Skip to main content

রবিউল আউয়ালে মীলাদুন্নবী স্মারক অনুষ্ঠান ও কর্মতৎপরতা সম্পূর্ণ জায়েয

 নামধারী সালাফীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ

রবিউল আউয়ালে মীলাদুন্নবী স্মারক অনুষ্ঠান ও কর্মতৎপরতা সম্পূর্ণ জায়েয

*****


রবিউল আউয়ালে মীলাদুন্নবী صلى الله علي صاحبه স্মারক অনুষ্ঠান ও কর্মতৎপরতা সম্পূর্ণ জায়েয। হোক সেটা মীলাদুন নবী صلى الله علي صاحبه নামে অথবা সীরতুন নবী صلى الله علي صاحبها নামে। এ ব্যাপারে ওলামায়ে আযহার ও ওলামায়ে দেওবন্দসহ বিশ্বের ৯০% মুসলিম আলিম একমত পোষণ করেছেন। ছবিতে আল্লামা ইউসুফ কারজাভী (মিসর) ও আল্লামা ওয়াহবাহ আল-যুহাইলীসহ (সিরিয়া) আরব দুনিয়ার পাঁচজন শীর্ষস্থানীয় আলিমের বক্তব্য দেখুন।

-

সালাফী নামধারী যেসব লোক একে বিদআত বলছে, তারা স্ববিরোধী, সঙ্কীর্ণমনা, অল্পজ্ঞানী ও অবিবেচক।

-

প্রসঙ্গত, দিবস পালন তথা কোনো উত্তম কাজের মাধ্যমে কোনো দিনকে স্মরণ করার ধারণা মোটেই ইসলাম বিরোধী কোনো কাজ নয়। যারা এটির বিরোধিতা করে, তারা নিজেরাও অনেক সময় নানা দিবস পালন করে থাকে। বিশেষত আধুনিক সালাফীজমের উর্বরভূমি 'নজদ'র খারেজীমনা তাকফীরি সালাফীরাও দিবস পালন করে থাকে। সৌদি আরবের জাতীয় দিবসকে national day اليوم الوطني তারা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা দিবস হিসেবে পালন করে। 

-

বরকতময় রবিউল আউয়াল মাসে ফিলিস্তীনের হামাসসহ আরব বিশ্বের ইখওয়ান এবং মাযহাব-তছউফপন্থী মুসলমানরা মীলাদুন্নবী ও সীরতুন্নবী নামে অনুষ্ঠান করে৷ উপমহাদেশের দেওবন্দী ও জামায়াতে ইসলামী এ মাসে সীরতুন্নবী صلى الله علي صاحبها নাম দিয়ে অনুষ্ঠান করে৷ এ মাসে আমাদের লোহাগাড়ায় অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় সীরতুন্নবী صلى الله علي صاحبها মাহফিল (১৯ দিন ব্যাপী)৷ আমার দেখা মতে তাতে ইতিপূর্বে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও মাওলানা মোস্তফা আল-হুসাইনীসহ দেওবন্দী ও জামায়াতপন্থী উভয় লাইনের অসংখ্য বক্তা অংশগ্রহণ করেছেন এবং এখনো অনেকে করে চলেছেন।

-

মূলত ইসলামে দুই ধরণের দিবস পালনের ধারণা পাওয়া যায়। এক. বার নির্ভর। দুই. তারিখ নির্ভর। নীচে ছহীহ বোখারী ও ছহীহ মুসলিম থেকে উভয় পদ্ধতির পক্ষে প্রমাণ তুলে ধরলাম। 

১. বার নির্ভর দিবস পালন সম্পর্কে ছহীহ মুসলিমসহ বিভিন্ন হাদীছগ্রন্থে নিম্নোক্ত হাদীছটি এসেছেঃ

عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ عَنْ صَوْمِ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ ، قَالَ: «ذَاكَ يَوْمٌ وُلِدْتُ فِيهِ وَيَوْمٌ بُعِثْتُ أَوْ أُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ». أخرجه مسلم (2/819 ، رقم 1162) ، وأبو داود (2/322 ، رقم 2426) ، وأحمد (5/297 ، رقم 22594) ، وابن حبان (8/403 ، رقم 3642) ، والحاكم (2/658 ، رقم 4179) وقال : صحيح على شرط الشيخين ، والبيهقى فى شعب الإيمان (2/135 ، رقم 1386) .

