ইবলিসের রাজত্ব - ৫
বিগত কয়েক বছরে ইরানের অর্থনৈতিক সংকট সকল সীমা অতিক্রম করেছে। তথাপি এমন দুর্বল অর্থনীতি ইরান নিজের জনগনের উপর মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে প্যান শিয়া সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে। পাকিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়ামেন, সৌদি আরব, আফগানিস্তানসহ সকল শিয়া কমিউনিটিতে তাদের বিনিয়োগ আছে। ইরানি জনতা অন্ধ না। তারা দেখতে পাচ্ছে চূড়ান্ত দুর্বল অর্থনীতি নিয়ে কিভাবে ইরান তাদের না খাইয়ে সারা দুনিয়ায় বিপ্লব রপ্তানি করে বেড়াচ্ছে। ফলে অভুক্ত পেটে নানা সমস্যায় জর্জরিত ইরানি প্রচন্ড ক্ষুব্ধ এবং বিরক্ত।
কিন্তু কফিনের শেষ পেরেক হলো ইরানি মোল্লাদের দুর্নীতি। ইরানের মোল্লা শ্রেনীপৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ মোল্লা শ্রেনী।
খোদ ইরানের সর্বচ্চো ধর্মীয় নেতা খামেনি থেকে শুরু করে তার সন্তান সন্ততি, পরিবার এবং আত্মিয় স্বজনের পাশাপাশি বিভিন্ন মাজার, মাশহাদের খাদেম পর্যন্ত সকল শ্রেনীর মোল্লারা বিপুল সম্পদের মালিক এবং নিয়ন্ত্রক। রয়টার্সের ২০১৩ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী খামেনি যে সম্পদ সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করেন তার পরিমান ৯৫ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে ডেইলি সাবাহয় প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী খামেনির নিয়ন্ত্রিত সম্পদের পরিমান ২০০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হওয়া সম্ভব। এসকল সম্পদ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ভিন্নমতাবলম্বীদের সম্পদ ক্রোক, লাওয়ারিশ অধিগ্রহণ এবং দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করা হয়। তাছাড়া পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী তার বড় ছেলে মোজতবা খামেনির ব্যাক্তিগত সম্পদের পরিমান তিন বিলিয়ন ডলার। খামেনির কন্যার সম্পদের পরিমানও ১০০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া খামেনির অন্যান্য আত্মিয় স্বজনেরও প্রচুর সহায় সম্পদ আছে। এসকল সম্পত্তি তারা পেয়েছেন বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অথোরিটির উপহার, লিজ এবং নানা বৈধ-অবৈধ উপায়ে। ইরানের নিষেধাজ্ঞা কবলিত অর্থনীতি বহুলাংশে স্মাগলিং নির্ভর হতে বাধ্য। ইরানি মোল্লারা তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে এই স্মাগলিং থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়। এমন না যে এসব সম্পদ সব দেশেই রাখা হয়। বরং ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ডসহ ইইউ এর বিভিন্ন দেশ, ইংল্যান্ড, ভেনেজুয়েলা প্রমুখ দেশেও তাদের বিপুল পরিমান সম্পদ বিদ্যমান।
ধর্ম এবং ধর্মীয় অভিভাবকরা ইসলামি সমাজে সম্মান, শ্রদ্ধা এবং আস্থার জায়গা। ধর্ম হলো নিপীড়িত মানুষের শেষ আশ্রয়। কিন্তু জনগণ যখন দেখে যে তাদের ধর্মীয় নেতারা তাদের ঠকিয়ে ও ধর্মের মূলা দেখিয়ে নৃশংসভাবে শোষন নিপীড়ন করছে এবং সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে অথচ
তারা নিজেরা পুরোপুরি নিঃস্ব তখন তারা চূড়ান্ত হতাশ হয়ে যায়।
৬.
কোন সন্দেহ নাই ইরানের ভেতরে বিপ্লবোত্তরকালে যত বিদ্রোহ, প্রতিবিপ্লবী প্রয়াস, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা হয়েছে তার প্রত্যেকটিতে কোন না কোন বিদেশী শক্তি জড়িত ছিল। এসকল শক্তি চেয়েছে ইরানের রাফেজি থিওক্রেটিক রাষ্ট্রটি দুর্বল হোক অথবা ধ্বংস হোক। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিদেশি শক্তিগুলোর এই চাওয়া অত্যন্ত যৌক্তিক। অন্তত দুটি কারনে এমন কর্মকান্ডে বিদেশি জড়িত হওয়ার যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠা করে।
১) মধ্যপ্রাচ্যে নিজের একটা সাম্রাজ্য চায় এমন শক্তিগুলোকে অন্তত তিনভাগে ভাগ করা যায়।
ক. ইহুদিবাদী ইজরায়েল
খ. রাফেজি, মাজুসি, সাফাভি, সাসানিদ সাম্রাজ্যবাদীরা
গ. বিভিন্ন সুন্নি শক্তিঃ এদের মাঝেও অবশ্য অন্তত তিনটি ভাগ আছে
১) গালফের সালাফি আমিরাতি জোট
২) মুসলিম ব্রাদারহুড এবং তার মিত্ররা
৩) সালাফি জি*দি
উপরোক্ত প্রত্যেক শক্তি তাদের হারানো সাম্রাজ্য ফেরত চায়। যাদের কারও কারও শক্তি ইরানের চেয়ে বেশিও। ফলে বিভিন্ন দেশে এসকল দেশের প্রতিযোগিতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা অত্যন্ত বাস্তব। বলা হয় যুদ্ধ ও প্রেমে সব কিছু সঠিক। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তি যে যাকে যখন সুযোগ পাবে ল্যাঙ মারবে।
২) ইরান চায় তিন পবিত্র মসজিদের দখল এবং সুন্নিদের চূড়ান্ত লাঞ্ছনা। ইরাক এবং সিরিয়াতে ইরান যা করেছে তা খুবই ভয়ানক নজির। তবে সবচেয়ে বড় কথা ইরান বিপ্লবের নেতা মক্কা মদিনা দখল করে শিয়া সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খা রাখতেন এবং মদিনায় আবু বকর এবং উমারের কবরের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার স্বপ্নও তাদের আকিদার অংশ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ডাকাত ঘরে আসা পর্যন্ত তাদের শক্তিশালী হলে আশকারা দেওয়া কোন বুদ্ধিমান মানুষের কাজ হতে পারে।
ইরানের প্রতিদ্বন্দ্বীরা ইরানের চেয়ে দুর্বল ছিলো না। তারা ইরানকে তার সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্খা পূরনের সুযোগ দিতে পারে না।
সম্প্রতি ইরান পারমানবিক বোমা বানানোর অত্যন্ত নিকটবর্তী। যদি সত্যি তারা এটা বানিয়ে ফেলে তবে সেটা গাল্ফ আরব রাষ্ট্রসমুহ এবং ইজরায়েল উভয়ের জন্য মারাত্মক বিপদজনক। ফলে তারা অত্যন্ত যৌক্তিক কারনেই চলমান আন্দোলনে বাতাস দিচ্ছে এবং ঘি ঢালছে।
চলবে
Comments
Post a Comment