণ করবে তখন আল্লাহ নফছ হলে তার অবস্থা ওটাও হত। অর্থাৎ নফছ আল্লাহর
মৃত্যু হওয়া সাব্যস্ত হত (নাউজুবিল্লাহ)। বড়ই আফছোছ লাগে, আজকাল সমাজের
রন্ধ্রে রন্ধ্রে আরবী ভাষায় ব-কলম, শুধু বাংলা তরজমা পড়ে বিরাট- বিশাল
মুখাছছের হয়ে থাকেন। আরবী ভাষা ও ব্যাকরণ বলতে কিছুই জানেননা এবং জানলেও
চর্চা করেন না। ডাক্তার বাবা জাহাঙ্গীর একজন বিজ্ঞ মানুষ হয়েছেন বলেই তো বই
লিখেছেন। অথচ তার বিজ্ঞতা কুরআনের অনুবাদের ব্যাপারে বিজ্ঞতা তো দূরের কথা
বরং অজ্ঞতাই প্রকাশ পাচ্ছে। তার প্রমান তিনি বলেছেন আল্লাহর কোন নফছ নাই।
তিনি একথা দ্বারা খুবই হালকা হয়ে গেছেন, কেননা পবিত্র কুরআনের একাধিক
স্থানে আল্লাহ একটি নফছ বলা হয়েছে। আর দলিল সুরা আনয়ামের ৫১ আয়াত যেমন:
কাতাবা রব্বুকুম আলা নাফছিহির রহমাহ। অর্থ তোমাদের পালনকর্তা অনুগ্রহ করাকে
তার নফছের (সত্তার) উপর ফরজ করেছেন। এ আয়াতে প্রমানিত হচ্ছে আল্লাহ একটি
নফছ। তাহলে ডা. সুরেশ্বরী যে বলেছেন আল্লাহ নফছ নন কিন্তু কুরআনের আনয়াম
সুরার ৫৪ আয়াতে আল্লাহ নিজত্বকে নফছ বলে প্রকাশ করেছেন। এভাবে আরও দুটি
আয়াতে আল্লাহর নফছ থাকার স্বীকৃতি দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের এ আয়াত গুলোর
খবর না রেখে তিনি কি করে বললেন আল্লাহর নফছ নেই। ডা. সুরেশ্বরী নফছ বলতেই
মৃত্যু হওয়া যেমন কুল্লু নাফছিন জা-য়িকাতুল মাউত, প্রত্যেক নফছই মৃত্যুর
স্বাদ গ্রহণকারী এ নফছ বা আনফুছে সবই সৃষ্ট জগতের প্রাণী কুলের নফছ। আর
আল্লাহ যেহেতু ওয়াজিবুল ওয়াজুদ চিরস্থির সত্তা সেজন্য তার নফছ-ও আমৃত্যু
সত্তা। তাই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী নফছ আল্লাহর নফছ এক হতে পারেনা। আল্লাহ
ছাড়া কোন কিছুই অসৃষ্ট নয়। আল্লাহই কেবল অসৃষ্ট তাই সমস্ত অর্থে মানুষের
মধ্যে যে রূহ ফুঁকে দেওয়া হয়ে থাকে সে রূহ-ও অসৃষ্ট নয়। সমস্ত রূহই সৃষ্ট ও
ধ্বংসশীল। বিধায় আল্লাহ রূহ হলে আল্লাহও ধ্বংসশীল হতেন ডা. সুরেশ্বরী
রূহকে আমৃত্য সত্তা ভেবে নফছকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণকারী বলার প্রমান
উপস্থাপন করেছেন। যা একেবারেই কান্ডজ্ঞানহীন উক্তি। ডা. সুরেশ্বরী
আরবী-ভাষায় দুর্বল হওয়ার কারণেই বুঝতে পারেন নি যে কুলির রূহু মিন আমরি
রাব্বি, আল্লাহর আমর বা আদেশ সৃষ্ট ঠাহর করতে পারেন নি।
ডা. জাহাঙ্গীর বাবা যে আরবী ভাষায় অনভিজ্ঞ তার আর একটি প্রমান পাওয়া যাচ্ছে
