ডা. বাবা জাহাঙ্গীর বা-ঈমান আল-সুরেশ্বরী লিখিত তফছিরের বিকৃত ব্যাখ্যা প্রসংগ- আল্লামা সোবহান ডা বাবা জাহাঙ্গীর বা ঈমান আল-সুরেশ্বরী “কোরআনুল মাজিদ হুবহু অনুবাদ ও কিছু ব্যাখ্যা” নামকরণ করে কুরআনের আয়াতের যে সমস্ত অপব্যাখ্যা রেখেছেন তা একেবারেই উদ্দেশ্য মুলক। এ ব্যাখ্যা ইসলামের মৌলিক বুঝ ও ঈমান হরণ করার বানাউটি উক্তি করে বাংলার মুসলিম নর নারীকে পথভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র হিসেবে ধরা পড়েছে। নিচে ডা. সুরেশ্বরীর লিখিত কোরানুল মাজিদ ২য় ও ৩য় খন্ড এবং “এলমে মারেফত” নামের তিনটি কিতাব হতে দশটি অপব্যখ্যা মুলক উক্তি তুলে ধরা হল: এক: ওয়ামা আল্লামনাহুশ শিঅরা ওয়ামা ইয়ামবাগী লাহু -এবং আমরা (বহুবচন বলা হয়েছে) তাহাকে কবিতা শিখাই নাই এবং তাহার জন্য (তাহা) শোভনীয় নহে। কু:ম: ২য় খন্ড: পৃ: ২৪৪ ছুরা ইয়াছীন-২৯ ব্যাখ্যা তার পরের দুটো আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে, তার হাবিবকে তথা মহা নবীকে কবিতা শেখানো হয়নি, বরং আল্লাহর জাত নুর হতে নুরী কোরান দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যোগাযোগ তথা সংযোগ রেখেই এই নুরী কোরান দেওয়া হয়েছে। আসলে নুর, কিন্তু ভাষার শব্দাক্ষরে লিখিত কোরআন বলেও স্বীকার করে পৃথক অক্ষর বিহীন নুরী কোরআন থাকার প্রস্তাব জানিয়ে নুরী কোরান ও অক্ষর কোরআন নামে দুই প্রকার কুরআন থাকার পক্ষে সমর্র্থন দিয়েছেন। অক্ষর বিশিষ্ঠ ত্রিশ পারার কোরআনই নুর কুরআন তা স্বীকার করেন নি। দুই: পবিত্র কোরআনের ছুরা মায়ারিজের ২৩ নং আয়াত যেমনঃ আল্লাজীনা হুম আলা ছলাতিহিম দা-য়িমুন। যারা তাদের নামাজে (পাচঁ ওয়াক্ত নামাজে) সার্বক্ষণিকভাবেরত থাকে। ব্যাখ্যা: সর্বকর্মের শেষ কর্মটি হল আপন আপন পবিত্র নফসের সঙ্গে শয়তানকে যে খান্নাসরুপে মিশিয়ে একাকার করে দেওয়া হয়েছে যে খান্নাস হতে মুক্তি পাওয়া এবং ত্রাণ পাবার তরে বিরাট ধৈর্যধারণ করে ধ্যান সাধনার মোরাকাবা মোশা হেদার দায়েমি সালাতের মাধ্যমে আপন প্রতি পালক নামক রবের পরিচয়টি লাভ করা। ইহাই প্রথম সিদ্ধান্ত.......... সেই সিদ্ধান্তটির আরেক নাম হলো : মান আরাফা নাফছাহু ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু তথা যে তার নফসকে চিনতে পেরেছে, কোনো সন্দেহ নাই, সে তার রবকে চিনে ফেলতে পেরেছে। পৃ:২৫৫ কু:ম: ২য় খন্ড। ডা সুরেশ্বরী তার ব্যাখ্যায় মান আরাফা, যা কোরআন হাদীস কোনটাই নয় এটি হল গ্রীক দর্শনের একটি শ্লোক নো দাইছেলফ। পবিত্র কুরআনের দায়েমী নামাজকে গ্রীক দর্শনের কুফোরী শ্লোকের সাথে মিলিয়ে আত্মাকেই খোদা সাব্যস্ত করেছেন। যা