ইবলিসের রাজত্ব - ৩
-মীর সালমান
কলোনিয়াল যুগে রাফেজিরা সর্বত্র কলোনিয়াল শক্তিগুলোর সাথে সহযোগিতা করে মুসলমানদের ধ্বংস করতে সহায়তা করে। এই প্রক্রিয়ায় তারা প্রচুর সহায় সম্পদ অর্জন করে। পাশাপাশি সমাজ এবং রাষ্ট্রে দ্রুত প্রভাবশালী হয়ে উঠে। এমনকি পাকিস্তান এবং সিরিয়া মতো সুন্নি অধ্যুষিত দেশগুলোতেও তারা কলোনিয়াল শক্তির সহায়তায় নেতৃত্ব লাভ করে। তথাপি তাদের ভয়ানক আগ্রাসী নখরওয়ালা থাবা তারা অনেক ক্ষেত্রে আস্তিনের নিচে লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে যেনো সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নি অধ্যুষিত দেশগুলোতে বিস্তৃত গন অসন্তোষ দেখা না দেয় এবং তাদের রাজত্বে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি না হয়। এটা ছিলো মূলত তাদের তাকিয়া নীতির প্রকাশ। পাশাপাশি তারা কলোনিয়াল, নিওকলোনিয়াল ফোর্সগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখতে থাকে যেনো জনসাধারণকে প্রয়োজনে দমন করতে সুবিধা হয়। কিন্তু স্নায়ুযুদ্ধের রাজনীতি এবং জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ ১৯৭৯ সালে এমন একটা ঘটনা ঘটে যার ফলে দাজ্জালের অগ্রবর্তী বাহিনীর এক বড় দাজ্জাল সিন্দাবাদের ভূতের মতো বোতল থেকে বেড়িয়া আসে। সেই ঘটনার নাম 'ইরানের ইসলামি বিপ্লব'। কিন্তু বাস্তবতা হলো কথিত 'ইসলামি বিপ্লবে'র সাথে ইসলামের দূরতম সম্পর্ক ছিলো না। সেই বিপ্লব ছিলো মূলত আপাদমস্তক 'রাফেজি বিপ্লব'। যদিও প্রতারণাপূর্ন উপায়ে সেই বিপ্লবের জ্বালানি হিসাবে সুন্নি মুসলমান, কমিউনিস্ট, লিবারেল ডেমোক্রেটদের একটা অংশসহ বহু ধরনের মানুষকে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বিপ্লবের পরে সবাইকে দ্রুত ছুড়ে ফেলা হয়। বিপ্লবের সহযোগী কমিউনিস্ট তুতেহ পার্টির পঞ্চাশ হাজার নেতাকর্মীকে খোমেনির নির্দেশে দ্রুত হত্যা করা হয়। বহু সুন্নি মুসলমান অবর্ননীয় দুঃখ কষ্টের শিকার হয়। আজও ইরানের রাজধানী তেহরানে কোন সুন্নি জামে মসজিদ নাই। শিয়া সুন্নি ঐক্যের মুখোরোচক স্লোগানে সুন্নিদের আত্মপরিচয় আদমশুমারী থেকেও গায়েব করে দেওয়া হয়। লাখ লাখ মানুষ ইরান থেকে পালিয়ে যায়। কোটি কোটি মানুষের সহায়সম্পত্তি গত চার দশকে ছলেবলে আত্মসাৎ করা হয়। এমনকি খোমেনির সাথে ভিন্নমত রাখা শিয়ারা এই আগ্রাসী কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে বাঁচতে পারে নাই।
৪.
ইরানের আধুনিক সংকটের গোড়াঃ
রেজা শাহ পাহলভির রাজ পরিবার দীর্ঘ শাসনে ইরানে এক বিশাল সেক্যুলার গোষ্ঠী ছিলো। শাহের আমলে ইরানের অঅর্থনৈতিক অবস্থা ছিলো ভাল। দেশ দ্রুত উন্নতি করছিলো। প্রতিবেশীদের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিলো বন্ধুত্বপূর্ণ। দেশের আধুনিকায়ন হয়েছে দর্শন এবং প্রযুক্তিগত উভয় ক্ষেত্রেই। যখন বিপ্লব হলো তখন শাহ আমেরিকাপন্থী হওয়ায় সকল কমিউনিস্টরা তাদের সাথে যোগ দেয়। একই সময়ে আফগানিস্তানেও একটা কমিউনিস্ট বিপ্লব হয়। খোমেনি বিভিন্ন অযুহাতে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে শুরুতে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেন। কিন্তু দ্রুতই তিনি কমিউনিস্টদেরও ছুড়ে ফেলেন। তাছাড়া শিয়াদের অনেকগুলো মারজার ভেতর খোমেনি কেবল একটা মারজা। ইরাকের সিস্তানিরা, লেবানিজ অনেক শিয়া ক্লেরিকসহ শিয়াদের অনেকেও খোমেনির বেলায়েতে ফকিহর ধারনা প্রত্যাখ্যান করেন।
এতক্ষণ যা আলাপ করলাম তাতো গেলো মূলত খোমেনির প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক বিরোধীদের গল্প। কিন্তু ইরানের রেজিম মূলত সর্বদা তাদের রাফেজি আকিদার পাশাপাশি সাফাভি এবং সাসানিদ সাম্রাজ্যের পুনঃজাগরণের স্বপ্ন দেখেছে। তাদের মুখোরোচক স্লোগানের আড়ালে সর্বদা একটা নিপীড়ক পারসিক জাতীয়তাবাদ কাজ করেছে যারা ইরানের আরব, বেলুচ, কুর্দি, আজারি প্রভৃতি জাতীর উপর পারসিদের আধিপত্য কায়েমে সচেষ্ট থেকেছে।
ফলে ছলে বলে কলে কৌশলে ইরানের উপর কর্তৃত্ব শক্তিশালী করতে পারলেও ইরানে খোমেনির শিয়া থিওক্রেটিক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশাল একটা জনগোষ্ঠী সর্বদাই ছিলো।
মরার উপর খাড়ার ঘা ইরাক ইরান যুদ্ধ এবং পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্যে আরব, ইজরায়েলের আধিপত্যের বিরুদ্ধে স্নায়ুযুদ্ধ এবং প্যান শিয়া সাম্রাজ্যবাদী প্রচেষ্টা তাদের এক চিরন্তন যুদ্ধ, অস্থিতিশীলতার ভেতরে নিয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা। ফলে জনগণ শাহের আমলকেই এখন স্মরণ করছে যখন বস্তুগত উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক অধিকতর স্বাধীনতা ছিলো। অধিকাংশ মানুষ আদর্শিক না বরং ভোগবাদী হয়ে থাকে। কিন্তু দৃশ্যত বিদ্যমান রেজিমের ছায়ায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দৃশ্যত কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। বিশেষত ইরাক- সিরিয়া সংকট, কোভিড ক্রাইসিস, পারমানবিক প্রকল্প নিয়ে সংলাপে ডেডলক ইত্যাদি ইরানের অর্থনীতিকে পতনের কিনারে নিয়ে গিয়েছে। ফলে জনগণ হতাশ এবং ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।
চলবে
Comments
Post a Comment