তিনি আলোচ্য রূহের আরও গভীর ব্যাখ্যার অবতারণা করে নিজেকে খুবই পান্ডিত্য
ফলিয়েছেন। যে আয়াত নিয়ে তিনি আলোচনা রেখেছেন সেটি হল সুরা কাদরে বর্ণিত
রূহের আলোচনা। আয়াতটিতে বলা হয়েছেÑতানাজ্জালুল মালা-য়িকাতু ওয়ার রূহÑ
ফেরেস্তাগণ ও একটি রূহ অবতীর্ণ হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে ডা. বাবা লিখেছেন।
কোরান এর সাতানব্বই নম্বর সূরা কদর এর চার নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
তানাজ্জালুল মালাইকাতু ওয়ার রুহ... আমরিন। তাহার মধ্যে ( সেই রাত্রিতে)
অবতরণ করিয়াছে ফেরেস্তাগণ এবং রূহ উহার মধ্যে তাহাদের রবের অনুমতিতে
প্রত্যেক আদেশ হইতে।
এ আয়াতে আমর শব্দটির অর্থ সম্পর্কে অধিকাংশ অনুবাদক বলেছেন। যেমন:
সেই রাত্রিতে ফিরিস্তাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাহাদের
প্রতিপালকের অনুমতি ক্রমে Ñ ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত আল-কুরআনুল
করিম। পৃ: ১০২৫।
ওসমে (হর কাম) ছর আঞ্জাম দেনে কো আপনেকে হুকুম ছে। সকল কাজের ব্যবস্থা করার
জন্য তার আদেশে ফেরেস্তা সকল ও রূহ জিব্রাঈল অবতীর্ণ হয়ে থাকে। (টিকা)
রূহের অর্থ হজরত জিব্রাঈল (আ:) পৃ: ১৭৩৪Ñ কুরআনুল করিমÑ শাহ ফাহাদ
প্রিন্টিং কমপ্লেকস। পৃ: ১৭৩৪ টিকার অর্থ: রূহের অর্থ হজরত জিব্রাঈল (আ) ।
অর্থ কদরের রাত একহাজার মাস থেকেও শ্রেয়: এই (রাতে) আল্লাহর হুকুমে
ফেরেস্তা মন্ডলীও রূহ (যিনি জিব্রাঈল) অবতীর্ণ হয়।
পর পর বাংলা উর্দু ও ইংরাজিতে অনুদিত রূহকে জিব্রাঈল উল্লেখ করা হয়েছে।
এমনিভাবে যতই অনুবাদ দেখা যাক তারা অধিকাংশ অনুবাদ কই রূহ শব্দের অর্থে
জিব্রাঈল ধরেছেন। এবং আমর শব্দের অর্থ আদেশ বা কাজ ধরা হয়েছে।
উপরোক্ত সুবিখ্যাত বিভিন্ন ভাষায় আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অনুবাদক গণ
রূহ শব্দের দ্বারা হযরত জিব্রাঈলকে বুঝালেও ডা. আল সুরেশ্বরী দাম্ভিক ভাবে ঐ
সব অনুবাদকদের তৃচ্ছ তাচ্ছিল্য করে নিজের এমন জঘন্য বুঝ প্রতিষ্ঠা করেছেন
যা খুবই লজ্জা জনক। বলেছেন যা উল্লেখ করতে লজ্জা লাগে। তিনি লিখেছেন “
সাধকেরা একটানা ধ্যান সাধনা করার পর আল্লাহর বিশেষ রহমত প্রাপ্ত হলেই রূহের
অতীব সূক্ষ্ম রূপটিকে পরি পূর্ণরূপে দেখতে পেয়ে অবাক বিস্ময়ে হতভম্ব খেয়ে
যায়। এই পরিপূর্ণতার প্রশ্নে সাধকদের নিকট রূহের দর্শনে ফানা বাকার এমন
