Skip to main content

আশুরায়ে মুহাররম প্রসঙ্গে কুরআন সুন্নাহর আলোকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও আশুরায় প্রচলিত কর্মকাণ্ড এর পর্যালোচনা।

 আশুরায়ে মুহাররম প্রসঙ্গে কুরআন সুন্নাহর আলোকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও আশুরায় প্রচলিত কর্মকাণ্ড এর পর্যালোচনা। 

লেখক: শেখ আহসান উদ্দিন,সূত্রাপুর,ঢাকা (শিক্ষার্থী বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় BIU, বিবিএ প্রথম বর্ষ)

জিলহজ্ব মাস শেষে হিজরী নতুন আরেক বছর শুরু হয়  যার প্রথম মাস হল মুহাররম। এই মাসের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা। এই আশুরায় কুরআন সুন্নাহর অনুসারী মুসলিম বা আহলে সুন্নাহর অনুসারী মুসলিমরা মুসা আঃ এর বিজয়ে শুকরিয়াস্বরূপ রোযা রাখে অপরদিকে শিয়া সম্প্রদায় আশুরাসহ মুহাররম মাসে কারবালায় হুসাইন রাঃ এর শাহাদাতের শোক পালন করে।বাংলাদেশসহ আমাদের এই উপমহাদেশে মুহাররম মাস ও আশুরা নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি দেখা যায়, তাই এবিষয়ে প্রবন্ধটি লেখা হল। 
হিজরী/ইসলামী বছরের প্রথম মাস।পবিত্র কুরআনুল কারীমের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা চারটি মাসকে হারাম মাস বা সম্মানিত ও নিষিদ্ধ মাস হিসেবে ঘোষণা করেছেন।এই চার মাস হলো, মুহাররম, রজব,জিলকদ ও জিলহজ। তাই মুহাররম মাস একটি সম্মানিত ও পবিত্র মাস।এই মুহাররম মাসের ১০ তারিখ তথা আশুরা ইসলামের একটি সম্মানিত ও পবিত্র দিবস। এই মাস আল্লাহর একটা সম্মানিত মাস। এই মাসে সকল গুনাহ ও শিরক বিদাত খারাপ কাজ থেকে বেঁচে থাকা উচিৎ। 
 পবিত্র আশুরার দিনটি একটা ফজিলতপূর্ণ দিবস।এই আশুরায় হযরত মুসা(আঃ)কে আল্লাহ তায়ালা ফিরাউনের অত্যাচার থেকে মুক্ত করেন এবং আল্লাহ তায়ালা ফিরাউনকে সাগরে ডুবিয়ে মারেন। আশুরার দিনের অন্যতম আমল হলো আশুরার রোজা। রাসুলুল্লাহ সাঃ মুহাররম মাসের ৯ ও ১০ তারিখের রোজাকে সুন্নাত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। ইহুদিরা আশুরায় একদিন রোজা রাখত, তাই ইহুদিদের বিপরীতে রাসুলুল্লাহ সাঃ আশুরায় দুইদিন রোজা রাখতে বলেছেন। এই রোজা মূলত মুসা(আঃ) এর বিজয়ের শুকরিয়াস্বরূপ। এই রোজার সাথে কারবালার ঘটনার  কোনো সম্পর্ক নাই।তবে হ্যা ১০ মুহাররম আশুরার দিনে ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালায় রাসূলুল্লাহ সাঃ এর দৌহিত্র,আলী রাঃ ও ফাতিমা যাহরা রাঃ এর সন্তান হুসাইন ইবনে আলী রাঃ তার অনেক সঙ্গীসাথীসহ মর্মান্তিকভাবে শহীদ হন। তবে কারবালার ঘটনার আগেও আশুরা পবিত্র ছিল। 

