ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়_ইসলামী_বক্তার_জিব্বা_কেটে_দেওয়ার_নেপথ্যে !!!!
––রাজিফুল হাসান
গত কদিন যাবত অনলাইনে আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তু ছিল কিছু সন্ত্রাসী দুর্বৃত্ত কর্তৃক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইসলামী বক্তা জনাব শরিফুল ইসলাম নুরীর জিব্বা কেটে দেওয়া প্রসঙ্গটি।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ৪ মার্চ আনুমানিক রাত ১১:৩০ টায়। ঘটনাটির স্থান ছিল আজমপুর এলাকায়। মূলত বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের দৌলতবাড়ি দরবার শরীফ হতে ওয়াজ শেষে ফেরার পথে ঘটনাটি ঘটে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমার গ্রামের বাড়ি সিঙ্গারবিল ইউনিয়নে এবং যে স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে তার দূরত্বও আমার বাড়ি থেকে ৩ কিলোমিটারের বেশি হবেনা।
আমাদের সিঙ্গারবিল ইউনিয়নে একটিই বড় দরবার আছে, যা দৌলতবাড়ি দরবার নামে পরিচিত। দৌলতবাড়ি দরবারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সৈয়দ বাহাউদ্দিন আহমেদ, যিনি পীর হিসেবে লোকজনকে মুরিদ করাতেন।
তার ওফাতের পর ওনার দুই ছেলে যথাক্রমে সৈয়দ শাহাদাত হোসেন এবং সৈয়দ রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ পিতার সিলসিলাকে জারি রেখে দরবারের প্রতিনিধিত্ব চালিয়ে যান। ওনারা দুজনই লোকদের মুরিদ করাতেন। অর্থাৎ দুজনই পীর ছিলেন। আর তাই দৌলতবাড়ী নামে একটি দরবার থাকলেও প্রতিনিধিত্ব করেছেন দুইজন আলাদাভাবে এবং বার্ষিক ওরশও পালন হতো দুই দিন। ওরশে ওয়াজ মাহফিল সহ অন্যান্য কার্যক্রম একদিন পীর শাহাদাত হোসেন সাহেবের বাড়ির এলাকায় হত, যেখানে ওনার মুরিদানরা সমবেত হতো। আর অন্য দিন রিয়াজ উদ্দিন সাহেবের এলাকায়। উনাদের দুজনের জীবদ্দশায় এভাবেই চলেছে দৌলতবাড়ির কার্যক্রম।
পীর শাহাদাত হোসেনের ওফাতের পর ওনার বড় ছেলে নাঈম উদ্দিন আহমেদ পীর হিসেবে প্রতিনিধিত্ব শুরু করেন। অন্যদিকে রিয়াজ উদ্দিন সাহেবের ওফাতের পর ওনার বড় ছেলে বখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ রিজভী পিতার প্রতিনিধিত্ব করে পীর হন।
তৃতীয় প্রজন্মের কাছে এসে দৌলতবাড়ির দরবারের ওরশ পর পর দুই দিনে সীমাবদ্ধ থাকেনি এবং একসাথে আয়োজনের ব্যাপারটিও থাকেনি। বরং আয়োজন হতে থাকে আলাদাভাবে। প্রত্যেকের ওখানে দুইদিন করে বিরতি দিয়ে ভিন্ন তারিখে।
সেই ধারাবাহিকতায় গত ৩-৪ মার্চ ছিল পীর বখতিয়ার উদ্দিন আহমেদ রিজভীর ওরশ। আর সেই আয়োজনের মাহফিল হতে ফেরার প্রতি আক্রান্ত হন জনাব শরিফুল ইসলাম নূরী।
(উল্লেখ্য গত ১৮-১৯ ফেব্রুয়ারি পীর নাঈম সাহেবের ওরশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।)
পাঠক এ পর্যন্ত ভালোভাবে মনে রাখুন। এবার ফিরে যেতে চাই একটু পেছনে।
১. আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগের কথা। তখন আমি চট্টগ্রামে পড়াশোনা করি। একবার বাড়ি থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে আখাওড়া স্টেশনে দেখা হয় আমার এলাকার এক ভাইয়ের সাথে। তার সাথে ছিল আরো দুজন সমবয়সী তরুণী। তরুণীদের পড়নে কোন বোরকা অথবা হিজাব নেই।
তার সাথে কথা হল: কি অবস্থা, কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে? জবাবে বলল: চট্টগ্রামর আগ্রাবাদে মহান ইমামের দরবারে যাচ্ছে। সেখানে বার্ষিক সম্মেলন আছে এমন কিছু।
মহান ইমাম শব্দটা শুনে একটু অস্বাভাবিক লাগলো। আমরা তো ইতিপূর্বে জেনেছি মহান যে নবী, মহানবী। যিনি আমাদের প্রিয় রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ইতিপূর্বে মহানবী ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি বিশেষের পরিচয়ের পূর্বে মহান শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানা নেই।
তাই জানতে চাওয়া মহান ইমাম কে?