রহস্যময় লীলা চলে যে সাধারন মানুষ তো দুরে থাক বরং বড় বড় বিদ্যান প-িতরাও
এদের বিষয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন। রূহের পরিপূর্ণ জাগ্রত অবস্থানটি যে সাধকের
মধ্যে অবস্থান করে তিনিই বান্দা নেওয়াজ তথা আল্লাহর বিশেষ।
ডা: বাবা জাহঙ্গীর রূহকে জিব্রাঈল ফেরেস্তা বলার উক্তিকারীদের তুচ্ছ
তাচ্ছিল্য করে পাঠকের কাছে ধরে বাহাদুর হওয়ার গোপন লালসার অস্তি¡বতা
দেখিয়েছেন। কিন্তু তিনি রূহকে যেভাবে গ্রহণ করেছেন তাতে তার ওজন একেবারেই
হালকা হয়ে গেছে। তিনি তার বইয়ের কয়েক পাতায় রূহ সম্পর্কে বলেছেনÑ
এক: কোরানের এই ছোট আয়াতটির দিকে একটু বিশেষভাবে লক্ষ করে দেখুন যে, কুলিন
নাফছি মিন আসরি রাবাধ বলা হয়নি। কেন বলা হয়নি। কারণ আল্লাহর কোনো ফস নাই।
নফস যাদের আছে তাদের অবশ্যই একটি বার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু
যেহেতু রূহ রবেরই আদেশ বলা হয়েছে সেই হেতু রূহ জন্ম মৃত্যুর বৃত্তে বলয়ে
অবস্থান করেনা। পৃ: ১৬ কো: ২য় খন্ড
দুই: অনেক অনুবাদক না-বুঝে না শুনে রূহকে জিব্রাঈল ফেরেস্তা বলে অনুবাদ
করেছেন। সহজ- সরল পাঠকের এ-রকম খা--- অনুবাদ পড়ে পড়ে আস্থা থাকার কথা নয়
এবং এখনই এক ইসলামের মধ্যে ফেরকা বাজি গুরু হয়ে যায়। পৃ: ১৮ ২য় খন্ড।
তিন: এই রূহের পরিপূর্ণ দর্শনটিকেই আমরা তথা মুসলমানের নুরে মোহাম্মদের
দর্শন বলে থাকি। আবার অন্য যে কোনো ধর্মের যে কোনো সাধক যদি পরিপূর্ণ রূহের
দর্শনটি লাভ করে থাকেন তা হলে আমার বলার কিছুই থাকেনা। কারণ আল্লাহ এক,
তার নরুও এক এবং বীজরূপী রূহের অবস্থানটিও এক। এখানে দুইয়ের কোন স্থান নাই।
দুইয়ের স্থান টিকে স্বীকার করে নিলেই শেরেক করা হয়ে যায়। ইহাই আসল শেরেক।
মুনের কথায় শেরেকের কোন দাম নাই।
চার: এ আয়াতে বর্ণিত রূহ শব্দটির মর্মার্থ বুঝতে না পেরে অনেক অনুবাদক এই
রুহকে ‘ওহি’ অনুবাদ করেছেন। কোথায় কোথায় ওহী। আল্লাহ কি রূহের স্থলে ওহী
শব্দটি বলতে পারতেন না? ১৯ ২য় খন্ড
পাঁচ: জাগ্রত রূহের অধিকারী সাধকেরা আকৃতিতে মানব হলেও মানবের স্বাভাবিক
ভাব ভঙ্গি হতে সম্পর্ণ বর্জিত অবস্থায় অবস্থান করে। এই জাতীয় সাধকদেরকে
বান্দা নেওয়াজ বলা হয়? আবার কখনো ওয়াজ হুল্লাহ বলা হয়।-এই সাধকেরাই আল্লাহর
রুপটি ধারণ করে আছেন। ..............কারণ সাধকই একই নুরের অধিকারী। পৃ:২১