আমাদের বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে অনেক মুসলিমদের মধ্যে এই ধারণা বিশ্বাস প্রসিদ্ধ যে "১০ মুহাররম আশুরার দিনে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন,এই দিনে নবী আদম (আঃ) এর জন্ম হয় ও এই দিনেই তার ইন্তেকাল হয়,এই দিনে নবী নূহ (আঃ) এর নৌকা কিশতি ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পায়, এই দিনে নবী ইব্রাহিম (আঃ) এর জন্ম হয়, এই দিনে নবী ইউনুস (আঃ) মাছের পেট থেকে ফিরে আসেন,এই দিনে নবী ঈসা ইবনে মরীয়ম (আঃ)জন্মগ্রহণ করেন,এই দিনে আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ এর মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় "। যা ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশ এর ইসলামী বিশ্বকোষ গ্রন্থেও উল্লেখ করা আছে। কিন্তু এসব কথার নির্ভরযোগ্যতা কতটুকু সঠিক তা আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন।
এটা সত্য যে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাঃ এর মৃত্যুর অনেক বছর পরে ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে (৬১হিজরীতে) এই ১০ মহররম আশুরার দিনেই বর্তমান ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালায় হযরত হুসাইন ইবনু আলী রাঃ সুন্নতে রাসূল সাঃ প্রতিষ্ঠার জন্য শহীদ হন,বিশেষত কুফার উবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ,আমর বিন সা'আদ ও শিমারের বাহিনী হুসাইন রাঃ কে শহীদ করে,অনেক আলেমরা বলেছেন যে কারবালার ঘটনায় আমিরে মুয়াবিয়া রাঃ এর পুত্র ইয়াজিদ ইবনু মুয়াবিয়ার দায় রয়েছে। কিন্তু অনেকেই হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের কারণে আশুরাকে শোক দিবস বা শহীদ দিবস এবং মুহাররম মাসকে শোকের মাস মনে করেন।এটা সঠিক নয়। কেননা ইসলামে তিন দিনের বেশি শোক দিবস জায়েজ নাই।তাই যারা মুহাররম মাসকে শোকের মাস মনে করে তারা পথভ্রস্ট।বিশেষকরে আমরা মুসলিম বিশ্বে দেখি মুহররম মাস আসলেই শিয়ারা লাল ও কালো রঙের পতাকা-ব্যানার টানায়।তারা আশুরার দিনে শোক মিছিল,তাজিয়া,মাতম,বুক ও মাথা চাপড়ানো,ঢাকঢোল ও বাশি বাদ্যযন্ত্র বাজানো,শরীর রক্তাক্তকরণ বা তাতবীর,শোকগাথা ও নাওহা গাওয়া,মোমবাতি জ্বালানো ইত্যাদি কাজকর্ম করে যা ১০০%নাজায়েজ,বিদাত,হারাম ও কুসংস্কার।মূলত যারা এসব কর্মকাণ্ড করে তারা মূলত ১২ ইমামী শিয়া,রাফেদি শিয়া,ফাতেমী/বোহরা শিয়া এবং ইয়েমেনের হুথি শিয়ারা। 

বাংলাদেশে ঢাকার বকশিবাজারে হোসেনী দালান ইমামবাড়া,ফরাশগঞ্জে বিবিকা রওজা ইমাম বাড়া ও তার আশপাশের এলাকা,পল্টন,মোহাম্মদপুর,মিরপুর,গাজীপুর,চট্টগ্রাম,খুলনা,যশোর ও রাজশাহীসহ অনেক জেলায় জেলায় এসব হয়ে থাকে।বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত,পাকিস্তান,আফগানিস্তান,
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান,ইরাক,লেবানন,বাহরাইন,ইয়েমেনসহ অনেক দেশে,তুরস্ক,আজারবাইজান,আফ্রিকায় নাইজেরিয়া,তানজানিয়া,কেনিয়া ও ঘানায়ও শিয়ারা শোক তাজিয়া মিছিল করে থাকে। বর্তমানে জাপান,পশ্চিমা তথা ইউরোপ আমেরিকার অনেক দেশে (যুক্তরাজ্য,ফ্রান্স,ইটালি,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,কানাডা) ও অস্ট্রেলিয়াতেও শিয়ারা এসব করে থাকে। 

