Skip to main content

কোথা থেকে এলো পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাঃ উদযাপন??

 কোথা থেকে এলো ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ উদযাপন?

কৃতঃ সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারী



-------------------------------------------------------------

হাদিসের ৬ খানা বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধ  কিতাবের অন্যতম সুনানুত তিরমিজি শরিফে একখানা আলাদা চ্যাপ্টার আছে "বাবু মা জায়া ফি মিলাদিন্নাবি ﷺ" অর্থ্যাৎ "প্রিয়নবী ﷺর জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে যা এসেছে" নামে।  ওই অধ্যায়ের হাদিসও দিলাম নিম্নে দেখুন। দেখুন সাহাবায়ে কেরাম হুজুর রাসূলুল্লাহ ﷺর জন্মবৃত্তান্ত অর্থ্যাৎ মিলাদুন্নবী নিয়ে আলোচনা করতেন কীনা! এরকম অসংখ্য হাদিস এসেছে হাদিস, সিরত, দালায়েলু ন্নুবুয়্যাহ, শামাইল এবং তাবাকাত এর কিতাবে সনদসহ। এসবের প্রাতিষ্ঠানিক রুপ হচ্ছে ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ উদযাপন, এখন আমরা যা করছি। 


সাহাবায়ে কেরাম সুন্নাহ শুনেছেন, দেখেছেন কিন্তু সুন্নাহ স্টাডির প্রাতিষ্ঠানিক রুপ তখন ছিল না। পরবর্তীতে মাদ্রাসা সিস্টেমে সেটা হয়েছে " উলুমুল হাদিস" নামে। তাফসির শুনেছেন কিন্তু তা প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পায়নি, পরে এটা প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পায় "ইলমুত তাফসির" নামে। সাহাবায়ে কেরামের যুগে ইলমুত তাফসির নামে আলাদা কোন সাব্জেক্ট ছিল না। শ্রেষ্ঠ মুফাসসির হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.  এঁর জন্য নবি করিম ﷺ এই বলে দোয়া করেছেন,  "আল্লাহুম্মা আল্লিমহুত তা'ভিল, ওয়া ফাককিহহু ফিদ্দিন"। কুরআন মাজিদের তাভিল শিক্ষা দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন, দ্বীনের বুঝ দেয়ার জন্য দোয়া করেছেন। এই তাভিলই পরে হয় তাফসির শাস্ত্র। অর্থ কুরআন মাজিদের ব্যাখ্যা। 


প্রিয়নবীﷺ ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে আত্মশুদ্ধি চর্চার শাস্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক নাম হয় অনেক পরে ইলমুত তাসাউউফ। এভাবে শত বিষয় বলতে পারব যা অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হুজুর রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং সাহাবায়ে কেরামের যুগে প্রচলিত ছিল যা পরবর্তীতে প্রাতিষ্ঠানিক নাম ও রুপ পায়। নামে কী আসে যায়? সেক্সপিয়ার বলেছিলেন। আর আরবে বলে, লা মুশাহহাতা ফিল ইসতিলাহ। কোন নামে কী হচ্ছে তাতে কী আসে যায়! যা নামেই হোক কাজ কী করা হচ্ছে সেই নামের আড়ালে, সেটাই মূল বিষয়। হারাম কাজকর্ম দ্বারা যদি কেউ ঈদে মিলাদুন্নবী মাহফিল করে তবে তা সর্বোতভাবে হারাম। নারী পুরুষ একত্রিত হয়ে খেমটা নাচ ও গান বাজনা উদাহরণস্বরূপ। অথবা ডিজে পার্টি, হিন্দি গান যদি বাজে। মায়াজাল্লাহ। 


এটা তো কমনসেন্স। কে এগুলোকে জায়েজ বলবে? 

কিন্তু কুরআন মাজিদের তিলাওয়াত, হুজুর রাসূলুল্লাহ ﷺর শান-মান, প্রশংসা, মুহাব্বাত, সুন্নাহ, আদর্শ, শিক্ষা, বৈশিষ্ট্য, গঠন ইত্যাদি আলোচনা, দরুদ ও সালাম পাঠ, নাতে রাসূল পাঠ, জিকির,  মানুষকে খাবার খাওয়ানো এই কাজগুলো যা আমরা ঈদে মিলাদুন্নবী মাহফিলে করে থাকি। এই সবগুলো কাজের পক্ষে আলাদা আলাদাভাবে সহিহ হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের আমল আছে। এখানে কোন কাজটা হারাম? কোনটাই না।


এখন বলবেন, আলোকসজ্জা, গেইট, তোরণ, জশনে জুলুসের র‍্যালী ইত্যাদি কোথা থেকে এলো? আমাদের বুঝা দরকার  এই কাজগুলো কোন ইবাদাত না। এগুলো হচ্ছে সাকাফাত বা সংস্কৃতি। রমাদানে আরবের প্রায় সব দেশে  সাজসজ্জা হয়। এগুলো কী ইবাদাত নাকি যে আমরা বেদাতের ফতোয়া দেব? ইবাদাত ও সাকাফাতের পার্থক্যটা আমরা খুব কম মানুষই বুঝি। ইবাদাত ও সওয়াব লাভের আশায় কোন কিছু করা হলে যার কোন অস্তিত্বই ইসলামে নাই, কুরআন সুন্নাহের বিপরীত এমন কাজ বেদাতে সায়্যিয়াহ বা খারাপ পথভ্রষ্ট বেদাত যা পরিত্যাজ্য। 