আপত্তিকর বটেই। তিন: ডা বাবা জাহাঙ্গীর ছুরা ইয়াসিন-এর ব্যাখ্যায় চরম ধৃষ্টতা দেখিয়ে বলেছেন- ইশারা বা ইঙ্গিতের দ্বারা ব্যক্ত ‘ইয়া’ এবং সিন হতে এ সুরাটির নাম রাখা হয়েছে ইয়াসিন। সিন অক্ষরটি দিয়ে সিরাজাম মুনিরা তথা অতিশয় দ্বীপ্ত আলো বোঝানো হয়েছে। আল্লাহর জাত (মুল) নুর হতে {সেফাতি (গুনবাচক) নুর নহে} মহা নবীর আগমন এবং তিনি আদি নুর। এই অতিশয় দ্বীপ্ত আলো মানবরুপে পৃথিবীর বুকে মানবীয় দেহরুপী আবরণের মধ্য দিয়ে আগমন করেছেন।.............. মহানবী হলেন আল্লাহর হাবীব।..... হাবীব কথাটি মহানবী মাশুক তথা প্রেমাস্পদ এবং আল্লাহ স্বয়ং হলেন প্রেমিক বা আশেক- সুতরাং এ কথাটি বলতে কি দোষ আছে যে, অপ্রকাশিত নুরটি আল্লাহ এবং প্রকাশিত নুরটির নাম নুরে মহাম্মদী আওয়ালুনা মহাম্মদ- তথা আদিতে আমরা মুহাম্মদ আসওয়াতুনা মুহাম্মদ মধ্যখানেও আমারাই মুহাম্মদ আখেরুনা মহাম্মদ তথা সর্বশেষে ও আমরা মুহাম্মদ এবং কুললানা মুহাম্মদ তথা আদি মধ্য অন্ত এবং সর্বঅস্থায় আমরাই মুহাম্মদ। পৃ:১৭৯-৮০ কু: মু: ২য় খন্ড ডা বাবা জাহাঙ্গীর পবিত্র কুরআনে ও হাদীসে নবী মুহাম্মদ (সা)-কে বাশার রছুল বলা সত্ত্বেও ডা বাবা জাহাঙ্গীর নুরের রছুল বলেছেন। যা ডাহা মিথ্যা কথা। নুর থেকে ফেরেস্তার সৃষ্টি যা হাদীছে রয়েছে। রছুল মিন আনফুছিকুম অর্থে আমাদের ন্যায় রছুলকে বাশার বা মাটির মানুষ হিসেবেই ঘোষনা রয়েছে।
চার: অনেক অনুবাদক না বুঝে, না শুনে রুহুকে জিব্রাঈল ফেরেস্তারা বলে অনুবাদ করেছেন। সহজ সরল পাঠকের এ রকম খাস্তা অনুবাদ পড়ে পড়ে আস্তা থাকার কথা নয় এবং তখনই এক ইসলামের মধ্যে ফেরকাবাজি শুরু হয়ে যায় কোরানুল মাজীদ পৃ: ১৮, ২য় খন্ড। পাঁচ: আকৃতি বিকৃতি করে দেওয়ার অর্থটি (ওয়ালাউ নাশাউ লা মাসাখনাহুম- ৬৭ আয়াত ইয়াসিন) হলো একটি নফসের মনোবাঞ্ছা গুলো নি¤œমানের করে দেওয়া। এই ভালো মন্দ করার ইচ্ছা শক্তিটি কেবল মাত্র জ্বীন এবং মানুষকেই দেওয়া হয়েছে। তাই জ্বীন এবং মানুষের আল্লাহর ওলি হওয়ার যোগ্যতাটি অর্জন করার সুযোগটি রাখা হয়েছে। এক জীবনে এগিয়ে গিয়ে কামিয়াব হওয়ার সৌভাগ্য না হলেও বার বার এই দুনিয়ার জীবনে ফিরে আসতে পারবে এবং ভালো আমলের দ্বারা আল্লাহর দিকে অগ্রসর হতে পারবে। এটাই মানুষের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ। সুতরাং ফিরে আসবার সুযোগ দানের বিষয়টিও আল্লাহরই দেওয়া একটি বিশেষ রহমত। ইয়ার জিউন শব্দটির অর্থ হলো ফিরে আসা। মৃত্যুর পরে পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে আসা। কোরানুল মাজীদ পৃ: ২৪৩, ২য় খন্ড। ছয়: ফালা সাদদাকা ওয়ালা সাললা। ফালা (সুতরাং