শিয়াদের পাশাপাশি বাংলাদেশের ঢাকার মিরপুর,মোহাম্মদপুর,জেনেভা ক্যাম্প কলোনী সহ এরকম অনেক অঞ্চলে,নারায়ণগঞ্জ,ময়মনসিংহ,চট্টগ্রামে হালিশহর ও তার আশপাশের কিছু অঞ্চলে,খুলনা এবং নীলফামারীর সৈয়দপুরে অবাঙালি উর্দুভাষী বিহারী জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ লোকজন এই আশুরায় তাজিয়া ও পাইক মিছিল বা তাজিয়াদারী করে ঢাকঢোল পিটায় বাজায় ও বিভিন্ন মরসিয়া গীতি গায়।যদিও এরা নিজেদেরকে সুন্নী বলে দাবী করে কিন্তু তাদের মধ্যে সহীহ আকীদা মানহাজের দাওয়াহ ও তাবলীগের অভাবে তারা এসব বিদাতে আক্রান্ত।মানিকগঞ্জ,রাজবাড়ী,ফেনী,রংপুর,কুমিল্লা ও চাঁদপুরসহ এরকম অনেক জেলায় কতিপয় সুফী পীর দরবার ও তাদের অনুসারী লোকজনরাও বিশেষত মানিকগঞ্জে গড়পাড়া ইমামবাড়ী পীর,রাজবাড়ীতে আঞ্জুমান ই কাদেরিয়া বা আঞ্জুমানে কাদেরীয়াসহ এজাতীয় কতিপয় পীর ও তাদের অনুসারীরাও আশুরায় তাজিয়া মিছিল করে, লাল কালো সবুজ পতাকা নিশান উড়ায় ও মোমবাতি আগরবাতি জ্বালানোর মত বিদাতী কর্মকাণ্ড করে । অজ্ঞতা, বিভ্রান্তি ও কৌতুহল মূলত এসব মিছিলে লোক সমাগমের একটি বড় কারণ।বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অনেক অঞ্চলে অনেকে বিশেষকরে কতিপয় বিদাতিরা এদিন জারি গান গায় যা ১০০%নাজায়েজ ও হারাম। সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান লিখেছেন- শিয়া সম্প্রদায় মহররম মাসের প্রথম দশ দিন কারবালার ঘটনা উপলক্ষে শোক পালন করে এবং আশুরা বা দশম দিনে যেদিন ইমাম হোসেন রাদিয়াল্লাহু আনহু শাহাদাত বরণ করেন, তার কবরের প্রতিকৃতি নিয়ে মিছিল করে। ইমাম হোসেনের প্রতিকৃতির নামই হলো হলো তাজিয়া। (যার যা ধর্ম-১৮০)।