২য় খন্ড
ছয়: আল্লাহর কোনো নফছ নাই। যেহেতু আল্লাহর কোনো নফসই নাই। সুতরাং (নফছ)
ফুৎকার দেবার প্রশ্নই ওঠে না। পৃ: ২২ ২য় খন্ড
সাত: আল্লাহ কখনই মানুষ হতে কোনো এক সূদুর স্থানে অবস্থান করেন না যার জন্য
এত বড় লম্বা স্থানটি অতিক্রম করে আল্লাহর নিকট যেতে হবে। পৃ:৪৪ ২য় খন্ড
আট: আপন নফসের মধ্যে রুহুটি যখন পরিপূর্ণ রূপ ধারন করে, সেই পরিপূর্ণ
রূপটিই হলো আল্লাহর রূপ এবং যেখানেই আল্লাহর রূপের পরিচয়টি ধরা দেবে যেখানে
ফেরেস্তাদের আগমনটি অবধারিত।
পৃ:৪৪ ২য় খন্ড।
নয়: পক্ষান্তরে, আল্লাহ সূরা মারেজ এর তেইশ নম্বর আয়াতে বলেছেন
আল্লাজীনাহুম আলা জ্বায়িমুনাÑ অর্থাৎ যারা --- সালতের ওপর তথা চব্বিশ ঘন্টা
সালাতের ওপর অবস্থান করে তারাই মুসুল্লি। এখানে একটু লক্ষ করার বিষয়টি
হলো, কোরআন দায়েমি সালাতের কথাটি একদম সোজা-সুজি বলে দিলেন। পক্ষান্তরে
ওয়াকায়িা কথাটি কোরআনে সোজাসুজি বলা হয়নি অথবা বলেননি।পৃ:৪৫২য় খন্ড
দশ: ইউলকির রুহা মিন আমরিহী, সূরা মোমিনের ১৪ আয়াতের ব্যাখ্যায় ডা:
সুবেশ্বরী বলেছেনÑ “এই আয়াতে রুহকে নিক্ষেপ করার কথাটি বলা হয়েছে তথা রুহকে
ক্ষেপন করা হয়েছে। এই রুহকে ক্ষেপন করার কাজটি করা হয় তাঁর (আল্লাহর)।
ডাঃ জাহাঙ্গীর পবিত্র কুরআনকে ----- কুরআন বলে যারপরনাই তাচ্ছিল্যের বস্তু
করে আর একখানি বইয়ে লিখেছেন- যার প্রতিবাদ হওয়া দরকার।
কোন যদি যদি ডা: সুরেশ্বরীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বসেন তাহলে দেখা যেত
কুরআনকে কিভাবে তাচ্ছিল্য করা হয়। তিনি লিখেছেনÑ
১। মোরশেদের বুকের ভেতর যে সত্য নুরের রহস্যময় বিদ্যার অবস্থান উহা কি
কাগজের পাতার বুকে আছে অথবা থাকতে পারে? পৃ: ৫৭
২। মুরীদ যখন গুরুর সত্য নুর লাভ করেন তখন উভয়ের অবস্থাটি অনেকটা পানি ও
চিনির মত। দুটো মিশিয়ে ফেললে একাকার হয়ে যায়। এটাকেই বলা হয় হুজুরী বিদ্যা
এবং ইহা নবীর একান্ত গোপনীয় বিদ্যা এবং এই রকম নবীর গোপনীয় বিদ্যার আকর্ষণ
কাগজের মধ্যে পাওয়া যায়না। পৃ: ৫৭
৩। একদম সোজা আর স্পষ্ট করে বলে দিলাম এবং আমার এই কথা কয়টি সবসময় মনে
রাখতে চেষ্টা করবে যে, পুরানে কোরানে নাহি পারে দর্শন। অর্থাৎ পুরানেও
পারেনা এমনকি কাগজের কোরানেও নয়। বরং বৃথা সময় করবে। পৃ: ৬৭
হজরত উসমান (রা) যখন কাগজের মধ্যে কোরানকে একত্রিত করেছিলেন, তখন মাওলানা
আলী বলেছিলেন যে, এই কোরান তো কথা বলেনা কিন্তু আমি হলাম জীবন্ত কোরান।
