মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম খুশী ও আনন্দিত হওয়ার ঈদ , শর'ঈ ঈদ নয়
- উপমহাদেশ সহ বিশ্বের বর্তমান সময়ের মুসলিম আলেম,স্কলার,গবেষক,মনীষী,শায়খুল ইসলাম ডঃ তাহির উল কাদেরী
Part-1
মিলাদুন্নবী সা: উদযাপন উপলক্ষে খুশী উদযাপন করা শর'ঈ কোন ঈদ নয় আর না আমরা এটাকে শর'ঈ ঈদ মনে করি । তারপরও এটা শর'ঈ ঈদের চেয়েও বেশী বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এবং অনেকগুণ বেশী মর্যাদাময় দিন । এ কারণে এই দিনে খুশী উদযাপন করা একটি স্বভাবজাত কাজ । যদি এটাকে খুশী ও আনন্দিত হওয়ার ঈদও বলা যায় তা কোন অতিরিক্ত কিছু হবে না । ঈদে মিলাদুন্নবী সা: যদিও বছর ঘুরে একবার আসে কিন্তু মিলাদ মাহফিল শিরোনামে হুযূর সাঃ - এর স্মরণ ও সীরাতের আলোচনা সারা বছরই হয়ে থাকে । এটাকে কাল ও স্থানের সাথে সীমাবদ্ধ করা যায় না । আর তাজেদারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম - এর শুভজন্মের দিবসকে ‘ ঈদ ’ নামে এ জন্য নামকরণ করা হয় যে , সাধারণত লোকেরা নিজেদের প্রত্যেক বড় খুশী ও আনন্দ প্রকাশের জন্য ' ঈদ ' শব্দ ব্যবহার করে থাকে । মিলাদুন্নবী সাঃ- এর ' দিবস ' প্রসিদ্ধ অর্থে ঈদের দিন । যেমন কোন একান্ত আপনজন বন্ধুর আগমনে বলা হয় যে , তাঁর আসাটা ঈদ । তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়া ঈদ । আরবী ভাষায় এ কবিতা এ অর্থকে সমর্থন করে عيد و عيد و عيد صرن مجمعة وجه الحبيب و عيد الفطر و الجمعة
-আমাদের জন্য তিনটি ঈদ একত্রিত হয়েছে । প্রেমাস্পদের চেহারা , ঈদুল ফিতর এবং শুক্রবার । হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম - এর শুভ জন্মদিবসকে ‘ ঈদে মীলাদ ' এবং ' ঈদে নবুবী ' নামে আখ্যায়িত করার দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে ,আমাদের কাছ শরীয়তগতভাবে ঈদ শুধু দু'টিই ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা । অথচ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে জানা যায় যে ,ঈদে মিলাদ ওই দু'ঈদের চেয়ে অনেকগুণ মর্যাদামণ্ডিত ও বৈশিষ্ট্যের দাবীদার । হুযূর সাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াসাল্লাম - এর সদকায় ও মাধ্যমেই আমরা সকল ঈদ ,সকল পালা - পর্বন এবং ইসলামের সকল মর্যাদাপূর্ণ দিবস পেয়েছি । হুযূর সাল্লাল্লাহ আলায়হি ওয়াসাল্লাম - এর শুভ জন্ম যদি না হতো তবে না নবুয়্যত প্রকাশ পেতে , না কুরআন অবতীর্ণ হতো , না মি'রাজ হতো , না মহান বিজয় ভাগ্যে জুড়তো । এ সব কিছুই হুযূর সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এবং হুযূর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম - এর মিলাদের সদকা ও মাধ্যমে ভাগ্যে জুড়েছে । প্রিয় নবী (সাঃ)- এর আশেকগণ প্রতিটি খুশী ও আনন্দ হওয়ার মুহূর্তে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে থাকেন ।আর এ খুশী ও আনন্দের অনুভূতি হুযূর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম - এর শুভ জন্মের মাস 'রবিউল আওয়াল' - এ আরো বেগবান হয়ে উঠে এবং হুযূর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম - এর মিলাদের দিন সোমবারে খুশী ও আনন্দের সীমা থাকেনা ।এ মুহূর্তগুলোতে মিলাদ মাহফিল কেন করা হয় বলে আপত্তি উত্থাপন করা সঙ্গত নয় । কারণ ,আপত্তি করা দ্বারা এ কথা বুঝায় যে ,তোমরা নিজেদের নবীর শুভজন্মে খুশী হও কেন ? অথবা অন্যভাবে একথা বলা যে , তোমরা মি'রাজুন নবীকে পেয়ে এতো খুশী ও আনন্দিত হও কেন ? কোন মুসলমানের মুখে কি এ প্রকার প্রশ্ন শোভা পায় ?এ বাজে আপত্তির জবাবে এটুকু বলে দেয়াই যথেষ্ট যে , আমি / আমরা হুযূর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম - এর শুভ আগমনে খুশী ও আনন্দিত হওয়ার কারণে মিলাদ মাহফিল আয়োজন করে থাকি । আমি / আমরা তাঁকে ( প্রাণের চেয়েও বেশী ) ভালোবাসি । কারণ আমরা মু'মিন । নিঃসন্দেহে মিলাদ - মাহফিল ও সীরাতুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম - এর মজলিসের অনুষ্ঠান ,সরওয়ারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম - এর না'ত ও স্তুতি শুনা ও শুনানোর জন্য জলসা ও জুলুসের আয়োজন করা ,নিঃস্ব-গরীবদের আহার করানো এবং মুসলমানের জন্য সম্মিলিত খুশী ও আনন্দের ব্যবস্থা করা জায়েয ও উত্তম কাজ । এটা স্বাভাবিক ব্যাপার যে , পবিত্র জন্মের মাস ( রবিউল আওয়াল ) -এ প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা'আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম - এর মান ও মর্যাদার আলোচনার ব্যবস্থা ব্যাপক আকারে হওয়া ।কারণ এতদ উপলক্ষে এমন সব মাহফিলে লোকেরা দলে দলে যোগদান করে থাকে । স্বাভাবিকভাবেই লোকেরা এ কথায় একমত যে , কিছু কিছু মুহূর্ত কিছু বিশেষ সম্পর্কের কারণে অন্যান্য মুহূর্ত ও সময় থেকে বেশী মর্যাদাসম্পন্ন হয়ে থাকে । সুতরাং অন্য সময় ও মুহূর্তের তুলনায় ওটা বেশী আকর্ষণীয় হয়ে উঠে । আর এভাবে লোকেরা বর্তমানকে অতীতের সাথে মিলিয়ে এবং উপস্থিতকে অনুপস্থিতের সাথে নিয়ে গিয়ে বন্ধুর স্মরণের চুড়ান্ত স্বাদ আস্বাদান করে থাকে । কবির ভাষায় বন্ধুর শহর এবং উহার অধিবাসীদের স্মরণ করতে থাকুন , যাতে ওই শহরের ঘর - বাড়িতে এক ধরনের কাপুনী এসে যায় ।
Comments
Post a Comment