আবার অপরদিকে নাসেবী ও অনেক বিদাতীরা এদিনে এমন কিছু আমল কর্মকাণ্ড করে যার ভিত্তি কুরআন সুন্নাহ ও খায়রুল কুরুন এর যুগে বা তিন যুগে(সাহাবা+তাবেয়ীন+তাবে তাবিয়ীন)ও এর ভিত্তি পাওয়া যায়না। যেমন, ১০ মুহাররমে চোখে সুরমা লাগানো এবং একে ফজিলত সওয়াব এর কাজ মনে করা,আশুরার দিনে উত্তম পোশাক পরিধান করাকে সওয়াবের কাজ মনে করা ও এদিনে আনন্দ ফূর্তি করা,এদিনকে ঈদ হিসেবে গন্য করা,ঢোল ঘন্টা বাঁশি বাদ্য বাজনা সহ গান সংগীত গাওয়া ও নাচানাচি করা,আতশবাজি পটকা ফুটানো,একে অপরের গায়ে পানি ছিটানো/স্প্রে করা,মেহেদী লাগানো ইত্যাদি। মধ্যপ্রাচ্য  ও উত্তর আফ্রিকার অনেক দেশগুলোতে বিশেষত মরক্কোতে এবং আলজেরিয়া,মিশর,তিউনিসিয়া,লিবিয়া,কমোরোস এসব দেশের অনেক অঞ্চল এলাকায় এসব লক্ষ করা যায়। এসব দেশগুলোতে শিয়াদের সংখ্যা খুবই কম বা নগন্য, এসব দেশগুলোতে সুন্নি বা আহলুস সুন্নাহর অনুসারী মুসলিমদের সংখ্যা ৯০-৯৯%। এসব দেশগুলোতে জাতীয়  ও রাষ্ট্রীয়ভাবে শিয়া মতবাদকে নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে বিশেষত ১২ ইমামী ও রাফেদি শিয়াদের আকীদা মতাদর্শকে নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে মরক্কোতে অনেক জায়গায় নারী পুরুষ একত্রে নাচ গান ঢোল তবলা ঘন্টি বাজিয়ে মিছিল শোভাযাত্রা করে ও অনেক পুরুষরা বড় বড় দালানে জড়ো হয়ে হাত তালি দিয়ে দুর্বোধ্য কর্মকাণ্ড করে থাকে,সেখানে অনেক ছুফীরাও এসব কর্মকান্ডকে সমর্থন করে। (https://youtu.be/RMTiQfAzc1c) । তবে আলজেরিয়াতে এগুলো  খুবই কম হয়। আলজেরিয়াতে অনেক লোকেরা আশুরার দিনে যাকাত দিয়ে থাকে। সেদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে একদল লোকেরা এই দিনে নাচ গান বাদ্যের আয়োজন করে থাকে যাকে তারা "সেবিবা" বলে। (https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ashura_in_Algeria)। এসব দেখে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা আহলুস সুন্নাহর অনুসারী মুসলিমদেরকে উদ্দেশ্য করে তারা বলে যে "সুন্নিরা বা আহলে সুন্নাহর অনুসারীরা নাকি আশুরার দিনে হুসাইন রাঃ এর শাহাদাতের দিনে আনন্দ উদযাপন করে " (নাউজুবিল্লাহ) ।  যা খুবই দুঃখজনক। কিন্তু উপরোক্ত কর্মকাণ্ড অর্থাৎ আশুরায় প্রথম পক্ষ অর্থাৎ শিয়াদের শোক মাতম তাজিয়াদারী এবং অপর পক্ষ যারা এই দিনে আনন্দ উদযাপন করে ঈদ হিসেবে গন্য করে তাদের থেকে আহলুস সুন্নাহ, কুরআন সুন্নাহর অনুসারী মধ্যমপন্থী মুসলিম সম্পূর্ণ ভিন্ন। 