তুমি কি এ রকম কথা যা আমি বললাম তা প্রভুর মুখে শুনতে পাওনি? Ñপৃ: ৬৬
এমনি ভাবে ডা. সুরেশ্বরী রব-এর পরিচয় ন্দিতে গিয়ে নিকৃষ্ট উদাহরণ দিতেও
কুণ্ঠা বোধ করেন নি। যেমনÑ
“নফছের ভিতর যে বীজ রূপে রূহ এর অবস্থান উহার পূর্ণ জাগ্রত অবস্থায়
বিকাশমান রূহকে বলা হয় রব তথা প্রতিপালক তথা বিধাতা তথা এক কথায় আল্লাহ।
পৃ: ৭৭
ডা. সাহেব নবী (ছ) কে উম্মী বলার ও এক অদ্ভূত বিবরণ দিয়েছেন যেমন : উম্মী
মহানবীর নিরক্ষতার বিশাল পর্বতের ভেতর যে ঙ্গানের উদগীরণ সেটা পবর্তের মাথা
ফেটে অগ্রুত পাতের বিষ্ময়কেও হার মানায়। সেই ঙ্গানের আলোর ভাষা না থাকলেও
ভাষায় শব্দ গুলো আপনিই তৈরী হয়ে যায়................ উম্মীর রহস্য খুলতে
বাধা ধরা কথা দিয়ে নয় বরং আপনার ভেতর আপনাকে খোজার সাধনায় একটি নির্মল
শুদ্ধ সাধনার আন্তরিকতা।” পৃ: ৮১
৪। অনেক অনুবাদক না বুঝে, না শুনে রুহকে জিব্রাঈল ফেরেস্তা বলে অনুবাদ
করেছেন। সহজ সরল পাঠকের এ রকম খাস্ত অনুবাদ পড়ে পড়ে আস্তা থাকার কথা নয় এবং
তখনই এক ইসলামের মধ্যে ফোকরাবাজি শুরু হয়ে যায়। পৃ: ১৮, ২য় খন্ড।
৫। ইউলকির রুহাম মিন আমরিহি আলা মাই ইয়াশাউ। নিক্ষেপ করনে রুহ তাহার আদেশ
হইতে যাহার উপর ইচ্ছা করেন।
এই আয়াতে রুহকে নিক্ষেপ করার কথাটি বলা হয়েছে তথা রুহকে ক্ষেপন করা হয় বলা
হয়েছে। এই রুহকে ক্ষেপন করার কাজটি করা হয় তার (আল্লাহর) আদেশ যার উপর তিনি
(আল্লাহ) ইচ্ছা করেন। আল্লাহর ইচ্ছার উপযুক্ত বান্দা হতে পারলেই সেই
বান্দার উপর তার আদেশ হতে রুহ নিক্ষেপ করা হয়।
অবশ্য আল্লাহর তৈরী প্রতিটি মানুষের সঙ্গে রুহুকে অতীব সুক্ষ্ম বীজ রুপে
স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে তথা প্রতিটি মানুষের সঙ্গেই আল্লাহ প্রতিপালকরুপে
তথা রবরুপে বিরাজ করছেন।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ডা সুরেশ্বরী, জিব্রাঈল (আ)-কে রুহ অস্বীকার করে রুহকে
মানষের সুক্ষ্ম বীজ রুপে স্থাপিত রব হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তার মতে
মানুষেরর বীজ রুপে রব।
৬। কোরান বলছে যে, নাহনু আকবাবু ইলাইহি মিন হাবলিল ওয়ারিদ, তথা, আমরা তোমার
জীবন-রগের নিকটেই অবস্থান করছি। যেহেতু আল্লাহ মানুষের জীবন রগের অতি
নিকটে অবস্থান করনে সেই হেতু মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। পৃ:২৪৭