জবাবে বলল, আগ্রাবাদের রহমানিয়া দরবারের পীর সাইফুর রহমান নিজামীর ছেলে। এভাবেই তার সাথে কথোপথন শেষ। তবে মনের মাঝে খটকা থেকে গেল, কোন সে ব্যক্তি মহান ইমাম। তার সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছে তার অনুসারী উঠতি বয়সের তরুণ তরুণীরা একসাথে, তাও আবার পর্দাহীন। সব মিলে ইসলামের বৈশিষ্ট্যের সাথে তাদের মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অতঃপর বিভিন্ন সময় আমার ওই এলাকার ভাই সহ আরো কয়েকজনের মুখে মহান ইমাম শব্দগুলো কয়েকবার শুনেছিলাম সাথে আরো কয়েকটি শব্দ। আর তা হল: ওয়াল্ড সুন্নি মুভমেন্ট, তবে বিস্তারিত কিছু তখনও জানতাম না।
২. এবার আজ থেকে পাঁচ বছর পূর্বের আরও একটি ঘটনা বলি। হঠাৎ করেই আমাদের বিজয়নগর উপজেলা সহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেশ কিছু মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল এবং জনপ্রিয় বক্তাদের কাছে ভিআইপি দাওয়াত আসলো। যাদের কাছে দাওয়াত আসলো তারা মূলত প্রচলিত সুন্নি গড়নার।
কি সেই ভিআইপি দাওয়াত?
দাওয়াতটি এসেছে ইমাম হায়াত নামক এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে, দাওয়াত নিয়ে এসেছে তার প্রতিনিধি।
দাওয়াতের মূল কথা হলো, ইমাম হায়াত ঢাকাতে তাদের সামনে কিছু কথা বলবেন। সেজন্য ঢাকায় যাওয়ার দাওয়াত। সে ক্ষেত্রে ঢাকায় যাওয়া এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ফিরে আসার জন্য মাইক্রোর ব্যবস্থা থাকবে, সাথে সম্মানীও।
যারা দাওয়াত পেলেন তাদের কাছেও ইমাম হায়াত শব্দটি এবং ব্যক্তিটিও নতুন একজন। তাই কৌতুহলবশত অনেকেই সেখানে গিয়েছেন।
তাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল ইমাম হায়াতের ঢাকাস্থ্য গুলশানের বাসভবনে।
যারা গিয়েছিলেন তাদের কয়েকজনের বর্ণনা মতে,
- ইমাম হায়াতের বাসার যে চাকচিক্য ও আভিজাত্য তা মন্ত্রী এমপিদেরকেও হার মানায়।
- খাওয়া-দাওয়া ছিল খুবই উন্নত মানের, যা গ্রামের এসকল শিক্ষকরা হয়তো ইতিপূর্ব কখনো খাওয়ার সুযোগ হয়নি।
- খাবার শেষের সাথে সাথেই খুব ভালো মানের নগদ সম্মানী ছিল, যা ইতিপূর্বে কোন প্রোগ্রামে তারা পায়নি।
- খাবার শেষে কনফারেন্স রুমে আলোচনার পালা। কনফারেন্স রুম টি তার বাসার ভেতরের একটি অংশ।
- স্টেজে ৪-৫ জন বসলেন এর মাঝে একজন মহিলা ছিল যিনি ইমাম হায়াতের পাশেই ছিলেন। শ্রোতাদের মাঝে পুরুষ এবং নারী ছিল। পুরুষ ও নারী আলাদা বসলেও পরস্পর পরস্পরকে দেখতে পাচ্ছিল।
- প্রথমে দুজন বক্তব্য দিলেন এদের মাঝে একজন হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর আতাউর রহমান মিয়াজী।