না) সাদদাকা (সত্য বলিয়া মানিয়া লওয়া, বিশ্বাস করা, সত্য প্রমাণ করা) ওয়ালা (এবং না) সাললা (সালাত করা, টু পারফর্ম দ্য সালাত, প্রে, ওয়ারশিপ)। = সুতরাং বিশ্বাস করে নাই এবং সালাত করে নাই। ব্যাখ্যা: এই দুনিয়াতে অনেক মানুষ আছে যারা প্রকৃতকে প্রকৃত বলে জানবার এবং মানবার মন ও মানসিকতা আপন জীবনে ফুটিয়ে তুলতে পারে নাই, এবং সালাতও করে নাই, বরং প্রকৃত সত্যের উপর মিথ্যা লেপন করে দিয়েছে। এই সুরাটি মক্কায় নাজেল হয়েছে। সেই সময় মক্কাবাসীরা মহানবির ডাকে সাড়া না দিয়ে অবহেলা করে চলে যেত এবং তারা গর্ববোধ করতো এই বলে যে মহানবির ডাকে সাড়া দেয় নাই। আরেকটি বিষয় এখানে খুব ভালো করে মনে রাখতে হবে যে আনুষ্ঠানিক নামাজের আদেশ-নির্দেশ মক্কায় আসে নাই। সুতরাং, মহানবির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রাখাই হলো সালাতের আসল কথা। যেহেতু আনুষ্ঠানিক নামাজ তথা সালাতের আদেশটি আসে নাই সেই হেতু আনুষ্ঠানিক নামাজের প্রশ্নই ওঠে না। অনেকে ভুল করে আনুষ্ঠানিক নামাজের কথাটি তুলে ধরেন। সালাতের কথাটি আয়াতে আছে অথচ আনুষ্ঠানিক সালাতের নিদের্শ নাই, তাহলে সেই সালাত কোন সালাত? কেমন সালাত? কী রূপের সালাত? এর ভেদ-রহস্য যারা জানতে চান তারা নির্জনে ধ্যানসাধনায় মগ্ন থাকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন। সাত: আপন নফসের সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে থাকা খান্নাসের মোহ মায়ার বন্ধন হতে মুক্তি লাভ করাটাই হলো শান্তি। এই মোহ মায়ায় বন্ধন হতে মুক্ত হতে বাঁচলে ধ্যান সাধনার মোরাকাবা মোশাহাদাটি অবশ্যম্ভাবী। কারণ মহানবি হেরাগুহায় যে পনেরটি বছর ধ্যান সাধনাটি করেছেন..........। পৃ: ১৯২ কু: ম: ২য় খন্ড খান্নাছের ওয়াসওয়াছা বা কুমন্ত্রণা দাতা। এ খান্নাছ তো নফছের সাথে মিশে থাকার বিষয় না এবং মিশেই যদি থাকে তাহলে মানুষ মিশে থাকবে কি করে। কারণ খান্নাস তো মানুষের মধ্যেও আছে। আট: কোরানের একটি আয়াতেও ফেরেস্তাদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব যথা ক্রাউন অব দ্যা ত্রিয়েশন বলা হয় নাই। পৃ:২০৩, লাইন ৫-৮ লাইন ফেরেস্তাদের এ রকম ভালো মন্দ করার বৃত্তি সমুহ দান করা হয় নাই। পৃ: ২৪৩। আদমকে কেন সেজদা দিতে আদেশ করা হলো? -যেহেতু আদমের মধ্যে আল্লাহ রুহ ফুৎকার করে দিয়েছেন তথা আল্লাহ নুরে মুহাম্মদি রূপে আদমের ভিতর নিজেই অবস্থান করছেন। পৃ:১১৬ , ২য় খন্ড । তা ছাড়া কোরান এই মানুষকেই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব (ক্রাউন অব দ্যা ত্রি-য়েশন) বলে ঘোষনা করেছেন। পৃ: ১৪ ২য় খন্ড
Comments
Post a Comment