৭। আকৃতি বিকৃতি করে দেওয়ার অর্থটি (ওয়ালাই নাশাউ লা মাসখনাহুম-৬৭ আয়াত
ইয়াসিন) হলোএকটি নফসের মনোবাস্তা গুলো নি¤œমানের করে দেওয়া। এই ভালো মন্দ
করার ইচ্ছা শক্তিটি কেবল মাত্র জ্বীন এবং মানুষকেই দেওয়া হয়েছে। তাই জ্বীন
এবং মানুষের আল্লাহর ওলি হওয়ার যোগ্যতাটি অর্জন করার সুযোগটি রাখা হয়েছে।
এক জীবনে এগিয়ে গিয়ে কামিয়াব হওয়ার সৌভাগ্য না হলেও বার বার এই দুনিয়ার
জীবনে ফিরে আসতে পারবে এবং ভালো আমলের দ্বারা আল্লাহর দিকে অগ্রসর হতে
পারবে। এটাই মানুষের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ । মুতরাং ফিরে আসবার সুযোগ
দানের বিষয়টিও আল্লাহরই দেওয়া একটি বিশেষ রহমত। ইয়ার জিউন শব্দটির অর্থ হলো
ফিরে আসা। মৃত্যুর পরে পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে আসা। পৃ: ২৪৩: ২য় খন্ড
৮। বাংলার বুকে একমাত্র নির্ভীক সুফিস¤্রাট নুরে তবাসসুম শাহ সুফি বাবা
লালন শাহ এত উলঙ্গ করে বিষয়টি বলে গেছেন যা অন্য কোনো ইসলাম গবেষকের পক্ষে
তো বলার প্রশ্নই ওঠেনা; কারণ, বলবে কেমন করে, বুঝলে তো বলতে পারবেন! আসলে
এরা বুঝতেই পারেননি, তাই বলার প্রশ্নটি অবান্তর। তিনি (লালন) বলেছেন যে
আমার গুরু সিরাজ সাঁই তো আমার রসুল এবং সিরাজ সাঁইর কথামতো চলাফেরা
৯। সব কর্মের শেষ কর্মটি হলো আপন-আপন পবিত্র নফসের সঙ্গে শয়তানকে যে
খান্নাসরুপে মিশিয়ে একাকার করে দেওয়া হয়েছে সেই খান্নাস হতে মুক্তি পাওয়া
এবং ত্রাণ পাবার তরে বিরাট ধৈর্যধারণ করে ধ্যানসাধনার মোরাকাবা-মোশাহেদার
দায়েমি সালাতের মাধ্যমে আপন প্রতিপালক নামক রবের পরিচয়টি লাভ করা। ইহাই
প্রধম সিদ্ধান্ত, ইহাই মাঝখানের সিদ্ধান্ত, ইহাই শেষ সিদ্ধান্ত এবং
সর্বকালের সর্বযুগের ইহাই একমাত্র সিদ্ধান্ত আর সেই সিদ্ধান্তটির আরেক নাম
হলো: মান আরাফা নাফসাহু ফাকাদ আরাফা রাববাহুÑ তথা, যে তার নফসকে চিনতে
পেরেছে, কোনো সন্দেহ নাই, সে তার রবকে চিনে ফেলতে পেরেছে। সুতরাং, অধম
লিখকের পক্ষে আর কিছু লিখবার মতো তথা প্রকাশ করার মতো বিষয় জানা নাই।
পৃ:২৫৫ ২য় খন্ড।
১০। তার মাত্র দেড় হাজার আগে মহানবির মহাপবিত্র ঠোঁট মোবারক হতে জানতে
পারলাম, মান আরাফা নাফসাহু ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু তথা, “যে তার আপন নফসটিকে
চিনতে পেরেছে, সে তার প্রতিপালককে চিনে ফেলেছে।” পৃ: ৬৪
Comments
Post a Comment