মূলত আশুরায় শিয়াদের শোক পালন তাজিয়া মিছিল মাতম আব্বাসীয় খলীফা মুত্বী‘ বিন মুক্বতাদিরের সময়ে (৩৩৪-৩৬৩হিঃ/৯৪৬-৯৭৪ খৃঃ) তাঁর কট্টর শী‘আ আমীর আহমাদ বিন বূইয়া দায়লামী ওরফে ‘মুইযযুদ্দৌলা ৩৫১ হিজরীতে ১৮ জিলহজকে ঈদে গাদীর হিসেবে ঘোষণা করে এদিনে আনন্দ উৎশব করা এবং ৩৫২ হিজরীর শুরুতে ১০ই মুহাররমকে তিনি ‘শোক দিবস’ ঘোষণা করেন এবং সকল দোকান-পাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত বন্ধ করে দেন ও মহিলাদেরকে শোকে চুল ছিঁড়তে, চেহারা কালো করতে, রাস্তায় নেমে শোকগাথা গেয়ে চলতে বাধ্য করেন। শহর ও গ্রামের সর্বত্র সকলকে শোক মিছিলে যোগদান করতে নির্দেশ দেন। শী‘আরা খুশী মনে এই নির্দেশ পালন করে। কিন্তু সুন্নীরা চুপ হয়ে যান। পরে সুন্নীদের উপরে এই ফরমান জারি করা হলে ৩৫৩ হিজরীতে উভয় দলে ব্যাপক সংঘর্ষ বেধে যায়। ফলে বাগদাদে তীব্র নাগরিক অসন্তোষ ও সামাজিক অশান্তির সৃষ্টি হয়।
আল-মুঈযযু লিদীনিল্লাহি ফাতিমী (বেদ্বীন কট্টর শিয়া) মিশরেও এই হুকুম জারি করে। একথা সত্যান্বেষী ইতিহাসবিদদের কাছে প্রসিদ্ধই আছে। উদাহরণস্বরূপ ইবনুল আসীর কর্তৃক রচিত ‘আল-কামেল ফিত তারীখ’ ৭/২৭৯, ইবনে কাসীর রাহ. কর্তৃক রচিত ‘আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ ‘১৫/২৬১ (৩৫২ হিজরীর ঘটনাবলী) ও হযরত মাওলানা হাবীবুর রহমান আযমী রাহ. কৃত ‘ইবতালে আযাদারী’ কিতাবে এর সুস্পষ্ট বিবরণ দেখা যেতে পারে।


শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা বিশেষত ১২ ইমামী ও রাফেদি শিয়ারা বলে আশুরায় রোযা রাখা বিদআত। কিন্তু শিয়াদের হাদিস গ্রন্থে দেখা যায় যে তাদের অনেক হাদিস গ্রন্থে এই রোযার পক্ষে স্বীকৃতি পাওয়া যায়। ওয়াসায়িলুশ শিয়া গ্রন্থে বর্ণিত আছে, আলী রাঃ বলেন "তোমরা ০৯ ও ১০ মহররমে রোজা রাখো,এতে তোমাদের পূর্বের গুনাহ মাফ হবে। " তাদের  ০৫ম ইমাম,
 ইমাম মুহাম্মাদ আল-বাকির বলেছেন, "আশুরার দিনে রোজা রাখলে সারা বছরের গুনাহ দূর হয়ে যায়।" (শেখ তূসির গ্রন্থ তাদহীবুল আহকাম,শিয়া আলেম খোয়েঈ এর দৃষ্টিতে  সহীহ)। তাদের পঞ্চম ইমাম মুসা আল কাযিম বলেছেন "আল্লাহর রাসূল সাঃ আশুরার দিনে রোযা রাখতেন " (তাদহীবুল আহকাম) । 
আশুরায় উপমহাদেশে শিয়াদের তাজিয়া মিছিলে কয়েকটা ঘোড়াকে রাজকীয় কারুকার্যখচিত করে সেগুলোকে জুলজিনা আখ্যায়িত করে অনেক শিয়ারা এগুলো নিয়ে আসে। সেই ঘোড়াকে দেখলে দুধ ভর্তি ছোট-বড় গ্যালন ও বোতল হাতে অনেক লোককে ছুটে আসতে দেখা যায়,এমনকি অনেক শিয়ারা তাকে সেজদাও করে নাউজুবিল্লাহ ।এ তো দেখলেই বুঝা যায় ঘোড়ার পুজা চলছে শিয়াদের মিছিলে। যা সুস্পষ্টরূপে শিরক। আবার এই জুলজিনা ঘোড়ার পক্ষে ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিয়া ইরাকের আয়াতুল্লাহ বশির নাজাফীকে অনেক কথাবার্তা বলতে দেখা গিয়েছে। আবার এই তাজিয়া  মিছিলে অনেকে শরীর রক্তাক্ত করে,খোদ শিয়া সম্প্রদায়ের অনেক আলেমরাও এটাকে নাজায়েজ ও বিদাত বলেছেন। বিশেষত ইরানের শিয়াদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা,ইরাকে শিয়াদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ সিস্তানী,মুক্তাদা আল সদর,বাকির আল সদর,লেবাননের হুসাইন ফাদলুল্লাহ এজাতীয় অনেক শিয়া আলেম তারা সবাই এই তাতবীর বা শরীর রক্তাক্তকরনকে নাজায়েজ বলেছেন। 
আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) কর্তৃক নবী (ছা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শোকে গাল চাপড়ায়, কাপড় ছিঁড়ে এবং জাহিলী যুগের মতো বিলাপ করে, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।(সহীহ বুখারি হা/১২৯৭)
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ  ইরাকের কুফাতে বসবাসরত দুইটি পথভ্রষ্ট দল সম্পর্কে আলোচনা করেন; যারা আশুরার দিবসকে তাদের বিদআত বাস্তবায়ন করার জন্য উৎসব হিসেবে গ্রহণ করত। এ দুই দলের একদল হচ্ছে-রাফেজি; যারা আহলে বাইতের প্রতি মহব্বত দেখায়; আর ভিতরে ভিতরে তারা হয়তো ধর্মত্যাগী মুরতাদ, নয়তো কুপ্রবৃত্তির অনুসারী জাহেল। আর অপর দল হচ্ছে-নাসেবি; যারা ফিতনার সময় যে যুদ্ধ হয়েছে সে কারণে আলী (রাঃ) ও তাঁর অনুসারীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে(মিনহাজুস সুন্নাহ ও ফাতাওয়া কুবরা) 