আজ ৯০% মুসলমানের এই দেশে হিন্দু দেবতাদের নামে র‍্যালী হয়, আলোকসজ্জা, গেইট, তোরণ ইত্যাদি নির্মাণের মাধ্যমে পৌত্তিলিকতাকে প্রমোট করা হচ্ছে৷ অবশ্যই এটা তাদের ধর্মীয় ও নাগরিক অধিকার। আমরা কোনভাবেই এগুলোতে বাধা দিতে পারি না সেকুলার এই বাংলাদেশে। আমরা অহিংসার পক্ষে ১০০%৷ সকল ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে আমরা।  


৯০% মুসলমানের দেশে আমরা কেন আমার নবীর নামকে উর্ধ্বে তোলে ধরতে পারব না? যিনি সায়্যিদুল মুরসালিন, রাহমাতুল্লিল আলামিন। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে আমাদের ইয়াং জেনারেশনকে বিপথগামী করছে অন্য ধর্ম ও মতের মানুষেরা। আমরা মুবাহ জায়েজ এমন বিকল্প কালচার ও সংস্কৃতি না দেয়ার কার‍ণে এরা এখন স্বরসতী পুজা, দূর্গা পূজা, কালি পূজা ইত্যাদিকে জাতীয় উৎসব মনে করে পালন করছে। পহেলা বৈশাখে হাতি পেঁচা ইত্যাদি নিয়ে মংগল শোভাযাত্রা করে। হুজুর রাসূলুল্লাহ ﷺর পরিবর্তে মায়াজাল্লাহ বলতেও কেমন লাগে, মেসি, রোনালদো নায়ক গায়ককে আইডিওলাইজ করছে আমাদের ইয়াং জেনারেশন। কাকে আইকন হিসেবে দেখার কথা আর কাকে দেখছে তারা! কেন হচ্ছে এসব? চিন্তা করুন। 


কাজেই মিলাদুন্নবী, শবে বরাত, শবে মেরাজ, ওরস ফাতেহা ইত্যাদি আরো জৌলুসপূর্ণভাবে করা দরকার আমাদের আবহমান সংস্কৃতির অংশ হিসেবে। এগুলোর সবকিছু সওয়াব ও ইবাদাতের নিয়তে হয় না। সময়ের বিশেষ প্রয়োজনে হয়। 


সূরা ইউনুসের ৫৮ নং আয়াত, সূরা দোহার সর্বশেষ আয়াত, সূরা আম্বিয়ার ১০৭ নং, মায়েদার ১১৪, আলে ইমরানের ১৬৪ ও ৮১ নং আয়াতসহ আরো বহু আয়াত দিয়ে আমি দলিল দিতে পারি ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺউদযাপনের পক্ষে। সেদিকে আমি যাব না। মদিনা শরিফে নবী করিম ﷺযখন পৌঁছান তখন সকল মদিনাবাসী "তালায়া'ল বাদরু আ'লাইনা" গেয়ে দফের তালে তালে হুজুর রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বরণ করে নিয়েছেন জুলুস বা র‍্যালী করে যা মুসলিম শরিফেও এসেছে সংক্ষেপে আনাস বিন মালিক রা. থেকে৷ সিরতের সবচাইতে নির্ভরযোগ্য কিতাব সিরতে ইবনে ইসহাক ও সিরতে ইবনে হিশামের গ্রহণযোগ্য বর্ণনা, হজরত ওমর ফারুক রা. ও সায়্যিদুশ শুহাদা আমির হামজা রা. ইসলাম গ্রহণের পর  তাঁদের দুজনকে সামনে রেখে, অর্থ্যাৎ  সাহাবায়ে কেরামের দুইভাগের নেতৃত্বে দুজনকে রেখে নবী করিম ﷺ র‍্যালী বা মিছিল করে ইসলামের প্রথম অনানুষ্ঠানিক মাদ্রাসা বা খানকা "দারুল আরকাম" থেকে কা'বা শরিফ পর্যন্ত গিয়ে প্রকাশ্যে নামাজ আদায় করেছেন, প্রথমবারের মত সবাইকে নিয়ে জামায়াতের সাথে। এসব দলিল আমি দিচ্ছি না। বরং আমি বলছি এসব আমাদের সংস্কৃতি। এসব প্রয়োজন। কখন কী নামে শুরু হল তা বিষয় না। 