- সঞ্চালক এসকল আলোচনার মাঝে হঠাৎ ঘোষণা করে দিলেন ইমাম হায়াত যখন কথা বলবেন তখন তার বক্তব্যের উপর কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। এ কথা শুনে অংশগ্রহণকারী প্রিন্সিপালদের কেউ কেউ বলে উঠলেন, যদি আমরা প্রশ্ন করতে নাই পারি, তবে বক্তব্য শুনবো না। অতঃপর এক পর্যায়ে সঞ্চালক প্রশ্ন করার সুযোগ দেবে বলে আশ্বস্ত করেন।
- ইমাম হায়াত বক্তব্য শুরু করলেন। তার বক্তৃতার অধিকাংশ কথা ছিল সাধারণ একজন মুসলমানের ঈমান আকিদার সাথে সাংঘর্ষিক। ফলে বক্তৃতার এক পর্যায়ে বিজয়নগর থেকে যাওয়া শিক্ষকেরা বেরিয়ে যায়। এসকল শিক্ষকদের যিনি দাওয়াত দিয়েছিলেন তিনি গিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে শিক্ষকরা বলেন, "এগুলো শোনার জন্য তো আমরা আসেনি এবং এগুলো শুনতে হবে জানলে আমরা আসতাম না।"
অতঃপর ওনাদেরকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেওয়া হবে বলে আবার কনফারেন্স রুমে নিয়ে আসা হয়।
অতঃপর ইমাম হায়াতের বক্তব্য শেষে একজন প্রশ্ন করেছিলেন, আপনি কিভাবে নিজেকে কালিমা বলে দাবি করেন?
তবে প্রশ্নের কোন জবাব দেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য ইমাম হায়াত তার বক্তব্যে নিজেকে কালিমা বলে দাবি করেছিলেন।
এভাবে আরো অনেক প্রশ্নেরই জবাব এড়িয়ে যাওয়া হয়।
- ঢাকা থেকে ফেরার পরও অসংখ্যবার ইমাম হায়াতের প্রতিনিধি ওই সকল শিক্ষকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ইমাম হায়াতকে সমর্থন করার জন্য যোগাযোগ করেন। তবে শিক্ষকদের কেউ তাতে সাড়া দেননি।
শিক্ষকদের সামষ্টিক মন্তব্য হলো, তার অর্থাৎ ইমাম হায়াত নামক ব্যক্তির সামগ্রিক আভিজাত্য দেখে এবং কথাবার্তা শুনে মনে হল, তিনি শিয়াবাদের প্রচার-প্রসারের জন্য বাংলাদেশে নিয়োজিত পেইড এজেন্ট হবেন।
উল্লেখ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অধ্যাপকও পরবর্তীতে ঈমাম হায়াতের গুমর বুঝতে পারলে তিনি ফেসবুক লাইভে এসে তাকে পরিহারের ঘোষণা দেন।
৩.
পাঠক দুটি ঘটনার মাধ্যমে আমরা একটি ব্যক্তির সম্পর্কে জানালাম। তিনি হলেন ইমাম হায়াত। উনার প্রকৃত নাম হারুনুর রশিদ। ইউটিউবে ফেসবুকে উনার কিছু বক্তব্য আছে, যে কেউ দেখে নিতে পারেন। ওনার কথাবার্তা শুনে যে কেউ তার জ্ঞানের পরিধি অনুধাবন করতে পারবে। উনি কোন আলেম নন সাধারন শিক্ষিত একজন মানুষ। তার বড় পরিচয় হলো তিনি আগ্রাবাদের রাহমানিয়া দরবার শরীফের পীর সাইফুর রহমান নিজামীর সন্তান। উল্লেখ জনাব সাইফুল রহমান নিজামী চট্টগ্রামের আহমদিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা শাইখুল হাদিস ছিলেন। তবে অন্তদ্বন্দ্বের কারণে তিনি ওখান থেকে চলে আসেন এবং প্রচলিত সুন্নি তরিকার অনেকের সাথে বিপরীত মত প্রকাশ করেন।
৪.
ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় জনাব সাইফুর রহমান নিজামমীর কিছু মুরিদ আছে। এভাবে হয়তো দেশের অন্যান্য জায়গাতেও থাকতে পারে। আর ইমাম হায়াত নামক ব্যক্তি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে টার্গেট করে কাজে নামার অন্যতম কারণ এটাই যে, এই এলাকায় তার বাবার মুরিদান আছেন।
বিজয়নগর এলাকায় গত দুই তিন বছর যাবত ইমাম হায়াতের বক্তব্য সম্মিলিত পোস্টার ব্যানার দেখা যায়। এসকল পোস্টার ব্যানারে কোরআন হাদিসের তেমন কোন কথা নেই। অনলাইনেও ওয়ার্ল্ড সুন্নি মুভমেন্টের নামে যে সকল স্টিকার পোস্টার লিফলেট অথবা পোস্ট দেখা যায় সেখানে কোরআন হাদিসের কোন কথা নেই বললেই চলে, সবই ইমাম হায়াতের বক্তব্য হিসাবে প্রচার করা হয়।
এসকল লিখনীর অধিকাংশই সাধারন পাঠকদের বোধগম্যের বাইরে। শব্দছয়ন, বাক্য গঠন সহ প্রত্যেকটি বিষয়ই অপরিচিত এবং কাঠিন্যতায় ভরপুর।
৫.
ইমাম হায়াতকে ওয়ার্ল্ড সুন্নি মুভমেন্ট এর প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। আর সাইফুর রহমান নিজামী হলেন এই দলের প্রধান উপদেষ্টা। স্বাভাবিকভাবে একটি আদর্শকে লালন করা প্রধান ব্যক্তিদের কাছে তার অনুসারীদের অথবা সাধারণ মানুষের অনেক কিছু জানার থাকে। তবে তাদের ক্ষেত্রে বৈপরীত্য হলো সেই সুযোগটি নেই। কোন ওপেন সেমিনার অথবা সাংবাদিক সম্মেলনে তো নেয়ই, অর্থাৎ লুকোচুরি করে কোন কিছু বাস্তবায়নের চেষ্টা যে তাদের মাঝে আছে তা পরিলক্ষিত হয়।
৬.
ইমাম হায়াতের ইবাদতের রয়েছে নিজস্ব কিছু আলাদা পদ্ধতি। সেজন্য তাদেরকে আলাদা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করতে দেখা যায়। আর এসকল মসজিদের খুতবার অন্যতম বিষয়বস্তু হলো, বিতর্কিত বিষয়ে আলোচনা করা। বিশেষ করে আমিরে মোয়াবিয়াকে গালাগালি করা সহ আরো কিছু সাহাবীদের ব্যাপারে আপত্তি তোলা।
ইমাম হায়াত ও তার পিতা নিজামীর অনুসারীরা নিজেদের আয়োজিত বিভিন্ন মাহফিলে সাহাবীদের ব্যাপারে গালাগালি করা সহ বিভিন্ন অদ্ভুত বিষয়ে দ্বান্দ্বিক আলোচনা করে, যা ইসলামের সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
তারা আমিরে মুয়াবিয়া রা. , হযরত আবু সুফিয়ান রা. , হিন্দ বিনতে উতবা রা. কে সাহাবী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না এবং গালাগালি করে।
আবার অতি উৎসাহী কেউ কেউ হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) , হযরত ওমর (রা) এবং হযরত আয়েশা (রাঃ) কে দোষারোপ করে কটুবাক্য উচ্চারণ করে।
তাদের এসকল বৈশিষ্ট্যগুলো অনেকটা শিয়াদের সাথে মিলে যায়। যার কারণে সুন্নি তরিকার আলেমগণ তাদেরকে শিয়া অথবা শিয়াদের প্রতিনিধি হিসেবে আখ্যায়িত করে।
ইমাম হায়াতের নেতৃত্বাধীন এই ধারাটি প্রায় সময়ই বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করছে। যার প্রভাব পড়েছে আমাদের সিঙ্গারবিল এলাকাতেও। এইত সাত-আট মাস পূর্বে সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের নলঘড়িয়া গ্রামে কমিটির প্রভাব খাটিয়ে মসজিদে এক ইমাম নিয়োগ করে ইমাম হায়াতের অনুসারীরা। কিছুদিন যেতেই ওই ইমামের দুর্বলতা এবং ইসলাম নিয়ে ভিন্ন মতের বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়। পরবর্তীতে সমস্যাটি মারামারি পর্যায়ে যায় এবং ইমাম হায়াতের অনুসারীরা এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে অনেকটা গণধোলাই খেয়ে পালিয়ে আসে।
পাঠক মনে আছে তো সেই দৌলতবাড়ির দুই পীরের কথা!