অর্থঃ হযরত আবু কাতাদা আল-আনছারী -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- বলেন, রসূলুল্লাহকে صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ তাঁর সোমবারে রোজা রাখার কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, “এটি হলো আমার জন্মলাভের দিন এবং আমার কাছে ওহী আসার দিন।” [ছহীহ মুসলিম (১১৬২), সুনানে আবু দাউদ (২৪২৬), মুসনদে আহমদ (২২৫৯৪), ছহীহ ইবনে হিব্বান (৩৬৪২), মুস্তাদরকে হাকেম (৪১৭৯) ও বাইহাকীর শোয়াবুল ঈমান (১৩৮৬)]

হাদীছটির ব্যাখ্যায় বিখ্যাত হাম্বলী আলেম আল্লামা ইবনে রজব তাঁর لطائف المعارف فيما لمواسم العام من الوظائف গ্রন্থে বলেছেনঃ 

"فيه إشارة إلى استحباب صيام الأيام التي تتجدد فيها نعم الله على عباده فإن أعظم نعم الله على هذه الأمة إظهار محمد صلى الله عليه وسلم لهم وبعثته وإرساله إليهم كما قال تعالى: {لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولاً مِنْ أَنْفُسِهِمْ} [آل عمران: 164]. فإن النعمة على الأمة: بإرساله أعظم من النعمة عليهم بإيجاد السماء والأرض والشمس والقمر والرياح والليل والنهار وإنزال المطر وإخراج النبات وغير ذلك فإن هذه النعم كلها قد عمت خلقا من بني آدم كفروا بالله وبرسله وبلقائه فبدلوا نعمة الله كفرا. فأما النعمة بإرسال محمد صلى الله عليه وسلم فإن بها تمت مصالح الدنيا والآخرة وكمل بسببها دين الله الذي رضيه لعباده وكان قبوله سبب سعادتهم في دنياهم وآخرتهم فصيام يوم تجددت فيه هذه النعم من الله على عباده المؤمنين حسن جميل وهو من باب مقابلة النعم في أوقات تجددها بالشكر. ونظير هذا صيام يوم عاشوراء حيث أنجى الله فيه نوحا من الغرق ونجى فيه موسى وقومه من فرعون وجنوده وأغرقهم في اليم فصامه نوح وموسى شكرا لله فصامه رسول الله صلى الله عليه وسلم متابعة لأنبياء الله وقال لليهود: "نحن أحق بموسى منكم" وصامه وأمر بصيامه." (لطائف المعارف: ص98). 

সারমর্মঃ ‘এতে এ ইঙ্গিত রয়েছে যে, যেসব দিনসমূহে বান্দাদের উপর আল্লাহর নেয়ামতগুলো নবায়িত হয়, সেসব দিনে রোজা রাখা মুস্তাহাব। আর এ উম্মতের উপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় নেয়ামত হলো হযরত মুহাম্মদকে صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ তাদের কাছে প্রেরণ। নেয়ামত পেয়ে এরকম রোজা রাখার উাদাহরণ হলো আশুরার (মুহররম মাসের দশ তারিখ) রোজা।” [লতায়েফুল মাআরিফঃ পৃষ্টা- ৯৮]।

-

২. অন্যদিকে তারিখ নির্ভর দিবস পালন সম্পর্কে ছহীহ বোখারীসহ বিভিন্ন হাদীছগ্রন্থে নিম্নোক্ত হাদীছটি এসেছেঃ

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا قَدِمَ الْمَدِينَةَ وَجَدَهُمْ يَصُومُونَ يَوْمًا يَعْنِي عَاشُورَاءَ ، فَقَالُوا هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ وَهُوَ يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى وَأَغْرَقَ آلَ فِرْعَوْنَ فَصَامَ مُوسَى شُكْرًا لِلَّهِ. فَقَالَ: «أَنَا أَوْلَى بِمُوسَى مِنْهُمْ». فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ. أخرجه البخارى (3/1244 ، رقم 3216) ، وابن حبان (8/389 ، رقم 3625).

অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস -رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ- থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ যখন মদীনায় এলেন, তখন তাদেরকে (ইহুদীদেরকে) আশুরার দিন রোজা রাখতে দেখতে পেলেন। তারা বলেছিল, এটি একটি মহান দিবস। এটি সেদিন, যেদিন আল্লাহ মূসাকে নাজাত দিয়েছেন এবং ফেরআউন পরিবারকে ডুবিয়ে মেরেছেন। ফলে মূসা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাবশত রোজা রেখেছেন। তখন তিনি (নবীজি ছঃ) বললেন, “আমি তাদের (ইহুদীদের) চেয়ে মূসার অধিক নিকটবর্তী।” তো তিনি সেদিন রোজা রাখলেন এবং সবাইকে রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। [ছহীহ বোখারী (৩২১৬) ও ছহীহ মুসলিম (৩৬২৫)] 

-

তঝ এই রবিউল আউয়াল মাসে আমরা নানা ভাবে আমাদের নবীকে صلى الله عليه وسلم বিশেষ ভাবে স্মরণ করতে পারি। যেমন:

১. মীলাদুন্নবী বা সীরতুন নবী নাম দিয়ে মাহফিলের আয়োজন করা

২. স্মারক, বুলেটিন ও পত্রিকার বিশেষ সংখ্যা বের করা।

৩. গরিব ও মিসকীনদের কল্যাণে খাবারের আয়োজন, তাদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ ও চিকিৎসা সেবামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করা

-

যাদের সামর্থ আছে, তাদের জন্য এরকম কাজ করা মুস্তাহাব। তবে চাঁদাবাজি করে ভুরিভোজের আয়োজন করা এবং লোকদেখানো অপচয়মূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করা খুবই নিন্দনীয় কাজ। তাছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, যেসব লোক নামাজ পড়ে না এবং হালাল ভাবে ব্যবসা করে না, তারাও রবিউল আউয়াল মাসে এই মুস্তাহাব কাজ থেকে বিরত লোকজনের সমালোচনা ও নিন্দা করেন। অথচ সত্য হলো, মুস্তাহাব কাজ কেউ না করলে তাকে দোষারোপ করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ করলে সে নিজেই দোষী হবে। সত্য কথা হলো, নবীয়ে রহমত ও নবীয়ে মালহামার ইসলাম আজ ধান্ধাবাজ ধর্মজীবিদের দখলে চলে গেছে। সব লাইনের হুজুরদের মাঝে হক্কানী ও রব্বানী আলিমের সংখ্যা এখন খুবই কম। যাই হোক, এ মাসের যেকোনো সময় এক বা একাধিক দিন রোজা রাখাও সকল সামর্থবান উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য মুস্তাহাব বলা যায়। এ যুগের মৌসুমী নবীপ্রেমিক বেনামাজী ও হারাম ব্যবসায়ীরা (যারা অনৈতিক ভাবে প্রফিট করে, তারাও হারাম ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভূক্ত) হয়তো এ ধরণের রোজা রাখার কথা কল্পনাও করতে পারবে না। অথচ ইহুদীরাও এমন রোজা রেখেছিল। 

-

এ নিয়ে প্রামাণ্য আরো লেখা পাবেন ইনশাআল্লাহ।

-

মহান আল্লাহ আমাদেরকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমাদের নবীকে صلى الله عليه وسلم অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন।

-

আবুল হুসাইন আলেগাজী

২৯.১০.২০২০, বৃহস্পতিবার।

Comments

Popular posts from this blog

মীলাদুন্নাবী (সা:) ও মিলাদ-কিয়ামের পক্ষে -বিপক্ষে দলিল ভিত্তিক বইসমূহ Books about mawlid and milaad