কাইস ইবনু মাখরামা রা. থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেন, আমি ও রাসূলুল্লাহ ﷺহস্তী বছরে (আবরাহার বাহিনী ধ্বংসের বছর) জন্মগ্রহণ করি। তিনি বলেন, ইয়াসার ইবনু লাইস গোত্রীয় কুবাস ইবনু আশইয়ামকে উসমান ইবনু আফফান (রাঃ) প্রশ্ন করেন, আপনি বড় নাকি রাসূলুল্লাহ ﷺ? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমার চাইতে অনেক বড়, তবে আমি তাঁর আগে জন্মগ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ ﷺহাতীর বছর জন্ম গ্রহণ করেছেন। আমার মা আমাকে এমন জায়গায় নিয়ে গেলেন যেখানে গিয়ে আমি পাখিগুলোর (হাতিগুলোর) মলের রং সবুজে বদল হয়ে যেতে দেখেছি।

জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৩৬১৯


Comments

Popular posts from this blog

মীলাদুন্নাবী (সা:) ও মিলাদ-কিয়ামের পক্ষে -বিপক্ষে দলিল ভিত্তিক বইসমূহ Books about mawlid and milaad

 মিলাদের বিপক্ষে ও পক্ষে দলিল ভিত্তিক বই সমূহ Books about mawlid and meelad আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সবাই ভাল আছ।আমরা অনেকে একটা বিষয়ে অনেক কিছু বলি। এটা নিয়ে অনেক কিতাব,ওয়াজ ও বাহাস হয়েছে। সে বিষয়টি হল মিলাদুন্নবী ও মিলাদ-কেয়াম।আমরা অনেকে এটার পক্ষে, অনেকে এটার বিপক্ষে। সেই বিষয়ে  আমরা অনেকে বলি এটি বিদাত।এই বিষয়ে কিছু কিতাবের pdf দেয়া হল মিলাদের পক্ষে : ১.মিলাদুন্নবী ও মিলাদ মাহফিল (নাইমুল ইহসান বারাকাতি,Barakati publication) Download ২.কুরআন হাদিসের আলোকে মিলাদ-কিয়ামের অকাট্য দলিল(মুস্তফা হামিদি,ছারছীনা) http://www.mediafire.com/file/ntw372p7138k142/ ৩.বসন্তের প্রভাত (আমিরে আহলেসুন্নাত, ইলিয়াস আত্তার কাদেরি,মাকতাবাতুল মদীনা) Download ৪.সিরাজুম মুনিরা(আমিমুল ইহসান রাহ:) download ৫.মৌলুদের মাহফিল ও কিয়াম(আলভী আল মালেকি আল মাক্কি রাহ:) download ৬.বারাহিনুল কাতিয়া ফি আমালিল মাওলিদ(কারামত আলী জৈনপুরী [রাহঃ] ৭. মু মুলাখখাছ-মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি download ৮.হাকীকতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী https://drive.google.com/fil

কাশফুল মাহযুব Kashful mahzub pdf

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কাশফুল মাহযুব হল হযরত দাতা বখশ হাজভেরী রহঃ এর অন্যতম গ্রন্থ । এর বাংলা হল মারেফতের মর্মকথা । বাংলায় প্রকাশ করা হয়েছে রশিদ বুক হাউজ । মূল বইটি ফারসি ভাষায় লিখিত । download this book in bangla : kashful mahzoob in bangla Kashful mahzoob is a book which is written by data ali hazveri rh.  Kashful Mahjoob  was originally written in Persian language by Hazrat Daata Ganj Bakhsh Ali Hajveri but then translated into many other languages as well including Urdu. Complete name of Hazrat Daata Sahab is ‘Abul Hassan Ali Ibn Usman al-Jullabi al-Hajveri al-Ghaznawi’. The book is a master piece in Islamic Sufi genre. Daata Ali Hajveri has written many books but this book has become a symbol in Sufi books. A famous saying about this book is ‘if you want to find a true murshad (spiritual guider) for you then read this book and you will definitely find one’. Download in english   https://ia601901.us.archive.org/21/items/KashfulMahjoobEn/KashfulMahjoob-en.pdf

Books of Shaykh abdul qadir gilani(rah;) বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রাহ:) এর কিতাব /বই ডাউনলোড করুন

Download in urdu               Books of Shaykh abdul qadir gilani (rah;)               শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) এর কিতাব                        বড়পীর শায়েখ আব্দুল কাদির জিলানী(রাহঃ) আল্লাহর বড় ওলি ছিলেন । তিনি                                         শরীয়ত,তরিকত,মারেফত,  তাসাউফ ও তাযকিয়া বিষয়ে অনেক কিতাব লিখেছেন । সেসব কিতাবসমূহের বাংলা ,ইংরেজী,আরবী ও উর্দু       অনুবাদের pdf নিচে দেয়া হল  ১.সিররুল আসরার Sirr ul asrar In Bangla      Download 1   in English  http://data.nur.nu/Kutub/English/Jilani_Sirr-al-Asrar-1---5.pdf in urdu    https://ia801309.us.archive.org/27/items/sirr-ul-asrar/sirr-ul-asrar.pdf ২.গুনিয়াতুত তালেবীন             download in bangla         in english                                 In urdu               In arabic                                                                           ৩.ফতহুল গায়ব FUTUH AL GHAIB Download in english                in urdu ৪.আল ফাতহুর রব্বানি Fathur rabbani