একজন বখতিয়ার উদ্দিন রিজভী অন্যজন নাঈম উদ্দিন আহমেদ।
ইমাম হায়াতের আহ্বান অনেকে প্রত্যাখ্যান করলেও ধারণা করা হয় পীর নাঈম উদ্দিন আহমেদ তা গ্রহণ করে নিয়েছেন।
কেননা, বিগত কয়েক বছর যাবত ইমাম হায়াতের সাথে সুর মিলিয়ে তিনিও সাহাবীদের গালাগালি করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ ছাড়াও বিগত সময়গুলোতে জনাব নাঈম উদ্দিনের ইরান সফরের কথা প্রকাশ পায় এবং ইরানে শিয়া নেতাদের সাথে তার ছবিও প্রকাশ পেয়েছে।
অথচ ইতিপূর্বে ওনার পিতা অথবা দাদা তা করেননি। নাঈম সাহেবের পিতা এবং দাদা আমিরে মুয়াবিয়া সহ যাদের নাম এসেছে সবাইকেই সাহাবী মনে করতেন এবং সেভাবে মর্যাদার চোখে দেখতেন।
এদিকে চাচাতো ভাই বখতিয়ার উদ্দিন রিজভী এই ব্যাপারে পিতা এবং দাদার সিলসিলাকে ধরে রেখেছেন। ফলে চাচাতো ভাই দুই পীর এবং তাদের অনুসারীদের মাঝে এ বিষয় নিয়ে মানসিক দ্বন্দ্ব বিগত কয়েক বছর থেকেই চলে আসছিল।
বিগত ৪ তারিখ বখতিয়ার উদ্দিন রিজভীর ওরশে সাহাবীদের গালাগালি না করার পক্ষে ওয়াজ করেছিলেন মুফতি শরিফুল ইসলাম নূরী। ওয়াজ চলাকালীন একই সময়ে পার্শ্ববর্তী পীর নাঈম উদ্দিনের খানকায় নিয়মিত মাসিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১১ শরীফ পালন হচ্ছিল, যেখানে উচ্চ আওয়াজে জিকির হচ্ছিল।
তবে জানা যায় ১১ শরিফের জিকিরের উচ্চ আওয়াজের সাউন্ড পার্শ্ববর্তী বখতিয়ার উদ্দিন রিজভীর দরবারে চলমান ওয়াজে ডিস্টার্ব তৈরি করেছিল। ওয়াজের প্যান্ডেলের ভিতরেও তাদের জিকিরের আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। এ বিষয় নিয়ে দুই গ্রুপের মাঝে কিছুটা তর্ক বিতর্ক হয় এবং একটা পর্যায়ে পুলিশ এসে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সমাধান দেয়।
সেই রাতেই ওয়াজ শেষে ফেরার পথে মুফতি শরিফুল ইসলাম নুরীর উপর আক্রমণ হয়। যে আক্রমণে ওনার সমস্ত শরীর আহত হওয়ার পাশাপাশি জিহ্বাও কেটে যায়।
যাইহোক ঘটনা যারাই করুক একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো দল মত নির্বিশেষে মজলুমের পক্ষে অবস্থান নেওয়া। তাই প্রশাসনের প্রতি আমরা প্রত্যাশা করি ঘটনার সুস্থ তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। এই ব্যাপারে যেন কাউকে ছাড় দেওয়া না হয়।
Comments
Post a Comment