উপমহাদেশের বিখ্যাত হানাফী আলেম মাওলানা আব্দুল হাই লক্ষ্নৌবী বলেন, মুহাররামের ১০ দিনে কিংবা অন্য কোনো সময়েও তা‘যিয়া, ঝাণ্ডা ও দুলদুল প্রভৃতি তৈরি করা বিদ‘আত। এর প্রমাণ নবী করীম (ছা.) থেকে তাবেঈন পর্যন্ত পাওয়া যায় না। এসব জিনিস নিজেদেরই আবিষ্কৃত এবং নির্ধারিত। যার সম্মান করা ‘ঠাকুর পূজা’র মতোই।হানাফী বেরলভী আলেম মাওলানা রেজা খান বেরলভী(যাকে বেরলভী রেজবীরা আলা হযরত বলে) বলেন "শিয়াদের মজলিসে  ও তাদের তাজিয়া মিছিলে অংশগ্রহণ করা হারাম,তাজিয়া তৈরি করা নাজায়েজ ও মহররমে ঢোল বাজানো হারাম " (আহকামে শরীয়ত ও ফতোয়ায়ে রজভীয়ার ৩য়,৬ষ্ঠ ও ১০ম খন্ড) । খোদ বেরলবী সাহেবও এসম্পর্কে ‘রিসালায়ে তাযিয়াদারী’ নামে স্বতন্ত্র একটি পুস্তিকা লিখেছেন। তাদের আলেম মাওলানা আমজাদ আলীর গ্রন্থ বাহারে শরীয়তে উল্লেখ আছে "তাজিয়া করা সেখানে মান্নত করাও গুনাহ "। একই রকম বক্তব্য পাওয়া যায় দারুল ইফতা আহলে সুন্নত দাওয়াতে ইসলামীর মধ্যেও। উপমহাদেশের হানাফীদের  অন্যতম ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দ,নদওয়াতুল উলামা, পাকিস্তানের দারুল উলূম করাচী,দারুল ইফতা জামিয়া বানুরীয়া,বাংলাদেশের ঢাকার মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া,জামিয়া শরীয়া মালিবাগ,ফরিদাবাদ জামিয়া ইমদাদুল উলুম,চট্টগ্রামের দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসাসহ অধিকাংশ হানাফি দেওবন্দী কওমী ও ছারছীনা ফুরফুরা জৌনপুরি বাইতুশ শরফ ইত্যাদি হানাফি প্রতিষ্ঠান এর আলেম উলামাদের বক্তব্য,ফতোয়া ও প্রবন্ধে  তাজিয়া মিছিল,শোক মিছিল,তাযিয়াদারী করা সেখানে টাকা দেয়া মানত করা,মাতম করা বুক চাপড়ানো,ঢাকঢোল বাজানো,প্রচলিত মর্সিয়া এসবকিছুকে নাজায়েজ, হারাম ও বিদআত বলে ঘোষণা দিয়েছেন। 
সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদ ও শায়খ সালেহ আল মুনাজ্জিদ বলেছেন আশুরায় শিয়াদের কর্মকান্ড বিদাত ও গোমরাহী। 
আমাদের বাংলাদেশেও কারবালার ঘটনা ইতিহাস ও আহলুলবাইত প্রসঙ্গে অনেক ভুলধারনা,বিভ্রান্তিকর,অতিরঞ্জিত ও অনির্ভরযোগ্য ভিত্তিহীন কথাবার্তা শোনা যায় বিশেষত মীর মোশাররফের "বিষাদ সিন্ধু",ওয়ালিউল্লাহ কাদেরীর " ইসলাম ও কারবোবালা",সদর উদ্দিন আহমদ চিশতি এবং শিয়া সম্প্রদায় ও তাদের দ্বারা প্রভাবিত লেখকদের বইপুস্তকে এমনটা দেখা যায়। এসব বিভ্রান্তির জবাবে নঈমুদ্দিন মুরাদাবাদীর "সাওয়ানিহে কারবালা"(বাংলা অনুবাদ: জাগরণ প্রকাশনী চট্টগ্রাম),শায়খ ডঃ তাহির উল কাদেরীর শাহাদাতে ইমাম হুসাইন রাঃ দর্শন ও শিক্ষা(সঞ্জরী প্রকাশনী),শায়খ আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানীর "কী ঘটেছিল কারবালায়?? কারা হুসাইন রাঃ কে হত্যা করেছে? "(তাওহীদ পাবলিকেশন্স ও ওয়াহিদিয়া প্রকাশিত), 
" প্রশ্নোত্তরে শিয়া আকীদাহ",(আত তাওহীদ প্রকাশনী), ফরিদ আল বাহরাইনীর "কারবালা বাস্তবতা বনাম রূপকথা ",সালিম আল খিদ্বরের " অবশেষে সত্যের সন্ধান পেলাম "(ওয়াহিদীয়া ইসলামি লাইব্রেরী),এবং ডঃ রাগিব সারজানীর শিয়া মতবাদের ধারনা ও বাস্তবতা (রাহনুমা প্রকাশনী) ইত্যাদি বইগুলো পড়া উচিৎ। 