 মিলাদের বিপক্ষে ও পক্ষে দলিল ভিত্তিক বই সমূহ Books about mawlid and meelad আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সবাই ভাল আছ।আমরা অনেকে একটা বিষয়ে অনেক কিছু বলি। এটা নিয়ে অনেক কিতাব,ওয়াজ ও বাহাস হয়েছে। সে বিষয়টি হল মিলাদুন্নবী ও মিলাদ-কেয়াম।আমরা অনেকে এটার পক্ষে, অনেকে এটার বিপক্ষে। সেই বিষয়ে  আমরা অনেকে বলি এটি বিদাত।এই বিষয়ে কিছু কিতাবের pdf দেয়া হল মিলাদের পক্ষে : ১.মিলাদুন্নবী ও মিলাদ মাহফিল (নাইমুল ইহসান বারাকাতি,Barakati publication) Download ২.কুরআন হাদিসের আলোকে মিলাদ-কিয়ামের অকাট্য দলিল(মুস্তফা হামিদি,ছারছীনা) http://www.mediafire.com/file/ntw372p7138k142/ ৩.বসন্তের প্রভাত (আমিরে আহলেসুন্নাত, ইলিয়াস আত্তার কাদেরি,মাকতাবাতুল মদীনা) Download ৪.সিরাজুম মুনিরা(আমিমুল ইহসান রাহ:) download ৫.মৌলুদের মাহফিল ও কিয়াম(আলভী আল মালেকি আল মাক্কি রাহ:) download ৬.বারাহিনুল কাতিয়া ফি আমালিল মাওলিদ(কারামত আলী জৈনপুরী [রাহঃ] ৭. মু মুলাখখাছ-মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি download ৮.হাকীকতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী https://drive.google.com/fil

কাশফুল মাহযুব Kashful mahzub pdf

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কাশফুল মাহযুব হল হযরত দাতা বখশ হাজভেরী রহঃ এর অন্যতম গ্রন্থ । এর বাংলা হল মারেফতের মর্মকথা । বাংলায় প্রকাশ করা হয়েছে রশিদ বুক হাউজ । মূল বইটি ফারসি ভাষায় লিখিত । download this book in bangla : kashful mahzoob in bangla Kashful mahzoob is a book which is written by data ali hazveri rh.  Kashful Mahjoob  was originally written in Persian language by Hazrat Daata Ganj Bakhsh Ali Hajveri but then translated into many other languages as well including Urdu. Complete name of Hazrat Daata Sahab is ‘Abul Hassan Ali Ibn Usman al-Jullabi al-Hajveri al-Ghaznawi’. The book is a master piece in Islamic Sufi genre. Daata Ali Hajveri has written many books but this book has become a symbol in Sufi books. A famous saying about this book is ‘if you want to find a true murshad (spiritual guider) for you then read this book and you will definitely find one’. Download in english   https://ia601901.us.archive.org/21/items/KashfulMahjoobEn/KashfulMahjoob-en.pdf

Books of Shaykh abdul qadir gilani(rah;) বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রাহ:) এর কিতাব /বই ডাউনলোড করুন

Download in urdu               Books of Shaykh abdul qadir gilani (rah;)               শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) এর কিতাব                        বড়পীর শায়েখ আব্দুল কাদির জিলানী(রাহঃ) আল্লাহর বড় ওলি ছিলেন । তিনি                                         শরীয়ত,তরিকত,মারেফত,  তাসাউফ ও তাযকিয়া বিষয়ে অনেক কিতাব লিখেছেন । সেসব কিতাবসমূহের বাংলা ,ইংরেজী,আরবী ও উর্দু       অনুবাদের pdf নিচে দেয়া হল  ১.সিররুল আসরার Sirr ul asrar In Bangla      Download 1   in English  http://data.nur.nu/Kutub/English/Jilani_Sirr-al-Asrar-1---5.pdf in urdu    https://ia801309.us.archive.org/27/items/sirr-ul-asrar/sirr-ul-asrar.pdf ২.গুনিয়াতুত তালেবীন             download in bangla         in english                                 In urdu               In arabic                                                                           ৩.ফতহুল গায়ব FUTUH AL GHAIB Download in english                in urdu ৪.আল ফাতহুর রব্বানি Fathur rabbani