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সকল শিরক বিদাত ফিতনা ফাসাদ থেকে রক্ষা করুন আমিন।


Comments

Popular posts from this blog

মীলাদুন্নাবী (সা:) ও মিলাদ-কিয়ামের পক্ষে -বিপক্ষে দলিল ভিত্তিক বইসমূহ Books about mawlid and milaad

 মিলাদের বিপক্ষে ও পক্ষে দলিল ভিত্তিক বই সমূহ Books about mawlid and meelad আসসালামু আলাইকুম, আশা করি সবাই ভাল আছ।আমরা অনেকে একটা বিষয়ে অনেক কিছু বলি। এটা নিয়ে অনেক কিতাব,ওয়াজ ও বাহাস হয়েছে। সে বিষয়টি হল মিলাদুন্নবী ও মিলাদ-কেয়াম।আমরা অনেকে এটার পক্ষে, অনেকে এটার বিপক্ষে। সেই বিষয়ে  আমরা অনেকে বলি এটি বিদাত।এই বিষয়ে কিছু কিতাবের pdf দেয়া হল মিলাদের পক্ষে : ১.মিলাদুন্নবী ও মিলাদ মাহফিল (নাইমুল ইহসান বারাকাতি,Barakati publication) Download ২.কুরআন হাদিসের আলোকে মিলাদ-কিয়ামের অকাট্য দলিল(মুস্তফা হামিদি,ছারছীনা) http://www.mediafire.com/file/ntw372p7138k142/ ৩.বসন্তের প্রভাত (আমিরে আহলেসুন্নাত, ইলিয়াস আত্তার কাদেরি,মাকতাবাতুল মদীনা) Download ৪.সিরাজুম মুনিরা(আমিমুল ইহসান রাহ:) download ৫.মৌলুদের মাহফিল ও কিয়াম(আলভী আল মালেকি আল মাক্কি রাহ:) download ৬.বারাহিনুল কাতিয়া ফি আমালিল মাওলিদ(কারামত আলী জৈনপুরী [রাহঃ] ৭. মু মুলাখখাছ-মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি download ৮.হাকীকতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী https://drive.google.com/fil

কাশফুল মাহযুব Kashful mahzub pdf

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম কাশফুল মাহযুব হল হযরত দাতা বখশ হাজভেরী রহঃ এর অন্যতম গ্রন্থ । এর বাংলা হল মারেফতের মর্মকথা । বাংলায় প্রকাশ করা হয়েছে রশিদ বুক হাউজ । মূল বইটি ফারসি ভাষায় লিখিত । download this book in bangla : kashful mahzoob in bangla Kashful mahzoob is a book which is written by data ali hazveri rh.  Kashful Mahjoob  was originally written in Persian language by Hazrat Daata Ganj Bakhsh Ali Hajveri but then translated into many other languages as well including Urdu. Complete name of Hazrat Daata Sahab is ‘Abul Hassan Ali Ibn Usman al-Jullabi al-Hajveri al-Ghaznawi’. The book is a master piece in Islamic Sufi genre. Daata Ali Hajveri has written many books but this book has become a symbol in Sufi books. A famous saying about this book is ‘if you want to find a true murshad (spiritual guider) for you then read this book and you will definitely find one’. Download in english   https://ia601901.us.archive.org/21/items/KashfulMahjoobEn/KashfulMahjoob-en.pdf

Books of Shaykh abdul qadir gilani(rah;) বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী (রাহ:) এর কিতাব /বই ডাউনলোড করুন

Download in urdu               Books of Shaykh abdul qadir gilani (rah;)               শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) এর কিতাব                        বড়পীর শায়েখ আব্দুল কাদির জিলানী(রাহঃ) আল্লাহর বড় ওলি ছিলেন । তিনি                                         শরীয়ত,তরিকত,মারেফত,  তাসাউফ ও তাযকিয়া বিষয়ে অনেক কিতাব লিখেছেন । সেসব কিতাবসমূহের বাংলা ,ইংরেজী,আরবী ও উর্দু       অনুবাদের pdf নিচে দেয়া হল  ১.সিররুল আসরার Sirr ul asrar In Bangla      Download 1   in English  http://data.nur.nu/Kutub/English/Jilani_Sirr-al-Asrar-1---5.pdf in urdu    https://ia801309.us.archive.org/27/items/sirr-ul-asrar/sirr-ul-asrar.pdf ২.গুনিয়াতুত তালেবীন             download in bangla         in english                                 In urdu               In arabic                                                                           ৩.ফতহুল গায়ব FUTUH AL GHAIB Download in english                in urdu ৪.আল ফাতহুর রব্বানি Fathur rabbani